কবিতার খাতা
কাক-সাযযাদ কাদির
কাক-সাযযাদ কাদির কাক তা সে যত কালোই থাকহোক না কেন বেসুরো তার ডাকতবু কাকের মাংস খায় না কোন কাকএকের তরে অন্যে আসে ঝাঁকের পর ঝাঁকতাই তো ভাবিভুলে গিয়ে মানুষের ঝাঁকআমি হতাম যদি কাক
কাক-সাযযাদ কাদির কাক তা সে যত কালোই থাকহোক না কেন বেসুরো তার ডাকতবু কাকের মাংস খায় না কোন কাকএকের তরে অন্যে আসে ঝাঁকের পর ঝাঁকতাই তো ভাবিভুলে গিয়ে মানুষের ঝাঁকআমি হতাম যদি কাক
মধুমাছি-রবিউল হুসাইন এখনো কথাগুলো মৌমাছি হয়ে ওড়ে প্রতিস্বরেআর অহেতুকী আগুনে তাদের পাখাদুটি পোড়েকী যে সেই তীব্র আকর্ষণ কেউ বোঝে নাঅন্ধকারেও নক্সা আঁকে সব বর্ণালী আলপনামধুরা ফুলে থাকে নিশ্চুপ নীরবে গোপনেমৌ মৌ উড়ে উড়ে ফুলে ফুলে গড়ে মধুবনেফুলপাখি মৌচাক মৌমাছি মধুগ্রাম…
পথে পথে-রবিউল হুসাইন বিধি আমার বামে থাকে বাস্তবতা ডানেসুখের ভেতর দুঃখ কষ্ট অনেকখানি টানে একটু একটু করে যখন একলা পথে চলিকেউ আসে না ধারে কাছে কোনো কুসুমকলি পথে পথে পা বাড়িয়ে যখন দূরে যাইআশেপাশে কেউ থাকে না নিরাশ অসহায় নিঃস্ব…
এক সেকেন্ডে মাত্র চার ফুট – রবিউল হুসাইন মানুষেরা নাকি এক সেকেন্ডে চার ফুট হাঁটতে পারে সাধারণত বারো কোটি মানুষ আমরাআমরা সবাই একসঙ্গে হাঁটলে মোট আটচল্লিশ কোটি ফুটঅর্থাৎ ষোল কোটি গজ, তার মানেএক সেকেন্ডে প্রায় নব্বই হাজার নয় শ দশ মাইলএগিয়ে যেতে পারি স্বাধীনতা পাওয়ার পর বিশ বছর পার হয়ে গেছেঅথচ আমরা সবাই একই জায়গায় একই বিন্দুতেদাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দৌড়িয়ে মরছি সব সময়এক ইঞ্চিও অগ্রসর হতে পারছি না ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুকে ভুলতে বসেছিজয় বাংলা নামক দীপ্র বজ্রনির্ঘোষ ভুলতে বসেছিসাতই মার্চের অতন্দ্র স্বাধীনতার ডাক ভুলতে বসেছিভাসানীর আস্সালামুআলাইকুম ভুলতে বসেছিপাকসেনা, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদেরঅমানুষিক অত্যাচারের কথা ভুলতে বসেছিআমাদের মা-বোনদেরধর্ষিত হবার কথা ভুলতে বসেছি ‘প্রতিটি বাঙালি মেয়েকে গর্ভবতী করেখাঁটি পাকিস্তানি সন্তানের জন্ম দেব’ – শুয়োরের বাচ্চাদেরসেই রক্তে-আগুন-জ্বালানো সব কথা ভুলতে বসেছিআমরা মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধাদের কথা ভুলে গেছিআমরা স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা ভুলে গেছি আসলে এতো ভুলোমন নিয়েস্বাধীনতা রক্ষা করা যায় না তা হলে স্বাধীনতাকে কীভাবে রক্ষা করা যায়?সেকেন্ডে মাত্র চার ফুট খানিক এগিয়ে গেলেইএকে রক্ষা করা যায় আসুন স্বাধীনতা যুদ্ধকে বুকের মাঝখানে রেখে তাই একসঙ্গেআমরা সবাই এক সেকেন্ডে চার ফুট পথ এগিয়ে যাই বন্ধুগণ এক সেকেন্ডে মাত্র চার ফুট খুব বেশি কিছু নয়।
যে শহরে আমি নেই আমি থাকবো না-আবিদ আজাদ যে শহরে আমি নেই আমি থাকবো না সে শহরে যুদ্ধ শেষেরভাঙা-পোড়ো একটা এয়ারপোর্টের মতো বেঁচে থাকবে তুমিতোমাকে ঘিরে সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে স্কার্ট পরা বুড়ি-বার্মিজ মহিলার মতো ভৌতিক নির্জনতা;তোমাকে ঘিরে সারাক্ষণ ঝুলে থাকবে…
পাঞ্জেরি–ফাররুখ আহমদ রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?সেতারা, হেলার এখনো ওঠেনি জেগে?তুমি মাস্তলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে;অসীম কুয়াশা জাগে শূন্যতা ঘেরি। রাত পোহাবার কত দেরি পাঞ্জেরি?দীঘল রাতের শ্রান্তসফর শেষেকোন দরিয়ার কালো দিগন্তে আমরা পড়েছি এসে?এ কী ঘন-সিয়া…
আত্মা ও সম্পত্তি-ফরহাদ মাজহার কোন শালা নিজের গলায় নিজে ছুরি বসাতে পারে?খামাখা আমাকে ভিতু বলে কি ফল লাভ হবে তোমার?নবী ইব্রাহিমের কথাই ধরো। আল্লা বললেন,তোমার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কোরবানি দাও।ইসমাইলকে জবাই করতে ধরে নিয়ে গেলেন আল্লার নবী।নিজের ছেলেকে, নিজেকে নয়।…
কর্তৃত্বগ্রহণকর, নারী-ফরহাদ মাজহার আমি তোমার সামনে আবার নতজানু হয়েছি, নারী না, প্রেমে নয়, আশ্লেষে নয়, ক্ষমা চেয়েতোমার দয়া দিয়ে…
যারা আর ফিরবে না-ফরহাদ মাজহার যারা আর ফিরবে না যমুনায় তাদের ছায়া ব্রিজের নীচে এসে আছড়ে পড়ে। এটাআমাদের কারণেই ঘটে কারণ আমরাই দুই ভাগ বিভক্ত। কেউ চায় তারা ফিরেআসুক, আর কেউ তাদের ভুলে যেতে পারলে বাঁচে। এ দ্বন্দ্বের খবর অবিভক্তযমুনার…
আমাকেতুমিদাঁড়করিয়েদিয়েছবিপ্লবেরসামনে-ফরহাদ মাজহার আমাকে তুমি দাঁড় করিয়ে দিয়েছ ইতিহাসের সামনেআমার কাঁধে দিয়েছ স্টেনগান, কোমরবন্দে কার্তুজ, আঙ্গুল ভর্তি ট্রিগার,বারুদে বিস্ফোরণে উৎকর্ণ আমার শ্র“তি আমার দৃষ্টিতে ভবিষ্যতআমি সেই ভবিষ্যতের দিকে নিশানা তাক করে…