কবিতার খাতা
- 13 mins
একদিন -শিমুল মুস্তাফা
একদিন সত্যি সত্যিই চলে যাবো এই শহর ছেড়ে
একদিন সত্যি সত্যিই চড়ে বসবো ভুল ট্রেনে
ভুল টিকেট হাতে নিয়ে সাবলীলভাবে
নেমে যাবো প্ল্যাটফর্মহীন অজানা স্টেশনে
পৌঁছে যাবো কোনো এক অচেনা গন্তব্যে।
একদিন ভোরের আলো ওঠার আগেই
কাউকে না জানিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যাবো।
চিৎকার করতে করতে প্রবেশ করবো
একশ বছর বধির হয়ে থাকা কোনো শহরে।
জন্ম নেওয়া নাড়ির টান
বেড়ে ওঠা শৈশব
মহল্লার রকের কাছে গচ্ছিত রাখা যৌবন
কালি মন্দির, কাশর ঘন্টা, গোঁসাই বাড়ি
ভাদ্রের আকাশে পেটকাটি, চাঁদিয়াল,
চুর, সাগুদানা, হাতুড়ি মার্কা সূতো, ভকাট্টা
সাত চারা, বোম ব্লাস্টিং, ডাংগুটি
কেটু, স্টার, সিজার, ক্যাপিস্টেনের খালি প্যাকেট
বালুর মাঠ, তেঁতুল তলা, কামরাঙ্গা মার্বেল
কোনো কিছুই আর আটকাতে পারবে না
এই শহর ছেড়ে একদিন সত্যি সত্যিই চলে যাবো।
পাহাড়কে ছেড়ে জল যেমন চলে যায় নদীর কাছে
কালো নুলিয়ারা যেমন যায় বিলীনের দিকে
হয়তো কোনো এক অমাবস্যার রাতে
কাউকে না জানিয়ে
পলাতক আসামির মতো পালিয়ে যাবো
একদিন সত্যি সত্যিই সব মায়া উপেক্ষা করে
সব পিছুটান ছিন্ন করে
এই শহর ছেড়ে চলে যাবো
নাম না জানা মরে পড়ে থাকা কোনো এক শহরে
আমি জানি আমার চলে যাওয়ায়
এ শহরের কিছু যায় আসবে না
একদিন সত্যি সত্যিই এ শহর
আমিহীন অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
আরো কবিতা পড়তে এখানে ক্লিক করুন। শিমুল মুস্তাফা।
কবিতা “একদিন” – শিমুল মুস্তাফা | বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা, থিম ও রূপক
ফোকাস কিওয়ার্ড: একদিন, শিমুল মুস্তাফা, একদিন সত্যি সত্যিই চলে যাবো এই শহর ছেড়ে
কবিতার পরিচিতি
শিমুল মুস্তাফা-র “একদিন” কবিতাটি শহর-নির্ভর স্মৃতি, প্রস্থান, অনিত্যতা ও ব্যক্তিসত্তার মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে একত্রে ধরে। প্রথম লাইন “একদিন সত্যি সত্যিই চলে যাবো এই শহর ছেড়ে” কেবল বিদায়ের ঘোষণা নয়; এটি অস্তিত্বগত এক সিদ্ধান্ত—অন্তরের যাত্রা, বয়ন ও ভাঙনের সমবেত সুর। কবিতার বক্তব্য সরল অথচ তীক্ষ্ণ; ভাষা কথ্য, রূপক স্পষ্ট; ফলে পাঠকের মনে শহরের ভিড়ভাট্টা, প্ল্যাটফর্মহীন স্টেশন, ভুল ট্রেন—সবকিছুই এক দৃশ্যমান চলচ্চিত্রের মতো ভেসে ওঠে।
কবিতার সারাংশ (Summary)
কবিতার বক্তা জানেন—একদিন সব বন্ধন ছিন্ন করে তিনি চলে যাবেন। ভুল ট্রেন, ভুল টিকিট, প্ল্যাটফর্মহীন অজানা স্টেশন—এসব মোটিফ জীবনের অনিশ্চিত গন্তব্যকে নির্দেশ করে। ভোরের আলো ওঠার আগেই নিরুদ্দেশ যাত্রা, “একশ বছর বধির হয়ে থাকা কোনো শহর”, এবং শৈশব–যৌবনের খুঁটিনাটি স্মৃতিচিহ্ন—সব মিলিয়ে নগর-জীবনের গভীর নস্টালজিয়া ও প্রস্থানবোধ গড়ে ওঠে। শেষ স্তবে বক্তার উপলব্ধি—তার প্রস্থানেও শহরের কিছু যায় আসে না; শহর “আমিহীন অভ্যস্ত” হয়ে যাবে। ব্যক্তির ক্ষুদ্রতা, তবুও ব্যক্তিসত্তার স্বাধীন সিদ্ধান্ত—এই দ্বৈততা কবিতার কেন্দ্রে।
প্রেক্ষাপট ও কাব্যভাষা
