কবিতার খাতা
- 9 mins
তুমি যখন প্রশ্ন করো – মহাদেব সাহা।
তুমি যখন প্রশ্ন করো
আমি কি তোমায় ভালোবাসি?
অন্ধকারে লুকিয়ে মুখ
আমি নিজের মনেই হাসি ।
উত্তরে কি বলবো বলো
বিশ্বকোষেও হয়তো নাই,
উথালপাথাল খুঁজে মরি
কোথায় যোগ্য শব্দ পাই ।
জানো কি এই প্রশ্নে তোমার
হঠাত্ থামে নদীর ধারা
আকাশখানি কালো করে
মেঘে ঢাকা সন্ধ্যাতারা ।
তার চেয়েও গভীর ঘন
লজ্জা ঢাকে আমার মুখ
পাইনে খুঁজে একটি কথাও
শঙ্কা ভয়ে কাঁপে বুক ।
এতোদিনেও বোঝেনি যে
আজ বোঝাবো কোন ভরসায়?
না বলা সেই ছোট্টো কথা
বলিনি কি কোনো ভাষায়?
বলিনি কি এই কথাটি
তোমার দিকে নীরব চেয়ে,
এই গান কি সারাজীবন
জীবন দিয়ে যাইনি গেয়ে?
সেই কথা তো জানে ভালো
শিশির ভেজা ভোরের ফুল
তুমি যখন প্রশ্ন করো
আমি করি অধিক ভুল ।
আরো কবিতা পড়তে ক্লিক করুন। মহাদেব সাহা।
তুমি যখন প্রশ্ন করো – মহাদেব সাহা | বাংলা কবিতা বিশ্লেষণ
মহাদév সাহা রচিত “তুমি যখন প্রশ্ন করো” বাংলা সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য প্রেম বিষয়ক কবিতা, যেখানে কবি প্রেমিকের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও ভালোবাসা প্রকাশের সংকটকে অত্যন্ত শিল্পিতভাবে উপস্থাপন করেছেন। কবিতাটির প্রথম লাইন “তুমি যখন প্রশ্ন করো আমি কি তোমায় ভালোবাসি?” পাঠককে সাথে সাথেই এক গভীর মানসিক দ্বন্দ্বের জগতে নিয়ে যায়।
কবিতার সারাংশ
এই কবিতায় কবি একজন প্রেমিকের মানসিক অবস্থা চিত্রিত করেছেন, যাকে তার প্রেমিকা বারবার জিজ্ঞাস করে “তুমি কি আমাকে ভালোবাস?” এই সরল প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে প্রেমিক যে গভীর অন্তর্দ্বন্দ্বে ভোগেন, তা-ই এ কবিতার মূল বিষয়। কবি দেখিয়েছেন কীভাবে ভাষার সীমাবদ্ধতার কারণে গভীরতম অনুভূতিগুলো প্রকাশ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
রূপক বিশ্লেষণ
কবিতায় “অন্ধকারে লুকিয়ে মুখ” একটি শক্তিশালী রূপক হিসেবে কাজ করেছে, যা প্রেমিকের লজ্জা ও সংকোচকে নির্দেশ করে। “উথালপাথাল খুঁজে মরি” বাক্যাংশটি মানসিক অস্থিরতা ও উত্তেজনার প্রতীক। “নদীর ধারা থামা” এবং “আকাশ কালো করা” – এই রূপকগুলি প্রেমিকের হৃদয়ের গভীর আলোড়নকে নির্দেশ করে।
প্রধান রূপকসমূহ
অন্ধকার – মানসিক সংকোচের প্রতীক; নদীর ধারা – অনুভূতির প্রবাহের প্রতীক; মেঘে ঢাকা সন্ধ্যাতারা – আবেগের অস্পষ্টতার প্রতীক; শিশির ভেজা ভোরের ফুল – সূক্ষ্ম অনুভূতির প্রতীক; বিশ্বকোষ – জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার প্রতীক।
কবির উদ্দেশ্য ও সাহিত্যধারা
মহাদév সাহা বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের গুরুত্বপূর্ণ কবি। এই কবিতায় তার উদ্দেশ্য ছিল প্রেমের গভীরতা ও ভাষার সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করা। এটি প্রেম কবিতা ও মানসিক দ্বন্দ্বের কবিতার মিশ্র ধারায় রচিত, যেখানে আধুনিক মানুষের সম্পর্কের জটিলতা ফুটে উঠেছে।
আবেগ বিশ্লেষণ
কবিতায় গভীর প্রেম, লজ্জা, সংকোচ, মানসিক দ্বন্দ্ব এবং আবেগ প্রকাশের অক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছে। প্রেমিকের যে হৃদয়সংকোচ ও লজ্জা, তা এতটা জীবন্তভাবে চিত্রিত হয়েছে যে পাঠক নিজেকে সেই অবস্থায় আবিষ্কার করেন। “পাইনে খুঁজে একটি কথাও শঙ্কা ভয়ে কাঁপে বুক” – এই লাইনে প্রেমিকের যে ভীতি ও সংকোচ ফুটে উঠেছে, তা প্রতিটি পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করে।
