দ্বিতীয় সংসার – জয় গোস্বামী।

দ্বিতীয় সংসার কবিতা – জয় গোস্বামী | বাংলা কবিতা সংগ্রহ

দ্বিতীয় সংসার – সম্পূর্ণ কবিতা

তার সঙ্গে সংসার করেছি কতদিন –
তিন-চার ঘণ্টার সংসার।
চা খাবেন না কফি?
ঝড়ের সময় তুমি
এসেছিলে ভিজে
আমারই ছাতার তলায়।

তবু জানি লেখার ভেতর এসে 
ঢুকে পড়তে থাকবে বারবার
এই দ্বিতীয় সংসার।
    

দ্বিতীয় সংসার কবিতার বিশ্লেষণ

জয় গোস্বামীর “দ্বিতীয় সংসার” কবিতাটি আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একটি মর্মস্পর্শী রচনা। কবিতাটি সম্পর্ক, সময় এবং স্মৃতির গভীর দার্শনিক চিন্তা প্রকাশ করে।

কবিতার মূল বিষয়বস্তু

এই কবিতায় কবি একটি অস্থায়ী কিন্তু গভীর সম্পর্কের চিত্র এঁকেছেন। “তিন-চার ঘণ্টার সংসার” শব্দবন্ধের মাধ্যমে সময়ের সীমাবদ্ধতা কিন্তু আবেগের অনন্ততা ফুটে উঠেছে।

শৈলীগত বৈশিষ্ট্য

জয় গোস্বামীর অনন্য কাব্যিক ভঙ্গি এখানে পরিলক্ষিত হয় – সাধারণ কথ্যরীতির মধ্যে গভীর দার্শনিক তত্ত্বের সমন্বয়।

কবি জয় গোস্বামী পরিচিতি

জয় গোস্বামী (জন্ম: ১০ নভেম্বর ১৯৫৪) আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে “পাগলি তোমার সঙ্গে”, “ঘুমের দরজা”, “অন্তর্গত” প্রভৃতি।

দ্বিতীয় সংসার কবিতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা

দ্বিতীয় সংসার কবিতার লেখক কে?

দ্বিতীয় সংসার কবিতাটির রচয়িতা প্রখ্যাত বাংলা কবি জয় গোস্বামী।

দ্বিতীয় সংসার কবিতার প্রথম লাইন কী?

কবিতাটির প্রথম লাইন: “তার সঙ্গে সংসার করেছি কতদিন – তিন-চার ঘণ্টার সংসার।”

জয় গোস্বামীর অন্যান্য জনপ্রিয় কবিতা কোনগুলো?

জয় গোস্বামীর অন্যান্য জনপ্রিয় কবিতার মধ্যে রয়েছে: “পাগলি তোমার সঙ্গে”, “ঘুমের দরজা”, “অন্তর্গত”, “বৃষ্টির ফোটারা” প্রভৃতি।

দ্বিতীয় সংসার কবিতার মূল বিষয় কী?

কবিতাটির মূল বিষয় হলো অস্থায়ী সম্পর্কের গভীরতা, স্মৃতির মাধুর্য এবং লেখনীর মাধ্যমে তার চিরস্থায়ী উপস্থিতি।

ট্যাগস: দ্বিতীয় সংসার, জয় গোস্বামী, বাংলা কবিতা, আধুনিক কবিতা, প্রেমের কবিতা, সম্পর্কের কবিতা, বাংলা সাহিত্য, কবিতা সংগ্রহ, তার সঙ্গে সংসার করেছি কতদিন, তিন-চার ঘণ্টার সংসার, ঝড়ের সময় তুমি, লেখার ভেতর এসে

তার সঙ্গে সংসার করেছি কতদিন-
তিন-চার ঘণ্টার সংসার।
স্বামীকে বিচ্ছেদ দিয়ে
সে থাকত একাই একটা ফ্ল্যাটে—
সেই ফ্ল্যাটে যেতাম।
কলেজে অফ ডে কবে সে জানাত ফোনে,
তার ফোন মানে আসতে বলা।
গেলেই আমার কোনও বই এনে সামনের পৃষ্ঠাটি
খুলে ধরে অনুরোধ: ‘সই করে দিন।’
আমার অবাক লাগত প্রথম প্রথম—
বলেছি: ‘কিনলেন কেন? আমিই তো দিতাম।”
তার উত্তর: ‘আমার ইচ্ছে আমি কিনছি, আপনি বাধা দেওয়ার কে?’
পরক্ষণে গলা পাল্টে: ‘দিন না বাবা একটু সই করে!’

