অবেলার ডাক – কাজী নজরুল ইসলাম।

কবিতা “অবেলার ডাক” – কাজী নজরুল ইসলাম – বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা

এই কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের একটি হৃদয়স্পর্শী রচনা, যেখানে কবি অতীত ভালোবাসা, হারানোর বেদনা এবং অনুশোচনার গভীর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। কবিতাটির ভাষা অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ও আবেগধর্মী, যা বাংলা সাহিত্যের প্রেম ও বিরহের কবিতায় বিশেষ স্থান দখল করে আছে। কাজী নজরুল ইসলাম তার অনন্য শৈলীতে মানব হৃদয়ের গভীরতম احساساتকে স্পর্শ করতে সক্ষম হয়েছেন এই কবিতার মাধ্যমে।

কবিতার সারাংশ

কবিতাটি একটি অকাল অনুশোচনা ও অতীত ভালোবাসার স্মৃতির উপর নির্মিত, যেখানে কবি তার অতীতের একজন প্রিয় মানুষকে নিয়ে গভীর অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন। কবি স্বীকার করেছেন যে তিনি তখন ভালোবাসতে জানতেন না, কিন্তু আজ অবেলায় সেই মানুষটির স্মৃতি তাকে পীড়া দিচ্ছে। কবিতাটি হারানোর বেদনা, অকাল অনুশোচনা এবং অতীত স্মৃতির মর্মবেদনা নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করে। কবি দেখিয়েছেন কীভাবে একসময়ের অবহেলিত ভালোবাসা আজ তার জীবনের最大的 বেদনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমগ্র কবিতা জুড়ে রয়েছে একটি গভীর আত্মসমালোচনা এবং অনিবার্য হারানোর যন্ত্রণা।

রূপক বিশ্লেষণ

কবিতায় অসংখ্য শক্তিশালী রূপক ও প্রতীক ব্যবহৃত হয়েছে। “রাজ-ভিখারী” ভালোবাসার ব্যক্তির দ্বৈত সত্তার象征, যিনি রাজার মতো মহান কিন্তু ভিখারীর মতো নম্র। “পথ-পাগলে” চিরন্তন ভ্রমণকারীর指示ক, যে কখনো一处ে থাকতে পারে না। “সোহাগ” ও “আদর” প্রকৃত ভালোবাসার প্রতীক। “বুকের ক্ষুধা” মানব হৃদয়ের的情感需求的象征। “পাষাণ ফেটেও রক্ত বহে” কঠোর হৃদয়েরও情感化的指示ক। “ঝড়ের হাওয়া” অশান্ত মন ও আবেগের প্রতীক। এই সকল রূপক কবিতাকে একটি গভীর মানবিক মাত্রা দিয়েছে।

কবির উদ্দেশ্য ও সাহিত্যধারা

কাজী নজরুল ইসলাম এই কবিতার মাধ্যমে মানব হৃদয়ের জটিল情感সমূহকে প্রকাশ করতে চেয়েছেন। তিনি দেখাতে চেয়েছেন যে ভালোবাসা বোঝার এবং মূল্য দেবার একটি নির্দিষ্ট সময় আছে, যা পার হয়ে গেলে শুধু অনুশোচনাই остается। কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের রোমান্টিক ধারার অন্তর্গত, যেখানে ব্যক্তির গভীরতম আবেগ ও অনুভূতিকে কাব্যিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। নজরুল তার স্বকীয় শৈলীতে মানবিক সম্পর্কের নানা维度কে স্পর্শ করেছেন -其中有প্রেম, বিরহ, অনুশোচনা, আত্মসমালোচনা এবং চিরন্তন বিচ্ছেদের বেদনা। কবি পাঠকদের মনে এই বার্তা দিতে চেয়েছেন যে ভালোবাসাকে সঠিক সময়ে স্বীকার করে নেওয়া এবং মূল্য দেওয়া জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

আবেগ বিশ্লেষণ

এই কবিতায় কাজী নজরুল ইসলামের আবেগ অত্যন্ত গভীর, বহুমাত্রিক এবং হৃদয়স্পর্শী।其中有গভীর অনুশোচনা, অতীতের জন্য তীব্র আফসোস, হারানোর বেদনা, একাকীত্বের যন্ত্রণা, এবং ভালোবাসার জন্য অকূল渴望। কবির ভাষায় একটি মর্মান্তিক সত্যবাদিতা রয়েছে – তিনি নিজের ভুলগুলি স্বীকার করেছেন নির্দয়ভাবে।但同时 আছে একটি আশার আভাস – যে হয়তো কোনো一天 ফিরে আসবে সেই প্রিয় মানুষ। কবির情感সমূহ এতটাই প্রাণবন্ত যে পাঠক নিজেকেই সেই অবস্থানে আবিষ্কার করেন। নজরুলের কবিতায় বিরহের যে গভীরতা, তা বাংলা সাহিত্যে比较少 দেখা যায়।

