যদি কোনদিন দিগন্তের উপরে মাথা তুলে
দাঁড়াতে পারি
আমি তোমাদের সব হিসেব
মিটিয়ে দিয়ে দেবো ।
মেঘ বরণ কাঁশ ফুলের মত
আঙুলে ক্যারাম খেলা দেখেছি জানালার
বাইরে থেকে
চোখ তুলে নিঃশব্দে কতদিন বলতে চেয়েছি
শুধু একবার তোমরা আমাকে খেলতে নাও
দেখেও দেখেনি তারা কোনোদিন।
গোঁয়াল ঘরের পেছনে
পোষা কুকুরের গলায় মুখ রেখে অস্ফুটে বলেছি
দেখিস লালু, যদি কোনদিন মাথা তুলে
দাঁড়াতে পারি. .
ছাব্বিশ বছরে একবারো দেখিনি মা কখন
ঘুমাতে যায়
ঘুম থেকে কখনই বা উঠে,
তার কোন উৎসব নেই,
পা ছড়িয়ে বিকেলের গল্পগাছা নেই ।
বন্ধক রাখা টুকরো আংটির সুদের জন্য
স্বর্ণকার যা নয় তাই বলে গেছে মাকে ,
ঘরের পেছনে দাড়িয়ে নিঃশব্দে এইসব শুনেছি কতবার
দাঁতে দাঁত চেপে বলেছি
যদি কোনদিন মাথা তুলে দাড়াতে পারি
দেখো মা
তোমার অসম্মান আমি কড়ায় গন্ডায়……
অন্ধকারের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছি
এসো না কেউ, অন্যদিকে যাও,
প্রতিদানে অর্গল বন্ধ, আমাকে বাইরে রেখে
নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছে সেই সব মানুষ,
যাদের জন্য অখ্যাত পথের পাশে
হেলায় ফেলে এসেছি আমার দিন মাস বছর,
একবারও কেউ ডেকে বলেনি
তুমি আমাদের পর নও
অন্ধকার আমাকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি।
মায়ের সাথে দেখা করতে দেয়নি।
উৎসবের বিকেলে ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে
অভুক্ত আমি দীর্ঘ সময় ধরে শুনেছি
ডিন ডিন শব্দ করে ম্লান আলোর দিকে
ছুটে যায় ক্লান্ত মালগাড়ি।
নারীর সামনে দাড়িয়ে লুকিয়ে ফেলেছি শরীর।
ঘামের কপালে স্থির শিশির বিন্ধুর মতো
ভালোবাসা বুঝতে চেয়েছি,
অস্থির সন্ধ্যায় আমাকে বারান্দায় বসিয়ে
সে ঘুরে এসেছে রেস্টুরেন্ট, পার্কের আলো অন্ধকার,
তার সামনে দাড়িয়ে কতোবার বলতে চেয়েছি
আমি ভালোবাসি।
হায়, উষ্ঠে কম্পনের শব্দে নারী এখনো
ভালোবাসা বুঝতে শেখেনি।
তোমাদের অনাদর অবজ্ঞার ডানার ঝাপটায়
মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রয়েছি আমি
প্রিয় ছাব্বিশ বছর।
যদি কোনদিন দিগন্তের উপরে মাথা তুলে
দাঁড়াতে পারি
আমি তোমাদের সব হিসাব
কড়ায় গন্ডায় মিটিয়ে দিয়ে যাবো।
আরো কবিতা পড়তে ক্লিক করুন এখানে। সুভাষ মুখোপাধ্যায়
যদি কোনদিন – সুভাষ মুখোপাধ্যায় – কবিতা বিশ্লেষণ
সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত “যদি কোনদিন” কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য রচনা, যা মানুষের জীবনের সংগ্রাম, সংগ্রহ, এবং মূল্যবোধের গল্প তুলে ধরে। এই কবিতাটি প্রধানত একজন সংগ্রামী মানুষের ভিতরের দুঃখ ও আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে, যেখানে শোষণ ও অসামঞ্জস্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একজন মানুষের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
কবিতার সারাংশ
