আর আসবো না বলে দুধের ওপরে ভাসা সর
চামোচে নিংড়ে নিয়ে চেয়ে আছি। বাইরে বৃষ্টির ধোঁয়া
যেন সাদা স্বপ্নের চাদর
বিছিয়েছে পৃথিবীতে।
কেন এতো বুক দোলে? আমি আর আসবো না বলে?
যদিও কাঁপছে হাত তবু ঠিক অভ্যেসের বশে
লিখছি অসংখ্য নাম চেনাজানা
সমস্ত কিছুর।
প্রতিটি নামের শেষে, আসবো না।
পাখি, আমি আসবো না।
নদী আমি আসবো না।
নারী, আর আসবো না, বোন।
আর আসবো না বলে মিছিলের প্রথম পতাকা
তুলে নিই হাতে।
আর আসবো না বলে
সংগঠিত করে তুলি মানুষের ভিতরে মানুষ।
কথার ভেতরে কথা গেঁথে দেওয়া, কেন?
আসবো না বলেই।
বুকের মধ্যে বুক ধরে রাখা, কেন?
আর আসবো না বলেই।
আজ অতৃপ্তির পাশে বিদায়ের বিষণ্ণ রুমালে
কে তুলে অক্ষর কালো, ‘আসবো না’
সুখ, আমি আসবো না।
দুঃখ, আমি আসবো না।
প্রেম, হে কাম, হে কবিতা আমার
তোমরা কি মাইল পোস্ট না ফেরার পথের ওপর?
আমি আর আসবো না বলে – আল মাহমুদ | কবিতার বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা
আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি আল মাহমুদ-এর রচিত কবিতা “আমি আর আসবো না বলে” বাংলা সাহিত্যে এক গভীর আবেগ ও প্রতীকধর্মী ভাবনার প্রতিচ্ছবি। এই কবিতার প্রথম লাইন “আমি আর আসবো না বলে দুধের ওপরে ভাসা সর” থেকেই ফুটে ওঠে কবির আত্মদ্বন্দ্ব, বিদায়বোধ ও অস্তিত্বের হাহাকার।
কবিতার সারাংশ
এই কবিতায় কবি নিজের একান্ত অভ্যন্তরীণ বিদায় উপলব্ধিকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছেন ভাবের পরিসর। জীবনের শেষ মুহূর্ত, অন্তরযাত্রা, আত্মসমীক্ষা ও ভালোবাসার অপূর্ণতা মিলিয়ে এক অতৃপ্ত কাব্যরূপ ফুটে উঠেছে। কবি যেন জীবনের সমস্ত উপাদানের কাছ থেকে একে একে বিদায় নিচ্ছেন—পাখি, নদী, নারী, বোন, সুখ, দুঃখ, প্রেম, কাম, এমনকি কবিতার কাছ থেকেও।
রূপক ও প্রতীকের ব্যাখ্যা
সূক্ষ্ম প্রতীকের ব্যবহার
“দুধের ওপরে ভাসা সর” এখানে সময়ের নরম আবরণ বা জীবনের সরলতা বোঝাতে ব্যবহৃত। আর “বৃষ্টির ধোঁয়া” একপ্রকার অস্পষ্ট ভবিষ্যৎ কিংবা স্বপ্নিল জগতের রূপক।
বিদায়বোধ ও অনুপস্থিতির রূপক
“মাইল পোস্ট না ফেরার পথের ওপর” এই পঙক্তি ভবিষ্যতের দিকচিহ্নহীনতা এবং অনন্ত বিদায়কে নির্দেশ করে। প্রতিটি “আমি আসবো না” উচ্চারণ যেন জীবনের কোন না কোন অধ্যায়কে চিরতরে পেছনে ফেলে দেওয়ার প্রতীক।
আবেগ বিশ্লেষণ