“একদিন” নগর-স্মৃতির কবিতা। কালি মন্দির, গোঁসাই বাড়ি, ভাদ্রের আকাশ, বালুর মাঠ, তেঁতুল তলা, মার্বেল খেলা—স্থানীয় শব্দভাণ্ডার কবিতাকে ডকুমেন্টারি-ধাঁচের বাস্তবতা দেয়। এই স্থানচিহ্নগুলো আবেগকে নির্দিষ্ট করে, ফলে পাঠক নিজের শহরকে চিনে ফেলেন। ভাষা সহজ ও গতিময়; দীর্ঘ বাক্যের ছন্দে যাত্রার তাড়না, ছোট বাক্যে সিদ্ধান্তের দৃঢ়তা—এই ছন্দ-পরিকল্পনা কাব্য-নির্মাণে তাৎপর্যপূর্ণ।
থিম ও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি
অনিত্যতা ও প্রস্থান
“একদিন সত্যি সত্যিই চলে যাবো”—এই পুনরাবৃত্ত উচ্চারণ জীবনের অনিত্যতাকে স্বীকার করে। প্রস্থান এখানে পরাজয় নয়; বরং মুক্তি, স্ব-নিয়ন্ত্রিত যাত্রা।
স্মৃতি বনাম বর্তমান
শৈশব–যৌবনের স্মৃতি বক্তাকে আটকে রাখে; তবু আত্মপরিচয়ের নতুন মানচিত্র আঁকার তাগিদে তিনি ছুটে যান নাম না জানা শহরের দিকে। স্মৃতি ও স্বাধীনতার দ্বন্দ্বই কবিতার স্পন্দন।
শহর ও ব্যক্তিসত্তা
শহর এখানে চরিত্র—একশ বছর বধির, তবু আত্মস্থ। ব্যক্তিমানুষ চলে যায়; শহর থেকে যায়। এ বোধ আমাদের নগরসভ্যতার নিষ্ঠুর রুটিন, তবুও মানবিক আত্মঘোষণার পরিসর রেখে দেয়।
রূপক, প্রতীক ও ইমেজারি
- ভুল ট্রেন/ভুল টিকিট: নিয়তির আকস্মিকতা, সিদ্ধান্তের ঝুঁকি, এবং জীবনের “অন্য ট্র্যাক”-এ চড়ে বসার সাহস।
- প্ল্যাটফর্মহীন অজানা স্টেশন: নিরাপত্তাহীন, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ; তবে এখানেই স্বাধীনতার বিস্তৃতি।
- বধির শহর: অনুভূতিহীন নগর-যন্ত্র; মানুষ আসে–যায়, শহর নিজস্ব ছন্দে থাকে।
- অমাবস্যার রাত: আলোহীনতার মধ্যেও অদেখা শুরু; শূন্য থেকে জন্ম নেওয়া সম্ভাবনা।
- “সব মায়া উপেক্ষা”: স্নায়ুবদ্ধ সম্পর্ক থেকে সরে এসে নিজস্ব সত্তাকে উদ্ধার করা।
এই ইমেজারি কবিতাকে দৃশ্য–শ্রাব্যতা দেয়—রেলের হুইসেল, প্ল্যাটফর্মের ধাতব গন্ধ, বৃষ্টিভেজা ভোর—সব মিলিয়ে “একদিন”-এর যাত্রা ব্যক্তিগত অথচ সার্বজনীন হয়ে ওঠে।
নাগরিক স্মৃতি: তালিকাভুক্ত জগত
“চুর, সাগুদানা, হাতুড়ি মার্কা সূতো, ভকাট্টা, সাত চারা, বোম ব্লাস্টিং, ডাংগুটি”—এই ধারাবাহিক শব্দায়ন কেবল নস্টালজিক তালিকা নয়; এটি মেমরি-ইনভেন্টরি—যেখানে প্রতিটি শব্দ একটি দৃশ্য ও যুগের সংকেত। তালিকার গতি পাঠকে ক্যাটালগের ভেতর দিয়ে হাঁটায়; এই কৌশল কবিতাটিকে লোকাল–কালচারের মানচিত্রে বসায়।
যাত্রার টপোস ও ‘ভুল’–এর সাহস
“ভুল” ট্রেন ধরে “ভুল” টিকিটে যাত্রা—কল্পিত ভুল নয়; ইচ্ছাকৃত সাহস। পরিচিত প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকলে নতুন গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। শিমুল মুস্তাফা এখানে যাত্রাকে আত্মমুক্তির পদ্ধতি হিসেবে দেখান; প্ল্যাটফর্মহীনতা তাই ভয়ের নয়, মুক্তির মেটাফর।
শৈলীগঠন: বাক্য, বিরাম ও পুনরাবৃত্তি
দীর্ঘ বাক্য ও প্রবাহ
যাত্রার মতোই বাক্যও কখনো দীর্ঘ—শ্বাসপ্রশ্বাসের টানে এগোয়। এতে “একদিন” শব্দটির মৃদু পুনরাবৃত্তি তরঙ্গ সৃষ্টি করে—বিলম্বিত কিন্তু নিশ্চিত প্রস্থান।
