সন্ধেপাখি- শ্রীজাত

যখন বুকে ঝাঁপায় এসে কুঠার,
সত্যিকে সব মিথ্যে বলে ডাকে –
হঠাৎ যখন হাত ছাড়ে বন্ধুতা,
বাধ্য হয়ে স্মরণ করি তাঁকে।

গানের কোনও অচেনা অন্তরায়
অপ্রত্যাশার সুর যেখানে সহজ –
জীবন আমায় অনেক পথে ঘোরায়।
সব তরী তো যায় না শিলাইদহ…

প্রশ্ন তবু ভাবায় নানান ঘেরে
বাসভূমিতেই যারা দ্বীপান্তরী,
আকাশ জুড়ে সন্ধেপাখি ফেরে
রাতের কাছে আগুন জড়ো করি।

এই দেশই কি জন্মদিনের মাটি?
এই বাতাসেই আবির ছিল তবে?
সরিয়ে রেখে আদত রচনাটি
আমরা এখন মজেছি উৎসবে।

কোথায় যাব, তাঁর উপশম ছাড়া?
কোথায় পাব জটিল নিরাময়?
মানুষ লেগে একলা হল পাড়া…
তাঁর বাড়িতেই পড়তে যেতে হয়।

সন্ধেপাখি আকাশ জুড়ে দেখা,
যাই যেরকম, ফিরেও আসি সেই।
রবি ঠাকুর দাঁড়িয়ে থাকেন একা –
তাঁর তো কোনও রবীন্দ্রনাথ নেই…

সন্ধেপাখি – শ্রীজাত | আধুনিক কবিতায় রবীন্দ্রনাথের অনুপস্থিতিতে এক যাত্রা

সন্ধেপাখি – শ্রীজাত একটি চিন্তাশীল এবং গভীর বোধসমৃদ্ধ আধুনিক বাংলা কবিতা, যার প্রথম পঙক্তি “যখন বুকে ঝাঁপায় এসে কুঠার” পাঠকের হৃদয়ে একরাশ প্রতিক্রিয়া জাগিয়ে তোলে। এই কবিতা কেবল রাজনৈতিক বা সামাজিক ব্যঞ্জনার প্রতিফলন নয়, বরং এক আত্মসন্ধানী জাতিসত্তার আর্তনাদ।

কবিতার শুরুতেই আঘাতের চিত্র তুলে ধরেন কবি – একটি সময় যখন মিথ্যা জয়ী হয়, বন্ধুত্ব প্রতারণায় রূপ নেয়, আর সত্যকে হার মানতে হয়। সেই মুহূর্তে তিনি স্মরণ করেন ‘তাঁকে’ – যে রবি ঠাকুর, যাঁর অস্তিত্ব এই কবিতার পরতে পরতে ছায়ার মতো বিরাজমান। শ্রীজাত যেন এক জাতিসত্তার সংকটময় সন্ধিক্ষণে রবীন্দ্রনাথকে ফিরে দেখেন, এক মূর্ত আশ্রয়রূপে।

“গানের কোনও অচেনা অন্তরায় / অপ্রত্যাশার সুর যেখানে সহজ”—এই পঙক্তিগুলি বোঝায়, কীভাবে জীবনের জটিল বাঁকে হঠাৎই রবি ঠাকুরের সরলতাপূর্ণ গানের দরকার হয়। ‘শিলাইদহ’-এর উল্লেখ করে কবি যেন বলতে চান, সব পথ তো শান্তিনিকেতনে বা গভীর মানসিক আশ্রয়ে পৌঁছে না, কিছু পথ নিঃসঙ্গতায় বিলীন হয়ে যায়।

“প্রশ্ন তবু ভাবায় নানান ঘেরে / বাসভূমিতেই যারা দ্বীপান্তরী”—এখানে কবি তুলে ধরেন, নিজের ভিটেমাটিতেই যারা বিচ্ছিন্ন, শিকড়হীন, সংস্কৃতিবিচ্ছিন্ন মানুষদের কথা। এই দেশ, এই সময় কি আমাদের জন্মদিনের আনন্দের মতো পবিত্র ও রঙিন? নাকি এটি কেবল উৎসবের মোড়কে নিজস্বতাবোধ হারানোর যন্ত্রণা?

“মানুষ লেগে একলা হল পাড়া”—এই পঙক্তি আধুনিক সমাজব্যবস্থার নিঃসঙ্গতাকে স্পষ্ট করে তোলে। মানুষের সংযোগ যতই দৃশ্যত বাড়ুক, প্রকৃত সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা যেন হারিয়ে গেছে। সেই নিঃসঙ্গ সময়ে একমাত্র উপশম, নিরাময়, মিলতে পারে রবীন্দ্রনাথের ঘরে – তাঁর চিন্তায়, তাঁর গানে, তাঁর সাহিত্যে।

কবিতার শেষ পঙক্তি – “রবি ঠাকুর দাঁড়িয়ে থাকেন একা – / তাঁর তো কোনও রবীন্দ্রনাথ নেই…” – এটি এক ধাক্কা দেওয়া উপলব্ধি। আমরা রবীন্দ্রনাথকে আশ্রয় হিসেবে চাই, কিন্তু তিনি কি আমাদের মতোই একা? তিনিও কি কখনও নিজেকে নিরুপায় বোধ করতেন? এই পঙক্তিগুলি রবীন্দ্রনাথকেও মানবিক রূপে তুলে ধরে।

SEO দৃষ্টিকোণ থেকে “সন্ধেপাখি – শ্রীজাত” একটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক কবিতা, বিশেষ করে যারা আধুনিক বাংলা কবিতার পাঠক এবং রবীন্দ্র-উত্তর চিন্তাধারায় আগ্রহী। এই কবিতা আবৃত্তিযোগ্য এবং সাহিত্য বিশ্লেষণের জন্য উপযুক্ত। “যখন বুকে ঝাঁপায় এসে কুঠার” পঙক্তিটি এমন এক তীব্র বাস্তবতা তুলে ধরে যা পাঠকের সঙ্গে সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে।

শ্রীজাতের এই কবিতা সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার সমান্তরালে সংস্কৃতির প্রতি এক গভীর মমতা এবং দায়বদ্ধতাকেও ফুটিয়ে তোলে। ‘সন্ধেপাখি’ যেন একটি প্রতীক—আত্মপোলব্ধি, রাতের নিস্তব্ধতা, সংকটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একাকীত্বের।

ফোকাস কীওয়ার্ড:

  • সন্ধেপাখি
  • শ্রীজাত
  • যখন বুকে ঝাঁপায় এসে কুঠার
  • আধুনিক বাংলা কবিতা
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
  • বাংলা কবিতার বিশ্লেষণ
  • সমাজচেতনা ও সাহিত্য
  • রবি ঠাকুরের উত্তরাধিকার
  • বাংলা আবৃত্তিযোগ্য কবিতা
  • সাহিত্যিক দর্শন

এই ইনভিজিবল HTML ব্লকটি মূলত সার্চ ইঞ্জিনের ক্রলিং-এর সুবিধার্থে লেখা হয়েছে যাতে “সন্ধেপাখি – শ্রীজাত” কবিতাটি দ্রুত ও সঠিকভাবে ইনডেক্স হয়। এটি কবিতার ভাব, প্রেক্ষাপট এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্য পাঠকের জন্য উন্মোচন করে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x