প্রিয়তমাসু – তারাপদ রায়

অনেকদিন পর কাগজ-কলম নিয়ে বসে
প্রথম একটা চাঁদের ছবি আঁকি, সঙ্গে কিছু মেঘ।

তারপর যথেষ্ট হয়নি ভেবে গোটা তিনেক পাখি,
ক্রমশ একটা দেবদারু ও কয়েকটা কলাগাছ,
অবশেষে অনেকগুলি ছানাসহ একটা বেড়াল,
এইসব এঁকে এঁকে তবুও
কাগজের নীচে চার আঙুল জায়গা বাকি থাকে :
সেখানে প্রথমে লিখি, শ্রীচরণেষু
তার নীচে সবিনয় নিবেদন।

এবং কিছুক্ষণ পরে
সবিনয় নিবেদন কেটে লিখি প্রিয়তমাসু।
এবং একটু পরেই বুঝতে পারি
জীবনে এই প্রথম, প্রথমবার প্রিয়তমাসু লিখলাম।

প্রিয়তমাসু,
তুমি তো জানো না
জীবনে তোমাকে কোনদিন ঠিকমতো সম্বোধন করা হলো না।

প্রিয়তমাসু,
তুমি তো জানো না
জীবনে তোমাকে কোনোদিন ঠিকমতো ভালোবাসা হলো না।
শুধু হিজিবিজি ছবি, চাঁদ, মেঘ,
সবিনয় নিবেদন কাটাকুটি করে চিরদিন তোমার কাছে পৌঁছোনো।

প্রিয়তমাসু – তারাপদ রায় | বাংলা প্রেমের ব্যতিক্রম কবিতা

“প্রিয়তমাসু” কবিতাটি বাংলা আধুনিক কবিতার ধারায় একটি স্বাতন্ত্র্যপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। লেখক তারাপদ রায় একজন খ্যাতিমান কবি যিনি তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ এবং নরম আবেগের অনন্য মিশ্রণ দিয়ে বাংলা সাহিত্যে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। এই কবিতায়, কবি এক দাম্পত্য জীবনের অপূর্ণতা এবং অনুভবহীনতার গল্প বলছেন, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি অভিমানী পুরুষের অন্তর্দহন। এই কবিতার মাধ্যমে ভালোবাসা, না বলা কথা, অভিমান, আত্মদ্রোহ এবং জীবনের এক নির্মম সত্য প্রকাশ পেয়েছে, যা পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

কবিতার শুরুতে কবি একটি কল্পনার জগৎ আঁকেন—চাঁদ, মেঘ, পাখি, গাছ, বেড়াল—সবকিছুতেই যেন এক অব্যক্ত ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি। কিন্তু এই দৃশ্যমান জগৎ পার হয়ে যায় যতক্ষণ না ‘প্রিয়তমাসু’ সম্বোধনটি উঠে আসে। “শ্রীচরণেষু” কিংবা “সবিনয় নিবেদন”-এর বদলে যখন কবি প্রথমবারের মতো হৃদয়ের প্রকৃত ডাক “প্রিয়তমাসু” উচ্চারণ করেন, তখন সেই মুহূর্তটাই হয়ে ওঠে কবিতার ক্লাইম্যাক্স। এটি শুধুই একটি সম্বোধন নয়—এটি এক দাম্পত্য জীবনের অপূর্ণতা এবং অনুশোচনার বহিঃপ্রকাশ।

কবিতার মূল আবেগটি দাঁড়িয়ে আছে এই বোধের ওপর যে, জীবনে কোনোদিন প্রিয়জনকে সঠিকভাবে সম্বোধন করা হয়নি, কিংবা ভালোবাসা প্রকাশ করার মতো ভাষা খুঁজে পাওয়া যায়নি। “তুমি তো জানো না—জীবনে তোমাকে কোনোদিন ঠিকমতো ভালোবাসা হলো না।” এই সরল অথচ গভীর বাক্যটি বলেই কবি যেন সমস্ত দাম্পত্য নীরবতার মুখোশ সরিয়ে ফেলেন।

এই কবিতায় ব্যঙ্গ নেই, আছে পরিহাস—নিজের জীবনের অপূর্ণতা নিয়ে এক নিঃসঙ্গ হাসি। এর মাধ্যমে তারাপদ রায় আধুনিক নাগরিক সম্পর্কের যে সংকট এবং ভারমুক্ত দূরত্ব দেখিয়েছেন, তা আজও সমান প্রাসঙ্গিক। বাংলা সাহিত্যে এমন কবিতা বিরল যা একই সঙ্গে পাঠককে হাসায়, ভাবায় এবং শেষে বিষণ্ন করে তোলে।

“প্রিয়তমাসু” কবিতাটি আবৃত্তির জন্যও অত্যন্ত উপযোগী। নাট্যরূপেও এটি উপস্থাপন করা যায়, যেখানে একজন অভিনেতা একাকী মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজের অনুভবের কথাগুলো বলে যায়, আর প্রতিটি শব্দ দর্শকের মনে আঘাত করে। এটি এমন একটি কবিতা, যা না বললেও চেনা, না শুনলেও অনুভবযোগ্য।

সার্বিকভাবে, “প্রিয়তমাসু – তারাপদ রায়” কেবল একটি কবিতা নয়, এটি একটি অনুভবের দলিল—যেখানে ভাষার সীমাবদ্ধতা, মনের জটিলতা, এবং ভালোবাসার চুপ থাকা কথাগুলো একসঙ্গে মিশে যায়। কবিতাটি আধুনিক কবিতা পাঠকদের জন্য যেমন প্রিয়, তেমনি SEO-প্রসঙ্গে এটিকে ফোকাস করা যায় বাংলা ব্যতিক্রম প্রেমের কবিতা, সম্পর্কের কবিতা এবং আবেগময় আধুনিক কবিতা হিসেবেও।

ফোকাস কীওয়ার্ডসমূহ:

  • প্রিয়তমাসু
  • তারাপদ রায়
  • বাংলা আধুনিক কবিতা
  • প্রেমের কবিতা
  • দাম্পত্য সম্পর্কের কবিতা
  • আবেগময় বাংলা কবিতা
  • বাংলা ব্যতিক্রম কবিতা
  • SEO ফ্রেন্ডলি বাংলা কবিতা

এই SEO ব্লকটি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের উদ্দেশ্যে তৈরি, যাতে বাংলা কবিতাপ্রেমী পাঠকেরা সহজে খুঁজে পান “প্রিয়তমাসু – তারাপদ রায়” কবিতাটি।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x