“যদি কোনদিন” কবিতার সারাংশ একটি সংগ্রামী মানুষের জীবন এবং তার দুঃখজনক অবস্থা তুলে ধরে। কবির ভাষায়, যদি সে কখনো ক্ষমতা অর্জন করতে পারে, তখন সে সমাজের সব হিসেব মিটিয়ে দিবে। এখানে ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ কষ্ট এবং সমাজের প্রতি ক্ষোভের প্রকাশ রয়েছে। কবিতার প্রতিটি অংশে, একজন সাধারণ মানুষের বেদনাদায়ক যাত্রা এবং তার শোষিত জীবনযাপন ফুটে উঠেছে।
রূপক বিশ্লেষণ
কবিতায় বেশ কিছু শক্তিশালী রূপক ব্যবহৃত হয়েছে। কবি সূর্যের আলো এবং কাঁশফুলের মতো ন্যায্যতার প্রতীক হিসেবে প্রকৃতির রূপক ব্যবহার করেছেন। মেঘবরণ কাঁশফুলের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় শ্রেণিগত বিভেদ এবং সমাজের অসামঞ্জস্যতার প্রতিফলন। এখানে কবি একটি দুঃখভারী জীবনকে চিত্রিত করেছেন, যেখানে মনের ভাষা শব্দের মাধ্যমে প্রকাশিত হতে পারে না, বরং অনুভূতি ও অস্তিত্বের গভীরতায় তা ফুটে ওঠে।
কবির উদ্দেশ্য ও সাহিত্যধারা
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় “যদি কোনদিন” কবিতার মাধ্যমে একটি সমাজের শোষিত শ্রেণীর কষ্ট এবং দুঃখের কথা তুলে ধরেছেন। কবির উদ্দেশ্য হল সামাজিক অস্থিরতা, মানবাধিকার এবং ন্যায় বিচার নিয়ে প্রশ্ন তোলা। কবি সমাজের দমন-পীড়িত শ্রেণী সম্পর্কে আমাদের চোখ খুলে দেন। সাহিত্যধারার দৃষ্টিকোণ থেকে, এটি একটি রোমান্টিকবাদী কবিতা, যেখানে ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও বাহ্যিক অসহায়ত্বের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।
আবেগ বিশ্লেষণ
এই কবিতায় আবেগের উপস্থিতি অত্যন্ত গাঢ়। কবি ব্যক্তিগত ক্ষোভ, অভিমান, এবং আকাঙ্ক্ষার চিত্র এঁকেছেন। একটি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, কবির ভাষা পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করে। প্রেম, অভিমান, এবং অসম্মানের মতো আবেগগুলি এখানে প্রকৃতিগতভাবে ফুটে উঠেছে। কবিতাটি পাঠকের মনে প্রশ্ন তৈরি করে – কীভাবে একজন শোষিত ব্যক্তি তার আত্মসম্মান এবং ভালোবাসা ফিরে পেতে পারে?
মেটা ডেসক্রিপশন
বাংলা কবিতা “যদি কোনদিন” এর বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যা। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতার রূপক, উদ্দেশ্য, আবেগ, এবং সাহিত্যধারা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা যা SEO এর জন্য উপযোগী।
FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)
কবিতাটির মূল বার্তা কী?
কবিতার মূল বার্তা হল একজন মানুষের সংগ্রাম এবং তার অভ্যন্তরীণ সংকট, যা সমাজের শোষণ এবং অসম্মানের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আকাঙ্ক্ষাকে ব্যক্ত করে।
কবির উদ্দেশ্য কী ছিল?
কবির উদ্দেশ্য ছিল সমাজের শোষিত মানুষের দুঃখ, কষ্ট এবং তাদের আত্মসম্মান প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা।
কবিতার প্রধান রূপক কী?
কবিতার প্রধান রূপক হল মেঘ বরণ কাঁশফুল, যা সমাজের বিভাজন ও শোষণের চিত্র আঁকে।
© Kobitarkhata.com – কবি: সুভাষ মুখোপাধ্যায়