খুব বেশি ভালো থাকতে নেই- শামসুর রাহমান।

সংগীত সাধক, কবি; চিত্রকর অথবা ভাস্কর, কাউকেই
খুব বেশি ভালো থাকতে নেই।

খুব বেশি ভালো থাকা মানে
মোহের নাছোড় লতাগুল্মসমেত স্রোতের টানে
সেখানেই অনিবার্য খড় ভেসে-যাওয়া,
যেখানে কস্মিনকালে বয় না শিল্পের জলহাওয়া।

যদি শিল্পী প্রতিদিন ঝলমলে মদির, ফেনিল
পার্টিতে বেড়ায় ফুলবাবু সেজে, ক্রমশ আবিল
হয়ে ওঠে যদি আত্মা সোনাদানা হীরকের বশে,
যদি দ্রুত খসে
একে একে গোপন পালক সব তার, নুয়ে আসে
দেহমন কুর্নিশের ভারে আর সারাক্ষণ রমণীবিলাসে
মজে থাকে, তবে খাতা শুধু
অত্যন্ত বিরান মরুভূমি বুকে নিয়ে করবে ধূ ধূ
আর চির প্রতীক্ষা-কাতর
পাথর থাকবে হায়, কেবলি পাথর।

অসুয়া, অবজ্ঞা, হেলা মাথা
পেতে নিয়ে, জলকষ্টে ভুগে কুড়িয়ে কাঁঠাল পাতা
গোধূলির মতো বস্ত্র গায়ে বাউলের সঙ্গে গলা
মিলিয়ে উদাস হেঁটে চলা
ছিলো ভালো, কখনো কখনো কোনো নারীকে জড়ানো
উষ্ণ বুকে অবিবাহে, পথপার্শ্বে উনুন ধরানো,
নৌকো বাঁধা ঘাটে ঘাটে, পাটাতনে শুয়ে
তুচ্ছতার বুদ্ধুদ উড়িয়ে দিয়ে ফুঁয়ে
ভোরবেলাকার কচি আলো,
খঞ্জনার নাচ, জেলে-বৌয়ের ভাসানো ঘড়া দেখা ছিলো ভালো।

আজো কায়মনোবাক্যে চাই
শিল্পীর সত্তায় থাক লেগে ত্যাগময় কিছু ছাই।
সামাজিক সকল ভড়ং
আমূল খারিজ ক’রে তীব্র সে বরং
সহজে করুক মনে পেলিক্যান কালি শহীদের
রক্তের চেয়েও ঢের
বেশি পূত পবিত্র এবং হাতুড়ি ও বাটালির
ঘায়ে ওড়া শাদা পাথরের হাঁট-টুকরোর ঘ্রাণ পৃথিবীর
সবচে’ সুরভিময় ফুলের চেয়েও
অধিক সুগন্ধী, ওর মনের নানান স্তরে ছেয়ে
থাক সর্বক্ষণ
সত্তাক্ষয়ী অমোঘ দহন।

রঙিন পালকে নিয়ে ভোর
নেচে নেচে বলে যায় দূরাগত একটি চন্দনা-
‘ওরে, পড়ে না কি মনে তোর
নক্ষত্রপল্লীতে একা জেগে থাকা মাইকেল এঞ্জেলোর অগাধ যন্ত্রণা?

আরো কবিতা পড়তে ক্লিক করুন। শামসুর রাহমান।

কবিতা “খুব বেশি ভালো থাকতে নেই” – শামসুর রাহমান – বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা

এই কবিতাটি শামসুর রাহমানের একটি গভীর দার্শনিক রচনা, যেখানে কবি শিল্পী ও সৃষ্টিশীল মানুষের জীবনদর্শন নিয়ে আলোচনা করেছেন। কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের আধুনিক ধারায় একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। শামসুর রাহমান তার অনন্য শৈলীতে শিল্পীর আত্মত্যাগ, সৃষ্টিশীলতার মূল্য এবং সমাজের সাথে শিল্পীর সম্পর্কের জটিল দিকগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন।

কবিতার সারাংশ

কবিতাটি শিল্পী, কবি, চিত্রকর ও ভাস্করদের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করে। কবি বলতে চেয়েছেন যে শিল্পীর খুব বেশি ভালো থাকা উচিত নয়, কারণ সৃষ্টিশীলতার জন্য কিছুটা কষ্ট ও সংগ্রাম的必要 আছে। কবিতাটি শিল্পীর আত্মত্যাগ, সামাজিক ভণ্ডামি থেকে মুক্তি এবং সত্যিকারের শিল্প সৃষ্টির জন্য必要な কষ্টের গুরুত্ব নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করে। শামসুর রাহমান শিল্পীর জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন এবং দেখিয়েছেন কীভাবে বিলাসিতা ও আরাম শিল্পীকে তার সৃষ্টিশীলতা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