হ্যাঁ আমরা পরস্পরকে আপনিই বলতাম
সারাক্ষণ ‘আপনি’। শুধু ওই সময়টুকু
‘তুমি’ হয়ে যেতাম দু’জন।
যে-সময়ে ঝড় হত। ঝড়ের সময় ‘তুমি’।
ঝড়বাদল শেষে আমাকে শয্যায় রেখে, মেঝেতে লুটনো চুড়িদার
তুলে নিয়ে সে যেত স্নানঘরে।
বেরিয়ে জিজ্ঞেস করত: ‘চা খাবেন না কফি?’
ততক্ষণে পোশাক বদল করেছে সে
বলতাম: ‘কফিই করুন।’

আবার ‘আপনি’-তে ফিরে যাওয়া।
কফি শেষ হলে বলত: ‘ভাত চাপিয়েছি—
সঙ্গে সাদা আলুর তরকারি, লঙ্কা দিয়ে,
ডাল আছে, খেতে বসলে মাছ ভেজে দেব।
তাড়াতাড়ি স্নান সেরে আসুন।’
কেমন যেন সংসার-সংসার মনে হত।

এখন সে চলে গেছে। সম্ভবত অন্য কারও কাছে।
আর কোনও যোগাযোগ নেই।
তবুও এখনও যেন মনে মনে শুনতে পাই, শুনি
দ্রুত নিশ্বাসের ফাঁকে ফাঁকে
চাপা স্বরে বলে যাওয়া তার:
‘দাও, দাও এবার।’
আমিও তো উল্কা ঢেলে দিতাম তক্ষুনি।

একদিন বলেছিল: ‘রোজই তো দুপুরে এসে সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরে যান।
একটা পুরো রাত্তিরও তো আমাকে দিলেন না আপনি আজও।’
বলেছিল: ‘আমার কী ইচ্ছে করে জানেন? আপনার
কাঁধে মাথা রেখে
বৃষ্টির আওয়াজ শুনব, শুয়ে শুয়ে, অন্ধকার ঘরে।
বিদ্যুৎ চমকাবে জানলায়।”
বলেছিল: ‘থাকবেন আমার সঙ্গে? এই ফ্ল্যাটে?
বলুন, থাকবেন?

মাইনের টাকা আপনি সবটাই বাড়িতে দেবেন
তাতে কোনও অসুবিধে হবে না আমার
কলেজের চাকরি আছে। দু’জনের চলে যাবে ঠিক।’ বলেছিল।

আমারই সাহস হয়নি। পিছিয়ে এসেছিলাম আমি।

তারপরই তো চলে গেল। দশ পনেরো বিশ তিরিশবার
ফোন করে চললাম। আর ফোন ধরল না আমার।
চিঠি লিখলাম কত। একটারও উত্তর এল না।

পাঁচ বছর কেটে গেছে। আরও যাবে পাঁচ দশ বছর।
সে ফিরে আসবে না আর আমার জীবনে। তবু জানি-
তবু জানি লেখার ভেতর
একমাত্র লেখারই ভেতর এসে ঢুকে পড়তে থাকবে বারবার
তার সঙ্গে আমার সেই তিন-চার ঘণ্টার সংসার

প্রত্যেক সপ্তাহে পাওয়া সেই আমার তিন চার ঘণ্টার সংসার…

আরো কবিতা পড়তে ক্লিক করুন। জয় গোস্বামী।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x