কবিতার খাতা
উল্টো-সোজা – নবনীতা দেবসেন
এতো ঢাক ঢাক-গুড়গুড়ের আছেটা কি মশাই
ভন্ডামি ছেড়ে যা বলার, তা সোজাসুজি বলুন।”
-দেখুন, জীবনটা সোজা নয়
জীবনে কিছুই সোজা যায় না।
এমন কি হাত থেকে ঢিলটা ছুঁড়লেও
সেটা প্যারালাল হয়ে বেঁকে পড়ে।
একটা গাছ, সেও-সূর্যের দিকে প্রথমেই সিধে ওঠে না,
গোড়ায় একটু আঁকে-বাঁকে।
তাল, নারকোল, খেজুর টেজুর দু-একখানা
পামজাতীয় একলসেঁড়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্ভিদ্ ভিন্ন।
কিন্তু-
তাদের শেকড়গুলো নেড়েচেড়ে দেখেছেন কি?
বলুন তো মাটির নিচে গিয়ে
তাদের সোজাসুজির জারিজুরি খাটে কিনা?
উঁ-হু, সেখেনে তেনাদের ভেন্ন মূর্তি!
নদীর কথা বাদই দিচ্ছি-
এই আপনাদের মহদা-শয় সমুদ্রের কথাটাই ধরুন,
একখানা ঢেউও কি সে সিধে পাঠায়?
আর এই যে পূজ্যপাদ হিমালয়
তাঁর কোনখানটা সোজা মশাই?
তুচ্ছ বাতাস, ঈশ্বরের ফু –
সেও খুব সোজা ধায় কি,
ক্ষণে ক্ষণে দিক্ পালটায়।
আমি সামান্য মানুষ-
আমি কি করে সোজা বলব,
সোজা চলব? হাঁটতে গেলেই ডান পাটা, একটু ডাইনে
হেলে পড়ে। বাঁ পা-খানা বাঁয়ে হেলে যায়।
সেই ছেলেবেলা থেকে ঢের চেষ্টা করে দেখেছি মশাই
কিছুতেই নাকের সোজা হাঁটতে পারিনে।
একে কি আপনি ভন্ডামি বলবেন?
আমাকে কি বলবেন দুমুখো সাপ?
দেখুন দাদা-দুটো জিনিস, কেবল সোজাসুজি চলে:
-আকাশ ফুঁড়ে বিষ্টি,
-আর চক্ষু ফুঁড়ে জল।
আর, একখানা কথাই কেবল
সোজাসুজি বলা যায়:
-মিথ্যে।