রূপক বিশ্লেষণ

কবিতায় অসংখ্য শক্তিশালী রূপক ব্যবহৃত হয়েছে। “মোহের নাছোড় লতাগুল্ম” শিল্পীর মোহ ও প্রলোভনের象征, “স্রোতের টানে খড় ভেসে-যাওয়া” সমাজের প্রভাবে শিল্পীর নিষ্ক্রিয় হওয়ার指示ক, “অবিবাহে নারীকে জড়ানো” মুক্ত প্রেম ও সৃষ্টিশীলতার প্রতীক, “পাথর” শিল্পের স্থায়ী মূল্যবোধের চিহ্ন, “ছাই” শিল্পীর আত্মত্যাগের象征, এবং “মাইকেল এঞ্জেলোর যন্ত্রণা” মহান শিল্পীদের চিরন্তন সংগ্রামের指示ক। এই সকল রূপক কবিতাকে একটি গভীর দার্শনিক মাত্রা দিয়েছে।

কবির উদ্দেশ্য ও সাহিত্যধারা

শামসুর রাহমান এই কবিতার মাধ্যমে শিল্পী সমাজকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে চেয়েছেন। তিনি দেখাতে চেয়েছেন যে সত্যিকারের শিল্প সৃষ্টির জন্য শিল্পীর কিছুটা কষ্ট ও সংগ্রাম的必要 আছে। বিলাসিতা ও সামাজিক মর্যাদা শিল্পীকে তার সৃষ্টিশীলতা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের আধুনিক ধারার অন্তর্গত, যেখানে ব্যক্তির অভিজ্ঞতা ও সমাজের সাথে তার দ্বন্দ্বকে গভীর দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করা হয়েছে। শামসুর রাহমান শিল্পীর আত্মিক শুদ্ধতা ও সৃষ্টিশীলতার জন্য必要な সংগ্রামের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।

আবেগ বিশ্লেষণ

এই কবিতায় শামসুর রাহমানের আবেগ অত্যন্ত গভীর ও বহুমাত্রিক।其中有শিল্পীর প্রতি গভীর মমত্ববোধ, সৃষ্টিশীলতার জন্য আত্মত্যাগের গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা, সামাজিক ভণ্ডামির প্রতি বিতৃষ্ণা, এবং শিল্পের শাশ্বত মূল্যবোধের প্রতি অকুণ্ঠ বিশ্বাস। কবির ভাষায় একটি সতর্কবার্তার সুর রয়েছে,但同时 আছে শিল্পীর জন্য গভীর সমবেদনা। তিনি শিল্পীর জীবনের সহজ-সরল মুহূর্তগুলোর সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন,但同时 সতর্ক করেছেন বিলাসিতার বিপদ সম্পর্কে।

মেটা ডেসক্রিপশন

শামসুর রাহমানের কবিতা “খুব বেশি ভালো থাকতে নেই” এর সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা। কবিতার রূপক, উদ্দেশ্য, দার্শনিক তাৎপর্য এবং আবেগপূর্ণ বিশ্লেষণ যা এসইওর জন্য সম্পূর্ণরূপে উপযোগী। শামসুর রাহমানের কালজয়ী এই কবিতার গভীর অর্থ ও শিল্পদর্শন সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)

কবিতাটি কোন সাহিত্যধারায় পড়ে?

এটি বাংলা সাহিত্যের আধুনিক ধারার অন্তর্গত একটি দার্শনিক কবিতা।

কবিতার মূল রূপক কী?

মোহের লতাগুল্ম, স্রোতের টানে খড় ভেসে-যাওয়া, পাথর, ছাই, মাইকেল এঞ্জেলোর যন্ত্রণা等重要 রূপক ব্যবহৃত হয়েছে।

কবিতাটির প্রথম লাইন কী?

কবিতাটির প্রথম লাইন: “সংগীত সাধক, কবি; চিত্রকর অথবা ভাস্কর, কাউকেই খুব বেশি ভালো থাকতে নেই।”

কবিতাটির মূল বিষয়বস্তু কী?

কবিতাটির মূল বিষয়বস্তু হলো শিল্পীর আত্মত্যাগের গুরুত্ব এবং সৃষ্টিশীলতার জন্য সংগ্রাম的必要性।

শামসুর রাহমানের সাহিত্যকর্মের বৈশিষ্ট্য কী?

শামসুর রাহমানের কবিতায় সমাজবাস্তবতা, মানবিক আবেগ, রাজনৈতিক চেতনা এবং গভীর দার্শনিক ভাবনা বিশেষভাবে উঠে এসেছে।

কবিতায় মাইকেল এঞ্জেলোর উল্লেখের তাৎপর্য কী?

মাইকেল এঞ্জেলোর উল্লেখের মাধ্যমে কবি মহান শিল্পীদের চিরন্তন সংগ্রাম ও যন্ত্রণার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।

কবিতাটি কীভাবে শিল্পী সমাজকে প্রভাবিত করে?

কবিতাটি শিল্পী সমাজকে বিলাসিতা ও আরাম থেকে সতর্ক করে এবং সৃষ্টিশীলতার জন্য আত্মত্যাগের গুরুত্ব বোঝায়।

কবিতার ভাষাশৈলীর বিশেষত্ব কী?

কবিতার ভাষা অত্যন্ত চিত্রময়, রূপকধর্মী এবং গভীর দার্শনিক ভাবনা প্রকাশে সক্ষম।

© Kobitarkhata.com – কবি: শামসুর রাহমান

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x