কবিতার কাঠামো বিশ্লেষণ
কবিতাটি মুক্ত ছন্দে রচিত, যেখানে প্রতিটি স্তবক প্রেমিকের মানসিক অবস্থার একটি বিশেষ দিক উপস্থাপন করে। কবিতার গঠনশৈলীতে রয়েছে প্রশ্ন ও উত্তরের মাধ্যমে গল্প বলার technique।
শৈলীগত বৈশিষ্ট্য
কবি সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় গভীর মানসিক দ্বন্দ্ব প্রকাশ করেছেন। তাঁর শব্দচয়নে রয়েছে অসাধারণ সরলতা সঙ্গে গভীর meaning। কথ্য ভাষার ব্যবহার কবিতাকে করেছে আরও জীবন্ত ও বাস্তবনিষ্ঠ।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট
এই কবিতায় বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতির ছোঁয়া রয়েছে, যেখানে প্রেম প্রকাশে রয়েছে এক ধরনের সংকোচ ও লজ্জা। কবি বাংলাদেশের social context কে তার কবিতার background হিসেবে ব্যবহার করেছেন, যেখানে প্রেম এখনও অনেকাংশেই private emotion।
শিক্ষণীয় দিক
কবিতাটি পাঠককে শেখায় যে প্রকৃত ভালোবাসা শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা কাজে ও আচরণে প্রকাশ পায়। এটি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে কিছু অনুভূতি এতই গভীর যে ভাষা তার সামনে অসহায়।
মেটা ডেসক্রিপশন
মহাদেব সাহার “তুমি যখন প্রশ্ন করো” কবিতার সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ। কবিতার রূপক, ছন্দ, শৈলী ও মানসিক দ্বন্দ্ব নিয়ে গভীর আলোচনা। প্রথম লাইন “তুমি যখন প্রশ্ন করো আমি কি তোমায় ভালোবাসি?” সহ সমগ্র কবিতার ব্যাখ্যা।
FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)
কবিতাটির মূল বিষয়বস্তু কী?
কবিতাটির মূল বিষয়বস্তু হলো প্রেমিকের মানসিক দ্বন্দ্ব এবং ভালোবাসা প্রকাশের সংকট। যখন প্রেমিকা জিজ্ঞাস করেন “তুমি কি আমাকে ভালোবাস?”, তখন প্রেমিকের মধ্যে যে গভীর সংকোচ ও ভাষার সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়।
কবিতার প্রধান রূপকগুলি কী কী?
প্রধান রূপকগুলি হলো: অন্ধকার, নদীর ধারা, মেঘে ঢাকা সন্ধ্যাতারা, শিশির ভেজা ফুল, এবং বিশ্বকোষ – যারাそれぞれ বিভিন্ন মানসিক অবস্থার প্রতীক।
মহাদেব সাহার কবিতার বৈশিষ্ট্য কী?
মহাদেব সাহার কবিতায় সাধারণত প্রেম, মানবিক সম্পর্ক, এবং সমাজচেতনার প্রকাশ ঘটে। তাঁর ভাষা সহজ কিন্তু গভীর অর্থপূর্ণ এবং জীবনবোধসম্পন্ন।
কবিতাটির প্রথম লাইন কী?
কবিতাটির প্রথম লাইন: “তুমি যখন প্রশ্ন করো আমি কি তোমায় ভালোবাসি?” যা সরাসরি পাঠককে কবিতার মূল mood এ নিয়ে যায়।
কবিতাটি কোন ধারার অন্তর্গত?
কবিতাটি আধুনিক বাংলা কবিতার প্রেম ও মানসিক দ্বন্দ্ব ধারার অন্তর্গত, যেখানে সম্পর্কের জটিলতা ও আবেগ প্রকাশের সংকট চিত্রিত হয়েছে।
কবিতাটির বিশেষত্ব কী?
কবিতাটির বিশেষত্ব হলো এর সরল ভাষায় গভীর মানসিক দ্বন্দ্ব প্রকাশ এবং প্রেমের সংকোচময় দিকটি অত্যন্ত শিল্পিতভাবে ফুটিয়ে তোলা।
কবিতাটির শেষ লাইনের তাৎপর্য কী?
কবিতাটির শেষ লাইন “তুমি যখন প্রশ্ন করো আমি করি অধিক ভুল” – এই লাইনের মাধ্যমে কবি দেখিয়েছেন যে এই সরল প্রশ্নটি প্রেমিককে আরও বেশি বিভ্রান্ত ও অস্থির করে তোলে।
© Kobitarkhata.com – কবি: মহাদেব সাহা