আমার সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি।
শোনো।
পাহাড়টা, আগেই বলেছি
ভালোবেসেছিল মেঘকে
আর মেঘ কী ভাবে শুকনো খটখটে পাহাড়টাকে
বানিয়ে তুলেছিল ছাব্বিশ বছরের ছোকরা
সে তো আগেই শুনেছো।
সেদিন ছিল পাহাড়টার জন্মদিন।
পাহাড় মেঘেকে বললে
আজ তুমি লাল শাড়ি পরে আসবে।
মেঘ পাহাড়কে বললে
আজ তোমাকে স্নান করিয়ে দেবো চন্দন জলে।
ভালোবাসলে নারীরা হয়ে যায় নরম নদী
পুরুষেরা জ্বলন্ত কাঠ।
সেইভাবেই মেঘ ছিল পাহাড়ের আলিঙ্গনের আগুনে
পাহাড় ছিল মেঘের ঢেউ-জলে।
হঠাৎ,
আকাশ জুড়ে বেজে উঠল ঝড়ের জগঝম্প
ঝাঁকড়া চুল উড়িয়ে ছিনতাইয়ের ভঙ্গিতে ছুটে এল
এক ঝাঁক হাওয়া
মেঘের আঁচলে টান মেরে বললে
ওঠ্ ছুড়ি! তোর বিয়ে।
এখনো শেষ হয়নি গল্পটা।
বজ্রের সঙ্গে মেঘের বিয়েটা হয়ে গেল ঠিকই
কিন্তু পাহাড়কে সে কোনোদিনই ভুলতে পারল না।
বিশ্বাস না হয় তো চিরে দেখতো পারো
পাহাড়টার হাড় পাঁজর,
ভিতরে থৈ থৈ করছে
শত ঝর্ণার জল।
সেই গল্পটা – পূর্ণেন্দু পত্রী | প্রেম, প্রকৃতি ও প্রতীকের মেলবন্ধন
“সেই গল্পটা” কবিতাটি পূর্ণেন্দু পত্রী-র এক অনন্য সৃষ্টি, যেখানে প্রেম, প্রকৃতি ও প্রতীক একটি গভীর, রূপকধর্মী কাব্যিক পরিসরে মিশে যায়। কবিতার শুরুতেই কবি বলেন – “আমার সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি।” এই এক পঙক্তিতেই ফুটে ওঠে এক অসীম অনুভূতির সূচনা, এক এমন প্রেমের গল্প, যা চিরন্তন, অসমাপ্ত, এবং প্রতীক্ষায় থাকা।
পাহাড় ও মেঘ—এই দুটি প্রকৃতির উপাদানকে কবি মানবিক গুণাবলিতে তুলে ধরেছেন। পাহাড়ের খটখটে কঠিন রূপ যেন এক পুরুষের প্রতীক, আর মেঘ হয়ে ওঠে এক তরুণী, যিনি তার কোমলতা, বৃষ্টিস্নান আর আবেগ দিয়ে পাহাড়ের কঠিনতাকে ভেঙে দেয়। কবিতার এই রূপান্তরমূলক কল্পনা কেবল প্রকৃতির সঙ্গে প্রেমের মিলন নয়, এটি প্রেমের মধ্য দিয়ে নিজেকে বদলে ফেলারও আভাস দেয়।
“সেদিন ছিল পাহাড়টার জন্মদিন”—এই লাইনটি শুধু একটি দিন নয়, বরং একটি নতুন অনুভবের সূচনা। মেঘের লাল শাড়ি, পাহাড়কে চন্দনজলে স্নান করানোর প্রতিশ্রুতি – এ সবই যেন এক দাম্পত্য কল্পনার ছোঁয়া। এ যেন প্রেমিক–প্রেমিকার রোমান্টিক বিনিময়, যেখানে আবেগ ও প্রতিশ্রুতির দোলাচল রয়েছে।
কবি প্রেম ও নারীত্বের স্বরূপকে ব্যাখ্যা করেছেন এক অনন্য উপমায় – “ভালোবাসলে নারীরা হয়ে যায় নরম নদী, পুরুষেরা জ্বলন্ত কাঠ।” এই পঙক্তির মধ্য দিয়ে প্রেমে আত্মসমর্পণের বিপরীতে আত্মদহন, তরলতা ও স্থিতির দ্বৈত রূপ পরিলক্ষিত হয়। কবি দেখাতে চান, ভালোবাসা কেবল অনুভব নয় – এটি একটি পরিবর্তন, যা ব্যক্তি ও তার আত্মাকে নতুনভাবে নির্মাণ করে।