মেটা ডেসক্রিপশন

কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী কবিতা “অবেলার ডাক” এর সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা। কবিতার রূপক, উদ্দেশ্য, মানবিক সম্পর্কের গভীর দর্শন এবং আবেগপূর্ণ বিশ্লেষণ যা এসইওর জন্য সম্পূর্ণরূপে উপযোগী। নজরুলের এই অমর কবিতার গভীর অর্থ, সামাজিক প্রাসঙ্গিকতা এবং শিল্পসৌকর্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)

কবিতাটি কোন সাহিত্যধারায় পড়ে?

এটি বাংলা সাহিত্যের রোমান্টিক ও গীতি কবিতার ধারার অন্তর্গত একটি কালজয়ী রচনা।

কবিতার মূল রূপক কী?

রাজ-ভিখারী, পথ-পাগলে, বুকের ক্ষুধা, পাষাণ, ঝড়ের হাওয়া等重要 রূপক ব্যবহৃত হয়েছে।

কবিতাটির প্রথম লাইন কী?

কবিতাটির প্রথম লাইন: “অনেক ক’রে বাসতে ভালো পারিনি মা তখন যারে, আজ অবেলায় তারেই মনে পড়ছে কেন বারে বারে।”

কবিতাটির মূল বিষয়বস্তু কী?

কবিতাটির মূল বিষয়বস্তু হলো অতীত ভালোবাসার জন্য অনুশোচনা, হারানোর বেদনা এবং অকাল স্মৃতির মর্মবেদনা।

কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্মের বৈশিষ্ট্য কী?

নজরুলের কবিতায় বিদ্রোহ, প্রেম, মানবতা, духовность এবং সামাজিক ন্যায়ের বিষয়গুলি বিশেষভাবে উঠে এসেছে।

কবিতায় ‘রাজ-ভিখারী’ রূপকের তাৎপর্য কী?

রাজ-ভিখারী রূপকটি ভালোবাসার ব্যক্তির দ্বৈত সত্তা নির্দেশ করে – যিনি আত্ম적으로 রাজার মতো মহান কিন্তু ভালোবাসায় ভিখারীর মতো নম্র ও বিনয়ী।

কবিতাটি কীভাবে পাঠকের Emotionsকে প্রভাবিত করে?

কবিতাটি পাঠকের মনে গভীর সহানুভূতি, অনুশোচনা এবং নিজের জীবনের হারানো সুযোগগুলির স্মৃতি জাগ্রত করে।

কবিতার ভাষাশৈলীর বিশেষত্ব কী?

কবিতার ভাষা অত্যন্ত সংবেদনশীল, Musical এবং আবেগপ্রবণ, যা নজরুলের স্বকীয় Poetical Styleকে প্রতিফলিত করে।

কবিতাটির Historical Context কী?

এই কবিতাটি নজরুলের Personal Life এর Experiences থেকে Inspiration নিয়ে লেখা, যেখানে তিনি মানবিক Relationships এর জটিলতা প্রকাশ করেছেন।

কবিতাটি Why Timeless?

কবিতাটি মানুষের চিরন্তন Emotions – Love, Regret, Loss – কে স্পর্শ করে, তাই এটি সব Era এর জন্য Relevant।

© Kobitarkhata.com – কবি: কাজী নজরুল ইসলাম

অনেক ক’রে বাসতে ভালো পারিনি মা তখন যারে,
আজ অবেলায় তারেই মনে পড়ছে কেন বারে বারে।।

আজ মনে হয় রোজ রাতে সে ঘুম পাড়াত নয়ন চুমে,
চুমুর পরে চুম দিয়ে ফের হান্তে আঘাত ভোরের ঘুমে।
ভাব্তুম তখন এ কোন্ বালাই!
কর্ত এ প্রাণ পালাই পালাই।
আজ সে কথা মনে হ’য়ে ভাসি অঝোর নয়ন-ঝরে।
অভাগিনীর সে গরব আজ ধূলায় লুটায় ব্যথার ভারে।।

