তোকে আমরা কী দিইনি,শক্তি? – পূর্ণেন্দু পত্রী।

কবিতা “তোকে আমরা কী দিইনি, শক্তি?” – পূর্ণেন্দু পত্রী – বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা

এই কবিতাটি পূর্ণেন্দু পত্রীর একটি কালজয়ী রচনা, যেখানে কবি বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে লেখা এই কবিতায় সাহিত্যিক সম্পর্ক, সৃষ্টিশীলতার বিনিময় এবং কবি সমাজের গভীর আবেগ ফুটে তুলেছেন। কবিতাটির ভাষা অত্যন্ত শক্তিশালী ও চিত্রময়, যা বাংলা কাব্য সাহিত্যে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।

কবিতার সারাংশ

কবিতাটি কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সাথে বাংলা সাহিত্য জগতের সম্পর্কের গভীরতা ও জটিলতা নিয়ে আলোচনা করে। পূর্ণেন্দু পত্রী এই কবিতায় শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে সমগ্র সাহিত্য সমাজ যা কিছু দিয়েছে তার একটি মর্মস্পর্শী হিসাব উপস্থাপন করেছেন। কবি থেকে সাহিত্য প্রতিষ্ঠান সবাই শক্তিকে কীভাবে সমর্থন ও ভালোবাসা দিয়েছে তার উজ্জ্বল বর্ণনা এই কবিতায় পাওয়া যায়।

রূপক বিশ্লেষণ

কবিতায় মাদল, ফ্লুরোসেন্ট রাত, জলদাপাড়ার জঙ্গল, জলপাইগুড়ি জেলা, সাইরেন, কামান-বন্দুক, বাংলা আকাদেমি, শান্তিনিকেতন等重要 রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। মাদল শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার ছন্দ ও শব্দের ধ্বনির象征, ফ্লুরোসেন্ট রাত কলকাতার সাহিত্যিক জীবন ও আধুনিকতার প্রতীক, জলদাপাড়ার জঙ্গল কবির নিজস্ব সৃষ্টিশীল জগতের指示ক, বাংলা আকাদেমি ও শান্তিনিকেতন সাহিত্য প্রতিষ্ঠানের সাথে শক্তির সম্পর্কের চিহ্ন।

কবির উদ্দেশ্য ও সাহিত্যধারা

পূর্ণেন্দু পত্রী এই কবিতার মাধ্যমে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি বাংলা সাহিত্য জগতের ঋণ ও ভালোবাসার কথা বলতে চেয়েছেন। কবিতাটি আধুনিক বাংলা কবিতার হাংরি জেনারেশনের অন্তর্গত, যেখানে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও সাহিত্যিক বন্ধুত্বকে গভীর দার্শনিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করা হয়েছে। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সৃষ্টিশীলতা, ব্যক্তিত্ব এবং সাহিত্য জগতে তার অবস্থানকে এই কবিতার মাধ্যমে চিরস্মরণীয় করে তুলেছেন।

আবেগ বিশ্লেষণ

এই কবিতায় প্রশ্নের আকারে একটি গভীর হতাশা, আক্ষেপ এবং অকৃত্রিম ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। কবির আবেগ অত্যন্ত জটিল ও বহুমাত্রিক -其中有গভীর শ্রদ্ধা, সাহিত্যিক মিত্রতা, সৃষ্টিশীলতার বন্ধুত্ব, হতাশা, ক্ষোভ, আক্ষেপ এবং একটি না-ফেরার যাত্রার বেদনা। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি সমগ্র সাহিত্য সমাজের যে অকুণ্ঠ ভালোবাসা ও সমর্থন ছিল, তারই মর্মস্পর্শী প্রকাশ এই কবিতা।

মেটা ডেসক্রিপশন

পূর্ণেন্দু পত্রীর কবিতা “তোকে আমরা কী দিইনি, শক্তি?” এর সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে লেখা এই কালজয়ী কবিতার রূপক, উদ্দেশ্য, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং আবেগপূর্ণ বিশ্লেষণ যা এসইওর জন্য সম্পূর্ণরূপে উপযোগী।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)

কবিতাটি কোন সাহিত্যধারায় পড়ে?

এটি আধুনিক বাংলা কবিতার হাংরি জেনারেশন ধারার অন্তর্গত একটি কালজয়ী কবিতা।

কবিতার মূল রূপক কী?

মাদল, ফ্লুরোসেন্ট রাত, জলদাপাড়ার জঙ্গল, বাংলা আকাদেমি, শান্তিনিকেতন等重要 রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

কবিতাটির প্রথম লাইন কী?

কবিতাটির প্রথম লাইন: “ঝমাঝঝম মাদল হয়ে বাজবি বলে তোকে দিয়েছি”

কবিতাটি কাকে উদ্দেশ্য করে লেখা?

এই কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে লেখা।

পূর্ণেন্দু পত্রী ও শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সম্পর্ক কী ছিল?

তারা উভয়েই হাংরি জেনারেশনের কবি এবং ঘনিষ্ঠ সাহিত্যিক বন্ধু ছিলেন, যার গভীর ছাপ এই কবিতায় পাওয়া যায়।

কবিতায় বাংলা আকাদেমির উল্লেখ কী বোঝায়?