এই কবিতায় রয়েছে তীব্র মানসিক টানাপোড়েন। কবি নিজেকে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তে পৌঁছালেও হৃদয়ের গভীরে যেন এক অনন্ত টান রয়েছে পৃথিবীর প্রতি। “বুক দোলে”, “কাঁপছে হাত”—এই শব্দগুলি কবির আবেগের গভীরতা প্রকাশ করে। ভালোবাসা, দুঃখ, প্রতিবাদ, প্রত্যয় এবং অনুশোচনা—সব একসাথে এসে মিশেছে কবিতার প্রতিটি পঙক্তিতে।
কবির উদ্দেশ্য ও সাহিত্যধারা
আল মাহমুদ এ কবিতার মাধ্যমে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বিদায় নয়, বরং সমাজ, রাষ্ট্র ও মানবিক অনুভূতির দিক থেকেও এক গভীর বার্তা দিয়েছেন। তাঁর কবিতায় প্রেম, প্রকৃতি ও প্রতিবাদের ত্রিভুজ অনন্য রূপে ধরা দেয়। এটি আধুনিক বাংলা কবিতার প্রেম, অস্তিত্ববাদ ও প্রতিরোধমূলক সাহিত্যধারায় অবদানের একটি অনন্য নিদর্শন।
সাহিত্যধারায় অবস্থান
“আমি আর আসবো না বলে” কবিতাটি মূলত আধুনিকতাবাদী ধারায় পড়লেও, এর মধ্যে উত্তর-আধুনিক চেতনা, আত্মবিশ্লেষণ এবং নিঃসঙ্গতার স্পষ্ট ছাপ রয়েছে। এটি একদিকে প্রেমের কবিতা, অন্যদিকে আত্মোপলব্ধির কবিতাও বটে।
কবিতার কাঠামো ও ভাষার বৈশিষ্ট্য
ভাষার গঠন
সরল কিন্তু বিমূর্ত ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে কবি পাঠককে গভীর চিন্তায় নিমজ্জিত করেন। প্রতিটি লাইনে যেমন সৌন্দর্য, তেমনি থাকে আত্মানুসন্ধানের পরোক্ষ আহ্বান।
কবিতার ছন্দ ও ভঙ্গি
এই কবিতাটি ছন্দমুক্ত হলেও এতে রয়েছে নিজস্ব ছন্দ ও গতি, যা কবির অনুভূতির স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। প্রতিটি অনুচ্ছেদ যেন একেকটি শ্বাস-প্রশ্বাস।
SEO Meta Description
আল মাহমুদ রচিত কবিতা “আমি আর আসবো না বলে” – এর গভীর বিশ্লেষণ, রূপক ব্যাখ্যা ও আবেগময় ব্যাখ্যা। কবির উদ্দেশ্য, সাহিত্যধারা এবং প্রতীক ব্যবহারের সারগর্ভ বিশ্লেষণ।
FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)
“আমি আর আসবো না বলে” কবিতাটি কোন সাহিত্যধারায় পড়েঃ?
এটি আধুনিক বাংলা কবিতার অন্তর্ভুক্ত, যেখানে আত্মানুভূতি ও অস্তিত্ববাদী দর্শন প্রতিফলিত হয়েছে।
এই কবিতার মূল রূপক কী?
এই কবিতার মূল রূপক হলো “আমি আসবো না” – যা এক চিরস্থায়ী বিদায়ের প্রতীক।
কবিতার প্রথম লাইনের তাৎপর্য কী?
“আমি আর আসবো না বলে দুধের ওপরে ভাসা সর” – এই লাইনটি জীবনের কোমলতা ও স্মৃতির প্রতীক, যা কবির অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলোর স্মারক।
কবিতাটির আবেগ কোন স্তরে পৌঁছায়?
কবিতাটি একেবারে অন্তরাত্মার স্তরে পৌঁছায়। পাঠক এর মাধ্যমে জীবনের অস্থায়ীতা ও চিরস্থায়ী অভিমান উপলব্ধি করতে পারেন।
© Kobitarkhata.com – কবি: আল মাহমুদ | কবিতার নাম: আমি আর আসবো না বলে