তর”ণ তাহার ভরাট বুকের উপ্চে-পড়া আদর সোহাগ
হেলায় দু’পায় দ’লেছি মা, আজ কেন হায় তার অনুরাগ?
এই চরণ সে বক্ষে চেপে
চুমেছে, আর দু’চোখ ছেপে
জল ঝ’রেছে, তখনো মা কইনি কথা অহঙ্কারে,
এম্নি দার”ণ হতাদরে ক’রেছি মা, বিদায় তারে।।

দেখেওছিলাম বুক-ভরা তার অনাদরের আঘাত-কাঁটা,
দ্বার হ’তে সে গেছে দ্বারে খেয়ে সবার লাথি-ঝাটা।
ভেবেছিলাম আমার কাছে
তার দরদের শানি- আছে,
আমিও গো মা ফিরিয়ে দিলাম চিন্তে নেরে দেবতারে।
ভিক্ষুবেশে এসেছিল রাজাধিরাজ দাসীর দ্বারে।।

পথ ভুলে সে এসেছিল সে মোর সাধের রাজ-ভিখারী,
মাগো আমি ভিখারিনী, আমি কি তাঁয় চিন্তে পারি?
তাই মাগো তাঁর পূজার ডালা
নিইনি, নিইনি মণির মালা,
দেব্তা আমার নিজে আমায় পূজল ষোড়শ-উপচারে।
পূজারীকে চিন্লাম না মা পূজা-ধূমের অন্ধকারে।।

আমায় চাওয়াই শেষ চাওয়া তার মাগো আমি তা কি জানি?
ধরায় শুধু রইল ধরা রাজ-অতিথির বিদায়-বাণী।
ওরে আমার ভালোবাসা!
কোথায় বেঁধেছিলি বাসা
যখন আমার রাজা এসে দাঁড়িয়েছিল এই দুয়ারে?
নিঃশ্বসিয়া উঠছে ধরা, ’নেই রে সে নেই, খুঁজিস কারে!’

সে যে পথের চির-পথিক, তার কি সহে ঘরের মায়া?
দূর হ’তে মা দূরন-রে ডাকে তাকে পথের ছায়া।
মাঠের পারে বনের মাঝে
চপল তাহার নূপুর বাজে,
ফুলের সাথে ফুটে বেড়ায়, মেঘের সাথে যায় পাহাড়ে,
ধরা দিয়েও দেয় না ধরা জানি না সে চায় কাহারে?

মাগো আমায় শক্তি কোথায় পথ-পাগলে ধ’রে রাখার?
তার তরে নয় ভালোবাসা সন্ধ্যা-প্রদীপ ঘরে ডাকার।
তাই মা আমার বুকের কবাট
খুলতে নারল তার করাঘাত,
এ মন তখন কেমন যেন বাসত ভালো আর কাহারে,
আমিই দূরে ঠেলে দিলাম অভিমানী ঘর-হারারে।।

সোহাগে সে ধ’রতে যেত নিবিড় ক’রে বক্ষে চেপে,
হতভাগী পারিয়ে যেতাম ভয়ে এ বুক উঠ্ত কেঁপে।
রাজ ভিখারীর আঁখির কালো,
দূরে থেকেই লাগ্ত ভালো,
আসলে কাছে ক্ষুধিত তার দীঘল চাওয়া অশ্র”-ভারে।
ব্যথায় কেমন মুষড়ে যেতাম, সুর হারাতাম মনে তরে।।

আজ কেন মা তারই মতন আমারো এই বুকের ক্ষুধা
চায় শুধু সেই হেলায় হারা আদর-সোহাগ পরশ-সুধা,
আজ মনে হয় তাঁর সে বুকে
এ মুখ চেপে নিবিড় সুখে
গভীর দুখের কাঁদন কেঁদে শেষ ক’রে দিই এ আমারে!
যায় না কি মা আমার কাঁদন তাঁহার দেশের কানন-পারে?

আজ বুঝেছি এ-জনমের আমার নিখিল শানি–আরাম
চুরি ক’রে পালিয়ে গেছে চোরের রাজা সেই প্রাণারাম।
হে বসনে-র রাজা আমার!
নাও এসে মোর হার-মানা-হারা!
আজ যে আমার বুক ফেটে যায় আর্তনাদের হাহাকারে,
দেখে যাও আজ সেই পাষাণী কেমন ক’রে কাঁদতে পারে!