বাংলা আকাদেমির প্রাঙ্গণে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতি ও সাহিত্য প্রতিষ্ঠানের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নির্দেশ করে।

হাংরি জেনারেশন কী?

হাংরি জেনারেশন ছিল বাংলা সাহিত্যের একটি আন্দোলন যেখানে শক্তি চট্টোপাধ্যায়, পূর্ণেন্দু পত্রী, মলয় রায়চৌধুরী等 কবিরা অংশগ্রহণ করেছিলেন।

© Kobitarkhata.com – কবি: পূর্ণেন্দু পত্রী

ঝমাঝঝম মাদল হয়ে বাজবি বলে তোকে দিয়েছি
চাইবাসার সব কটা ফ্লুরোসেন্ট রাত।
যথেচ্ছাচারের সুখে মাতাল হাতির মতো ঘুরবি বলে
তুলে দিয়েছি জলদাপাড়ার জঙ্গল।
দেদার ঘুমের জন্যে গোটা জলপাইগুড়ি জেলাটাকেই
বানিয়ে দিয়েছি তোর মাথার বালিশ।

মুখে যাতে মাছি না-বসে,
ভুবনেশ্বরের দুপুরগুলো চামর দুলিয়ে গেছে সারাক্ষণ।
শুধু তোর জন্যই হাওড়া স্টেশনে
জিরোতে দিইনি দূরপাল্লার কোনও ট্রেনকে।
স্টিমারে স্টিমারে ভোঁ বাজিয়ে জাহাজ,
যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিনদের বলেছি, সরে যাও,
শক্তি এখন সাঁতার কাটবে সমুদ্রে।

ভূমিকম্পের আগে সতর্কতা জানাতে
কলকাতার সমস্ত সাইরেন উপুড় করে দিয়েছি তোর মুঠোয়।
ভারতবর্ষের যে-কোনও ডাকবাংলোর
কনকনে কালো রাতগুলোকে বলা ছিল,
ও কখন আসবে ঠিক নেই, কিন্তু আসবেই,
কেয়ারটেকার যেন লণ্ঠনটা জ্বালিয়ে রাখে।

তোকে আমরা কী দিইনি, শক্তি?
মঞ্চে সবার আগে চেয়ার পেতে দিয়েছি তোকে।
মাইকে সবার আগে তোর নাম।
লিটল ম্যাগাজিনে সবার আগে তোর পদ্য।
আড্ডায় সবার আগে তোর গান।
যখন পা টলমল, জড়িয়েছি বুকে।
যখন চোখ হারিয়েছে ঘরে ফেরার ঠিকানা,
পৌঁছে দিয়ে এসেছি সদরঘরের দরজায়।
যখন উদ্ধত, বলেছি — শান্ত হ।
যখন শান্ত, বলেছি — শোনা তোর শঙ্খস্বর।
যখন স্বেচ্ছাচারী, বলেছি — তুই কিন্তু গৃহী।
যখন গৃহস্থ, এগিয়ে দিয়েছি ট্যুরিজমের ম্যাপ।

তোকে আমরা কী দিইনি, শক্তি?
তুই নিখোঁজ। আমরা পাহাড়ে-মেঘে-জলস্তম্ভে
বাজিয়ে দিয়েছি কাড়া-নাকাড়া।
তুই বিপন্ন। আমরা প্রতিপক্ষের দিকে
ঘুরিয়ে দিয়েছি কামান-বন্দুকের মুখ
তুই পুরস্কৃত, আমরা ঝনঝনিয়ে উঠেছি
ভীষ্মদেবের গলায় জয়জয়ন্তী রাগে।
আমরা স্মৃতি-অ্যালবামে সাজিয়ে রেখেছি
তোর একশো রকমের ছবি।
আমাদের দৈনন্দিন হাসি-ঠাট্টা ভরাট হয়ে থাকত
তোর দুশো রকমের দস্যিপনার গপ্পে।
তুই কবিতা পড়বি। আকাশ ঝেঁটিয়ে জড়ো করেছি সমস্ত রঙের মেঘ।
তুই নাচবি। সমস্ত আসবাব সরিয়ে বিছিয়ে দিয়েছি মোলায়েম মখমল।

তোকে আমরা কী দিইনি, শক্তি?
বাংলা আকাদেমির প্রাঙ্গণে সেদিন তোর কী বরবেশ!
কপালে চন্দনের রাজটীকা।
মনে হচ্ছিল, চশমা খুলে উঠে বসার আগে
একটু গা-এলানো বিশ্রাম বুঝি।
খানিক পরেই পড়বি শান্তিনিকেতনে লেখা নতুন কবিতা।
তখনও ভাবছি চুল্লি ভয় পাবে আগুনকে।
আগুন পড়ে নেবে শোকযাত্রীদের মুখরেখা।
শেষ বিউগল কিছুতেই বাজাতে পারবে না কলকাতার কান্না।
তখনও ভাবছি, দৈববাণীর মতো বলে উঠবি —
যেতে পারি, কিন্তু কেন যাব?

আরো কবিতা পড়তে ক্লিক করুন। পূর্ণেন্দু পত্রী।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x