কবিতা “সত্তর পেরোনো কিশোরবেলা” – মহাদেব সাহা – বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী কবি মহাদেব সাহার “সত্তর পেরোনো কিশোরবেলা” কবিতাটি সময়, বয়স, স্মৃতি, আবেগ এবং অস্তিত্ববাদের এক অনন্য কাব্যিক প্রকাশ। কবি সত্তর বছর বয়স পেরিয়ে গেলেও নিজের মনের ভেতর লুকিয়ে থাকা দুরন্ত কিশোরসত্তাকে আবিষ্কার করেছেন। জীবনের স্রোত বহমান হলেও তার ভেতরে সেই উচ্ছ্বসিত কিশোরবেলা আজও বেঁচে আছে।
কবিতার সারাংশ
কবিতায় কবি বয়সের সত্তর বছরে দাঁড়িয়ে নিজের অতীতের দিকে ফিরে তাকান। বই হাতে স্কুলে যাওয়া, মার্বেলে পকেট ভরা, বৃষ্টিভেজা পথ, স্কুল পালানো দিন—সবকিছু যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তিনি উপলব্ধি করেন, বয়স বাড়লেও মনের গভীরে সেই চঞ্চল, অস্থির কিশোরবেলা এখনো অমলিন। কবিতাটি একদিকে সময়ের প্রবাহকে মেনে নেওয়ার গল্প, অন্যদিকে যৌবনের অদম্য শক্তি ধরে রাখার লড়াই।
সময়প্রবাহ ও স্মৃতিচারণ
মহাদেব সাহা সময়কে এখানে এক জীবন্ত চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। কবিতায় “গোধূলি”, “অপরাহ্ন”, “হেমন্তবেলা” ইত্যাদি শব্দ জীবনের বিভিন্ন পর্যায়কে প্রতীকীভাবে তুলে ধরে। কবি সময়কে থামাতে চান না, বরং স্মৃতির ভেতর হারিয়ে গিয়ে নিজের কিশোরসত্তার অস্তিত্ব খুঁজে পান।
রূপক বিশ্লেষণ
কবিতায় ব্যবহৃত রূপকগুলো জীবনের গভীর দার্শনিক দিককে উন্মোচিত করে। যেমন:
- “ধাবমান হরিণের চঞ্চলতা” — যৌবনের উচ্ছ্বাস ও অস্থিরতার প্রতীক।
- “নিভতে থাকা বাতি” — বার্ধক্যের ক্লান্তি ও মৃত্যুর ইঙ্গিত।
- “অথই শ্রাবণ” — কিশোরসত্তার চিরন্তন আবেগের প্রতিচ্ছবি।
এই রূপকগুলো কবিতার অর্থকে বহুমাত্রিক করে তুলেছে।
জীবনের দর্শন ও অস্তিত্ববাদ
কবিতাটি শুধু স্মৃতিচারণ নয়, বরং জীবনের প্রতি কবির দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে। তিনি মনে করেন, সময় চলে যায় ঠিকই, কিন্তু অনুভূতি, যৌবন ও স্বপ্ন মানুষের অন্তরে অমর হয়ে থাকে।
কবির উদ্দেশ্য ও সাহিত্যধারা
মহাদেব সাহা এই কবিতার মাধ্যমে দেখাতে চেয়েছেন যে বয়স কেবল একটি সংখ্যা। শৈশব ও কিশোরবেলার উচ্ছ্বাস মানুষের অন্তরে চিরকাল জীবিত থাকে। সাহিত্যধারার দিক থেকে এটি আধুনিক বাংলা কবিতার প্রেম, নস্টালজিয়া ও আত্মজৈবনিক অনুভূতির মিশ্রণ।
আবেগ বিশ্লেষণ
কবিতায় নস্টালজিয়া, জীবনের প্রতি আকুলতা এবং শৈশবের স্মৃতি এক অনন্য আবেগে মিশে গেছে। কবি যতই সত্তর পার করুন না কেন, অন্তরে তিনি এখনো সেই স্কুল পালানো, বৃষ্টিভেজা পথের কিশোর।
মেটা ডেসক্রিপশন
মহাদেব সাহার কবিতা “সত্তর পেরোনো কিশোরবেলা”র বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা। স্মৃতি, সময়, নস্টালজিয়া, রূপক ও জীবনের দর্শন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা যা SEO-এর জন্য উপযোগী।
FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)
কবিতা “সত্তর পেরোনো কিশোরবেলা” কোন সাহিত্যধারায় অন্তর্গত?
এটি আধুনিক বাংলা কবিতার ধারায় অন্তর্গত, যেখানে আত্মজৈবনিক অনুভূতি, স্মৃতি ও আবেগ মূল বিষয়।
কবিতার মূল বার্তা কী?
কবিতাটি বোঝাতে চায়, সময় যতই বয়ে যাক, কিশোরবেলার আবেগ মানুষের অন্তরে চিরকাল বেঁচে থাকে।
কবিতায় কোন রূপকগুলো ব্যবহৃত হয়েছে?
“গোধূলি”, “ধাবমান হরিণের চঞ্চলতা”, “নিভতে থাকা বাতি” ও “অথই শ্রাবণ” প্রধান রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
কবির উদ্দেশ্য কী?
কবির উদ্দেশ্য ছিল পাঠকদের বোঝানো যে বয়স বাড়লেও মনের কিশোরসত্তা চিরকাল তরুণ থেকে যায়।
অভ্যন্তরীণ লিঙ্ক
© Kobitarkhata.com – কবি: মহাদেব সাহা
তোমরা কেউ আমাকে ৭০তম বলতে পারো, কিন্তু
আমি সেই বারোতে-পড়া কিশোর
সেই মাতাল যৌবন,
সেই উতাল চৈত্র, আলুথালু বর্ষা;
আমি চোখ বুজে দেখি সেই দুরন্ত ওড়াউড়ি
এই আমার দিকে চেয়ে আমার মনেই হয়না
আমিই পঞ্চাশ-ষাট-সত্তর,
এই তো সেদিন বই হাতে ইস্কুলে যাই,
মার্বেলে পকেট ভরি।
তোমরা আমাকে বলতেই পারো গোধূলি,
বলতেই পারো অপরাহ্ন
বলতেই পারো হেমন্তবেলা,
কিন্তু আমি কী করে আমার অস্থির ব্যাকুল
চোখ ভুলে যাই,
ধাবমান হরিণের চঞ্চলতা ভুলে যাই?
আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি এখনো
সেই স্কুল-পালানো শৈশব
সেই বৃষ্টিভেজা পথ হারানো বালক,
মাঘ-নিশীথের মগ্ন কোকিল, সেই
শিশির-পড়া সকাল
টকিহলের সামনে দাঁড়ানো উঠতি যুবক;
তোমরা আমাকে বলতেই পারো শেষবেলা,
বলতেই
পারো নিভতে-থাকা বাতি,
কিন্তু আমি জানি, আমিই সেই অথই শ্রাবণ,
সেই বকুলফুলের মালা হাতে দাঁড়িয়ে-
থাকা কিশোরবেলা।
আরো কবিতা পড়তে ক্লিক করুন এখানে। মহাদেব সাহা ।