কবিতার খাতা
বাবা-সুবোধ সরকার
আজ নিয়ে হলো দশ দিন দশ রাত
এখনও আমার ছেলে ফিরলো না ঘরে
বুড়ো বাপ আমি ঘুরে ঘুরে মরি পথে
লাশ দেখে যেতে এসেছি নদীর চরে।
আর কত লাশ আমাকে দেখতে হবে?
কাপড় সরিয়ে, কাপড় সরিয়ে খুঁজি
যদি খুঁজে পাই আমার ছেলের লাশ
পুলিশের চোখে চোখ রাখি সোজাসুজি।
পুলিশ আমাকে থানায় বসিয়ে রাখে
পুলিশ আমাকে নিয়ে যায় জঙ্গলে
পুলিশ আমাকে মর্গে বসিয়ে রাখে
ছেলে গিয়েছিল ‘একটু আসছি’ বলে।
ছেলে বলেছিল, বাপজান খেয়ে নিও
কলেজে তাদের ছিল সংহতি গান
আসছেন নাকি মল্লিকা সারাভাই
সবাই লড়ছি- হিন্দু-মুসলমান।
ছেলে বলেছিল, ফিরতে সন্ধ্যা হবে
ছেলে বলেছিল সংহতি চাই আরো
ছেলে বলেছিল আমাদের মাটি এক
আলাদা হাঁড়ির প্রয়োজন নেই কারো।
সেই সন্ধ্যায় ছেলে ফিরলো না ঘরে
দশ দিন গেল, দশ দিন হলো পার
বুড়ো বাপ আমি গুনে যাই শুধু লাশ
আমাকে বুঝবে ছেলে মরে গেছে যার।
আমার মতন আরো অনেকের বাবা
পথে পথে ঘোরে, শুধু কি এ পোড়া দেশে?
প্যালেস্টাইনে, ইড্রাইলের পথে
মরুগান্ধারে আফগান যদি মেশে।
আমার ছেলের মতন অনেক ছেলে
লেবানন থেকে কাশ্মীরে নেই খোঁজ
তাদের বাবারা ছেলেদের লাশ খোঁজে
থানায় থানায় এসে বসে থাকে রোজ
আর কত দিন আমরা থাকব বাবা
আর কত দিন খুঁজব ছেলের লাশ
আর কত দিন নোয়াখালি গুজরাটে
শুনে যেতে হবে ওদেরই সে উল্লাস।
যে সব ছেলেরা স্কুলে ও কলেজে পড়ে
যে সব ছেলেরা শান্তির গান গায়
বাঁচাও, তাদের উপমহাদেশ জুড়ে
লাহোরে ঢাকায় লুধিয়ানা আগ্রায়।