admin

admin

তখন সত্যি মানুষ ছিলাম – আসাদ চৌধুরী

নদীর জলে আগুন ছিলোআগুন ছিলো বৃষ্টিতেআগুন ছিলো বীরাঙ্গনারউদাস-করা দৃষ্টিতে। আগুন ছিলো গানের সুরেআগুন ছিলো কাব্যে,মরার চোখে আগুন ছিলোএ-কথা কে ভাববে? কুকুর-বেড়াল থাবা হাঁকায়ফোসে সাপের ফণাশিং কৈ মাছ রুখে দাঁড়ায়জ্বলে বালির কণা। আগুন ছিলো মুক্তি সেনারস্বপ্ন-ঢলের বন্যায়-প্রতিবাদের প্রবল ঝড়েকাঁপছিলো সব-অন্যায়। এখন…

বাতাসে লাশের গন্ধ – রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই,আজো আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ননৃত্য দেখি,ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে-এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দুঃস্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময়? বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে,মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে…

এ লাশ আমরা রাখবো কোথায় ? – শামসুর রাহমান

এ লাশ আমরা রাখবো কোথায় ?তেমন যোগ্য সমাধি কই ?মৃত্তিকা বলো, পর্বত বলোঅথবা সুনীল-সাগর-জল-সব কিছু ছেঁদো, তুচ্ছ শুধুই !তাইতো রাখিনা এ লাশ আজমাটিতে পাহাড়ে কিম্বা সাগরে,হৃদয়ে হৃদয়ে দিয়েছি ঠাঁই।

মুক্তিযুদ্ধের কবিতা – বুদ্ধদেব বসু

আজ রাত্রে বালিশ ফেলে দাও, মাথা রাখো পরস্পরের বাহুতে,শোনো দূরে সমুদ্রের স্বর, আর ঝাউবনে স্বপ্নের মতো নিস্বন,ঘুমিয়ে পোড়ো না, কথা ব’লেও নষ্ট কোরো না এই রাত্রি-শুধু অনুভব করো অস্তিত্ব। কেন না কথাগুলোকে বড়ো নিষ্ঠুরভাবে চটকানো হ’য়ে গেছে,কোনো উক্তি নির্মল নয়…

স্বাধীনতা, উলঙ্গ কিশোর – নির্মলেন্দু গুণ

জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উল্ঙ্গ শিশুর মতবেরিয়ে এসেছো পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবী হও।তোমার পরমায়ু বৃদ্ধি পাক আমার অস্তিত্বে, স্বপ্নে,প্রাত্যহিক বাহুর পেশীতে, জীবনের রাজপথে,মিছিলে মিছিলে; তুমি বেঁচে থাকো, তুমি দীর্ঘজীবী হও।তোমার হা-করা মুখে প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকেসূর্যাস্ত অবধি হরতাল ছিল একদিন,ছিল ধর্মঘট, ছিলো…

তোমার চোখ এত লাল কেন – নির্মলেন্দু গুণ

আমি অনেক কষ্টে আছি- আবুল হাসান।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাইকেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,শুধু ঘরের ভিতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য।বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত। আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাইকেউ আমাকে খেতে দিক।আমি হাতপাখা নিয়েকাউকে আমার পাশে…

হঠাৎ নীরার জন্য – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

সাঁকো – শ্রীজাত।

বাস স্টপে দেখা হলো তিন মিনিট, অথচ তোমায় কালস্বপ্নে বহুক্ষণদেখেছি ছুরির মতো বিঁধে থাকতে সিন্ধুপারে–দিকচিহ্নহীন–বাহান্ন তীর্থের মতো এক শরীর, হাওয়ার ভিতরেতোমাকে দেখছি কাল স্বপ্নে, নীরা, ওষধি স্বপ্নেরনীল দুঃসময়ে। দক্ষিণ সমুদ্রদ্বারে গিয়েছিলে কবে, কার সঙ্গে? তুমিআজই কি ফিরেছো?স্বপ্নের সমুদ্র সে কী…

চিঠি দিও – মহাদেব সাহা

করুণা করে হলেও চিঠি দিও, খামে ভরে তুলে দিওআঙ্গুলের মিহিন সেলাই ভুল বানানেও লিখো প্রিয়, বেশি হলে কেটে ফেলো তাও,এটুকু সামান্য দাবি, চিঠি দিও, তোমার শাড়ির মতোঅক্ষরের পাড়-বোনা একখানি চিঠি। চুলের মতন কোনো চিহ্ন দিও বিস্ময় বোঝাতে যদি চাও …বর্ণণা…

সব কথা তোমাকে জানাবো ভেবেছিলাম – তারাপদ রায়

সব কথা তোমাকে জানাবো ভেবেছিলামকিনে এনেছিলাম আকাশী রঙের বিলিতি হাওয়াই চিঠিসে চিঠির অক্ষরে অক্ষরে লেখা যেতকেন তোমাকে এখনো চিঠি লেখার কথা ভাবিলেখা যেতআমাদের উঠোনে কামিনী ফুলগাছেএবার বর্ষায় ফুলের ছড়াছড়িতুমি আরেকটু কাছে থাকলেইবৃষ্টিভেজা বাতাসে সে সৌরভ তোমার কাছে পৌঁছতোআর তোমার উপহার…

ম’রে যেতে সাধ হয় – আনিসুল হক

তোমার জন্যে – বীথি চট্টোপাধ্যায়।

শাহানা, তুমি গোলাপী জামা প’রে জীবন্ত গোলাপের মতোক্যাম্পাসে এসো না, আমার খারাপ লাগে। সখী পরিবৃতা হয়ে মোগল-দুহিতার মতোকরিডোরে অমন ক’রে হেঁটো না, আমার খারাপ লাগে। শাহানা, তুমি চিবুক নাড়িয়েরাঙা মাড়িতেদুধ শাদা হাতেলালিম জিহ্বায়গিটারের তারের মতো বেজে উঠো না —দরদালান কেঁপে…