তোমার কথাই সত্য হ’ল পাষাণ ফেটেও রক্ত বহে,
দাবাললের দার”ণ দাহ তুষার-গিরি আজকে দহে।
জাগল বুকে ভীষণ জোয়ার,
ভাঙল আগল ভাঙল দুয়ার
মূকের বুকে দেব্তা এলেন মুখর মুখে ভীম পাথারে।
বুক ফেটেছে মুখ ফুটেছে-মাগো মানা ক’র্ছ কারে?

স্বর্গ আমার গেছে পুড়ে তারই চ’লে যাওয়ার সাথে,
এখন আমার একার বাসার দোসরহীন এই দুঃখ-রাতে।
ঘুম ভাঙাতে আস্বে না সে
ভোর না হ’তেই শিয়র-পাশে,
আস্বে না আর গভীর রাতে চুম-চুরির অভিসারে,
কাঁদাবে ফিরে তাঁহার সাথী ঝড়ের রাতি বনের পারে।

আজ পেলে তাঁয় হুম্ড়ি খেয়ে প’ড়তুম মাগো যুগল পদে,
বুকে ধ’রে পদ-কোকনদ স্নান করাতাম আঁখির হ্রদে।
ব’সতে দিতাম আধেক আঁচল,
সজল চোখের চোখ-ভরা জল-
ভেজা কাজল মুছতাম তার চোখে মুখে অধর-ধারে,
আকুল কেশে পা মুছাতাম বেঁধে বাহুর কারাগারে।

দেখ্তে মাগো তখন তোমার রাক্ষুসী এই সর্বনাশী,
মুখ থুয়ে তাঁর উদার বুকে ব’লত,’ আমি ভালোবাসি!’
ব’ল্তে গিয়ে সুখ-শরমে
লাল হ’য়ে গাল উঠত ঘেমে,
বুক হ’তে মুখ আস্ত নেমে লুটিয়ে যখন কোল-কিনারে,
দেখ্তুম মাগো তখন কেমন মান ক’রে সে থাক্তে পারে!

এম্নি এখন কতই আমা ভালোবাসার তৃষ্ণা জাগে
তাঁর ওপর মা অভিমানে, ব্যাথায়, রাগে, অনুরাগে।
চোখের জলের ঋণী ক’রে,
সে গেছে কোন্ দ্বীপান-রে?
সে বুঝি মা সাত সমুদ্দুর তের নদীর সুদূরপারে?
ঝড়ের হাওয়া সেও বুঝি মা সে দূর-দেশে যেতে নারে?

তারে আমি ভালোবাসি সে যদি তা পায় মা খবর,
চৌচির হ’য়ে প’ড়বে ফেটে আনন্দে মা তাহার কবর।
চীৎকারে তার উঠবে কেঁপে
ধরার সাগর অশ্র” ছেপে,
উঠবে ক্ষেপে অগ্নি-গিরি সেই পাগলের হুহুঙ্কারে,
ভূধর সাগর আকাশ বাতাস ঘুর্ণি নেচে ঘিরবে তারে।

ছি, মা! তুমি ডুকরে কেন উঠছ কেঁদে অমন ক’রে?
তার চেয়ে মা তারই কোনো শোনা-কথা শুনাও মোরে!
শুনতে শুনতে তোমার কোলে
ঘুমিয়ে পড়ি। – ও কে খোলে
দুয়ার ওমা? ঝড় বুঝি মা তারই মতো ধাক্কা মারে?
ঝোড়ো হওয়া! ঝোড়ো হাওয়া! বন্ধু তোমার সাগর পারে!

সে কি হেথায় আসতে পারে আমি যেথায় আছি বেঁচে,
যে দেশে নেই আমার ছায়া এবার সে সেই দেশে গেছে!
তবু কেন থাকি’ থাকি’,
ইচ্ছা করে তারেই ডাকি!
যে কথা মোর রইল বাকী হায় যে কথা শুনাই কারে?
মাগো আমার প্রাণের কাঁদন আছড়ে মরে বুকের দ্বারে!

যাই তবে মা! দেকা হ’লে আমার কথা ব’লো তারে-
রাজার পূজা-সে কি কভু ভিখারিনী ঠেলতে পারে?
মাগো আমি জানি জানি,
আসবে আবার অভিমানী
খুঁজতে আমায় গভীর রাতে এই আমাদের কুটীর-দ্বারে,
ব’লো তখন খুঁজতে তারেই হারিয়ে গেছি অন্ধকারে!

আরো কবিতা পড়তে ক্লিক করুন । কাজী নজরুল ইসলাম।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x