আমার যাওয়া হয় না – আহসান হাবীব
“আমার যাওয়া হয় না” কবিতাটি আহসান হাবীবের একটি গভীর অনুভূতিপূর্ণ কবিতা যেখানে কবি সামাজিক অবস্থা, ব্যক্তিগত বাধা এবং জীবনের বাস্তবতার মধ্যে আটকে যাওয়ার প্রতীক হিসেবে নিজের অবস্থা তুলে ধরেছেন। কবি যখন তার ইচ্ছা পূর্ণ করতে পারেন না, তখন তার অন্তরঙ্গ অনুভূতিগুলো প্রকাশিত হয়।
কবিতার সারাংশ
কবিতাটি একটি সশক্ত ব্যাখ্যা, যেখানে কবি “যেতে ইচ্ছে করে” কিন্তু বাস্তবতার কারণে সে যেতে পারে না—এটি তার জীবনের এক গভীর আকাঙ্ক্ষা এবং সারা জীবনের অব্যক্ত ইচ্ছার প্রতীক। কবি তার জীবনের যেসব মুহূর্তে যেতে ইচ্ছে করেছে, কিন্তু বিভিন্ন বাধার কারণে সে তা পূর্ণ করতে পারেনি, সেগুলোর চিত্র প্রকাশ করেছেন।
রূপক বিশ্লেষণ
এই কবিতায় রূপক হিসেবে “যাওয়া” ব্যবহৃত হয়েছে, যা ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং তার অপ্রাপ্তির প্রতীক। “যাওয়া” এখানে শারীরিক স্থান নয়, বরং একজন মানুষের গভীর ইচ্ছা, যা বাস্তবতা দ্বারা সীমাবদ্ধ। কবি তার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন কিন্তু তা পূর্ণ করতে পারেননি, এটি সমাজের ন্যূনতম ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণ এবং সেই অনুভূতির অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণাকে চিত্রিত করে।
কবির উদ্দেশ্য ও সাহিত্যধারা
অহমি আহসান হাবীব তার কবিতার মাধ্যমে পাঠকদের জানান দিতে চেয়েছেন যে, ব্যক্তি স্বাধীনতা কখনও কখনও সমাজের শৃঙ্খলা ও পরিপাটি নিয়মের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়। কবি সাহিত্যে একজন ব্যক্তির অনুভূতি এবং সমাজের অবস্থার মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তুলে ধরেছেন। এটি সমাজবদ্ধ কবিতা যা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে।
আবেগ বিশ্লেষণ
এই কবিতার আবেগে রয়েছে ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা এবং বাস্তবতার মধ্যে দ্বন্দ্ব। কবি চিত্রিত করেছেন কিভাবে তার হৃদয় অভ্যন্তরীণ আকাঙ্ক্ষায় পূর্ণ ছিল কিন্তু বাইরের বিশ্ব, সময় এবং বাস্তবতা তাকে আটকে রেখেছে। কবি তার ভাষায় অত্যন্ত সরলভাবে কিন্তু গভীরভাবে অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।
মেটা ডেসক্রিপশন
বাংলা কবিতা “আমার যাওয়া হয় না” বিশ্লেষণ – আহসান হাবীবের কবিতার রূপক, উদ্দেশ্য এবং আবেগপূর্ণ বিশ্লেষণ যা SEO জন্য উপযোগী। কবিতাটি ব্যক্তি স্বাধীনতা, বাস্তবতা, এবং সামাজিক বাধাগুলির সংঘর্ষের প্রতীক।
FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)
কবিতার মূল রূপক কী?
কবিতার “যাওয়া” রূপক ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং সমাজের প্রতিবন্ধকতা প্রকাশ করছে। এটি একজন মানুষের ইচ্ছা এবং বাস্তবতার মধ্যে সংঘর্ষকে তুলে ধরেছে।
কবির উদ্দেশ্য কী?
কবির উদ্দেশ্য ছিল সমাজের প্রতিবন্ধকতা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা, যা মানুষের মনোভাব এবং বাস্তবতার মধ্যে যোগসূত্র সৃষ্টি করে।
কবিতার আবেগ কী?
কবিতার আবেগ ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা এবং বাস্তবতার মধ্যে একটি মিশ্রিত অনুভূতি, যা পাঠকদের কাছে গভীর এক অনুভূতির সৃষ্টি করে।
© Kobitarkhata.com – কবি: আহসান হাবীব
আমার আর যাওয়া হয় না।
আমার খুব যেতে ইচ্ছে করে
শেষবেলা যখন খুব মেঘ করে আসে
হাতে কোনো কাজ থাকে না
আর দক্ষিণ ধারের জানালায় একা আমি
চুপচাপ বসে থাকি
বসে থাকি আর মেঘ দেখি
একটু পরে ঝমঝম বৃষ্টি দেখি,
এমন কি দুপুরে চৈত্রের রোদে সারা ঢাকা যখন খা খা করে
তখন আমার
তক্ষুণি আমার যেতে ইচ্ছে করে
আমার যাওয়া হয় না।
আমার খুব যেতে ইচ্ছে করে
সকাল বেলা সুফিয়ার সঙ্গে ঝগড়া হলে,
বারো বছরের ছেলেটি যখন তার নিজের ভাষায় ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের ওপর বক্ততা করে, তখন
অথবা বড় সাহেবের ধমকধস্ত,
বিকেলে অফিসক্লান্ত যখন বাড়ি ফিরি ক্লান্ত পায়ে
আমার তখন যেতে ইচ্ছে করে
আমার যাওয়া হয় না।
যেতে চাইলেই ব’লে,
বয়স হয়েছে
এখন আর এ সব যাওয়াযাওয়ি শোভন নয়,
এইসব যাতায়াত এখন নিষিদ্ধ
যেতে চাইলেই ব’লে
এখন যুদ্ধটুদ্ধ চলছে
এখন জয়-পরাজয়ের প্রশ্ন
এখন নানা রকম জোটের কথা শোনা যাচ্ছে
এখন খুব দুঃসময়
এসময়ে পারো যদি এইসব শেকল-টেকল ছিঁড়তে
তবে যাও…
আমি পারি না. আমার আর যাওয়া হয় না।
শহর পিরোজপুর
সরকারি স্কুলের খেলার মাঠ
পশ্চিমে প্রশাসকদের বাড়িঘর
পুবে স্কুল-বাড়ি, সামনে বাগান, তার সামনে পুকুর
উত্তরে আদালত কাছারী
দক্ষিণে উকিল-মোক্তার ইত্যাদি
মাঠে রাত ন’টার অন্ধকার পাথরের মত ভারি
সেই মাঠের মাঝখানে দু’হাঁটুতে জোড়াহাত
তার ওপরে কপাল
আমি একদিন কেঁদে ছিলাম।
আমার যেতে ইচ্ছে করে
এক এক সময়ে খুব যেতে ইচ্ছে করে
স্কুলমাঠের সেই অন্ধকারে
সেই আঠারো বছর বয়সের গা ছুঁয়ে
আন্তিনছেঁড়া গেরুয়ারঙ কামিজের ভেতরে ঢুকে
আমার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে
আর বলতে ইচ্ছে করে:
এই দেখো
আমি এবার অন্য রকম কাঁদছি
আবার ঠিক সেই রকম কাঁদছি
একজন সুখী রাজার মত।
কিন্তু আমার যাওয়া হয় না।
আমাকে যেতে দেয় না।