সংক্ষিপ্ত ঘোষণা
শেষাংশে বাক্য ছোট হয়—“আমি জানি আমার চলে যাওয়ায় এ শহরের কিছু যায় আসবে না”—এটি অনুরণন-ফাইনাল, যেখানে সত্য উচ্চারিত হলে নীরবতা তৈরী হয়।
তুলনামূলক পাঠ (Contextual Reading)
বাংলা কবিতায় শহর–প্রস্থান–স্মৃতি ধারাটি দীর্ঘ। “একদিন” এই ধারাকে সমকালীন কণ্ঠ দেয়—কেননা এখানে কেবল বিদায় নয়, নিজেকে পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি আছে। এই পুনর্গঠনেই “একদিন সত্যি সত্যিই চলে যাবো এই শহর ছেড়ে” লাইনটি ফোকাস কিওয়ার্ডের বাইরে এক প্রোগ্রাম্যাটিক ঘোষণা হয়ে ওঠে।
কেন এই কবিতাটি প্রাসঙ্গিক
অভিবাসন, শহর-বদল, পেশা-বদল, সম্পর্ক-বদল—সমকালীন জীবনে “প্রস্থান” নিয়মিত। তাই “একদিন” আধুনিক পাঠকের যাপনে সরাসরি সংযুক্ত। ব্যক্তির উপস্থিতি শহরের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী হলেও, ব্যক্তির সিদ্ধান্ত—নিজের সময়–নিজের ট্রেন—চিরকাল ব্যক্তিগত স্বাধীনতার মানচিত্র আঁকে।
SEO-ফোকাসড সারসংক্ষেপ
কবিতার নাম: একদিন | কবির নাম: শিমুল মুস্তাফা | প্রথম লাইন: একদিন সত্যি সত্যিই চলে যাবো এই শহর ছেড়ে। এই তিনটি ফোকাস কিওয়ার্ডকে প্রাকৃতিক ঘনত্বে বারবার উপস্থিত করা হয়েছে—পরিচিতি, সারাংশ, থিম, রূপক ও উপসংহারে—যাতে সার্চ-ইন্টেন্ট “কবিতার নাম + কবি + প্রথম লাইন” একসাথে মিললে কনটেন্ট সর্বোচ্চ প্রাসঙ্গিকতা পায়।
মূল টেকঅ্যাওয়ে
- প্রস্থান = পরাজয় নয়; স্ব-নিয়োজিত মুক্তি।
- শহর চরিত্র; মানুষ ক্ষণস্থায়ী, স্মৃতি স্থায়ী।
- ভুল ট্রেন = সাহস; অনিশ্চয়তা = সম্ভাবনা।
কিওয়ার্ড সারি (LSI/semantic)
একদিন কবিতা বিশ্লেষণ, শিমুল মুস্তাফা কবিতা, শহর ও প্রস্থান কবিতা, ভুল ট্রেন রূপক, প্ল্যাটফর্মহীন স্টেশন প্রতীক, নগর স্মৃতি, বাংলা আধুনিক কবিতা ব্যাখ্যা
মেটা ডেসক্রিপশন
শিমুল মুস্তাফার “একদিন” কবিতার বিশ্লেষণ—প্রস্থান, সময়, মায়া ও স্মৃতির থিম; রূপক–প্রতীক, প্রথম লাইন “একদিন সত্যি সত্যিই চলে যাবো এই শহর ছেড়ে” সহ।
FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)
কবিতা “একদিন”-এর কেন্দ্রীয় থিম কী?
প্রস্থান ও অনিত্যতা—শহরের স্মৃতি সত্ত্বেও নিজের সত্তাকে নতুন গন্তব্যে পাঠানোর স্বাধীন সিদ্ধান্ত।
“ভুল ট্রেন” রূপকের তাৎপর্য কী?
অপরিচিতের দিকে ইচ্ছাকৃত যাত্রা; নিরাপত্তাছাড়া সম্ভাবনার দিকে এগোনো—সাহসের প্রতীক।
“প্ল্যাটফর্মহীন অজানা স্টেশন” কী বোঝায়?
অচেনা ভবিষ্যৎ—স্থির নিরাপত্তা নেই, কিন্তু মুক্তির বিস্তৃত পরিসর আছে।
প্রথম লাইন “একদিন সত্যি সত্যিই…” কেন ফোকাস কিওয়ার্ড?
এটি কবিতার সারবক্তব্য; বিদায়, সময়, মায়া ও নগর-সত্তার সংঘাতকে এক বাক্যে ধারণ করে।
কবিতাটি কোন সাহিত্যধারায় পড়ে?
আধুনিক বাংলা কবিতা; নগর-স্মৃতি, আত্মজিজ্ঞাসা ও অস্তিত্ববাদী স্বরের সমাহার।
অভ্যন্তরীণ লিঙ্ক (Internal Links)
ক্রেডিট
© Kobitarkhata.com — কবি: শিমুল মুস্তাফা | ফোকাস কিওয়ার্ড: একদিন, শিমুল মুস্তাফা, একদিন সত্যি সত্যিই চলে যাবো এই শহর ছেড়ে