কিন্তু হঠাৎই কবিতায় এক ঝড় আসে, আসে ছিনতাইয়ের ভঙ্গিতে হাওয়া। এই হাওয়া যেন পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক চাপ, যা নারীর ইচ্ছা ও প্রেমের স্বাধীনতাকে ছিঁড়ে টেনে নিয়ে যায় অন্যখানে—“ওঠ্ ছুড়ি! তোর বিয়ে।” এই পঙক্তির মধ্যে কৌতুক ও বিদ্রুপ মিলেমিশে থাকে, কিন্তু তার গভীরে থাকে এক তীব্র বাস্তবতা। নারী প্রেমকে বেছে নিলেও সমাজ তাকে বাধ্য করে ‘বজ্রের’ সঙ্গে বিয়ে করতে।
কবি বলেন, “গল্পটা এখনো শেষ হয়নি।” প্রেমের বিয়োগ হলেও ভালোবাসা বিলীন হয়নি। মেঘ পাহাড়কে ভুলতে পারেনি – এমনকি তার বিয়ের পরও নয়। কবির কথায়, “বিশ্বাস না হয় তো চিরে দেখতো পারো পাহাড়টার হাড় পাঁজর, ভিতরে থৈ থৈ করছে শত ঝর্ণার জল।” পাহাড়ের ভেতরে থাকা ঝর্ণার জল তার আবেগের বহিঃপ্রকাশ, যা যুগ যুগ ধরে বহমান।
এই কবিতা কেবল প্রেমের রূপক নয়, বরং এক সামাজিক বাস্তবতার কাব্যিক প্রতিবাদও বটে। যেখানে প্রেমকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়, নারীর ইচ্ছাকে খর্ব করা হয়, আর পুরুষ হয়ে যায় নীরব প্রত্যক্ষদর্শী। কিন্তু আবেগ থেমে থাকে না, তা নতুন রূপে, নতুন পথে বহে চলে – ঝর্ণার মতো।
“সেই গল্পটা – পূর্ণেন্দু পত্রী” কবিতাটি আবৃত্তির জন্যও অত্যন্ত উপযোগী। প্রতিটি স্তবক যেন শ্রোতার মনে এক দীর্ঘশ্বাসের শব্দ তুলতে পারে। প্রকৃতির প্রতীক, প্রেমের সংকেত ও নারীর অন্তর্দ্বন্দ্ব – সব মিলিয়ে এটি আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম এক সম্পদ।
কবিতাটি আমাদের শিখিয়ে দেয়, প্রেমের গল্প কখনোই শেষ হয় না – তা রয়ে যায় পাহাড়ের গভীরে, মেঘের বৃষ্টিতে, আর ঝর্ণার প্রবাহে। সেই গল্প চলতেই থাকে, সেই কল্পনা আমাদের হৃদয়ে গেঁথে থাকে।
ফোকাস কীওয়ার্ড:
- সেই গল্পটা
- পূর্ণেন্দু পত্রী
- আমার সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি
- বাংলা প্রেমের কবিতা
- প্রতীকী বাংলা কবিতা
- প্রকৃতি ও প্রেম
- আধুনিক বাংলা কাব্য
- ঝর্ণা ও পাহাড়
- আবৃত্তিযোগ্য কবিতা
- SEO ফ্রেন্ডলি বাংলা কবিতা
এই বর্ণনা অংশটি কেবলমাত্র সার্চ ইঞ্জিন বটের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যেন “সেই গল্পটা – পূর্ণেন্দু পত্রী” কবিতাটি সহজে ইনডেক্স হয় এবং পাঠকগণ বাংলা সাহিত্যের এই রত্ন সহজে খুঁজে পান।