কবিতার খাতা
মা বলল, শিশুকে – মল্লিকা সেনগুপ্ত।
তুই না থাকলে আজ
ঝাঁকি মেরে জীবনটা দেখতাম আরও একবার
তোর ছোট ছোট হাত শরীরের সব চেয়ে ভালবাসা হয়ে
লেগে না থাকলে সব জ্বালিয়ে দিতাম,
নিজেকে নিলাম করে কিনে আনতাম আজ আনন্দগোলক,
পাখি কিনে এক এক করে ছিঁড়ে ফেলতাম ডানা,
অথবা ঘুঙুর পায়ে উঠতাম বাইজি কোঠায়
রাত্রি দশটায় একা বাইপাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
দেখতাম, হিরো হন্ডা থেকে নেমে দৈত্যদানবের।
একে একে নরকের দরজা খুলছে
শিশু বলল, টিউব লাইটের মতো জ্বলে দৈত্যদের দাঁত,
তোমাকে কামড়ে খেয়ে নেবে, ওমা, পালাও পালাও।
ছত্রিশ বছর ধরে সন্তর্পণে পালিয়ে এসেছি
গৃহঘটে ফুটো ছিল, তাও সোনা, বুঝতে পারিনি
কুকুর যে ভাবে মাটি বিস্ফারিত করে দুই পায়ে,
আমিও তেমন করে সম্পদের খোঁজে ওই ভাণ্ডার খুঁড়েছি
যদি কোনও স্বর্ণমুদ্রা…
এক ছিটে ভালবাসা যদি আজও পড়ে থাকে নীচে…
মা আমি তোমাকে ভালবাসি, ডগি, পিংকি, কুটুস
আয়া আর ঠাকুমাও, শিশু বলল, ‘বাবা ভালবাসে
আসলে দুজন ভাল মানুষের ভালবাসাটাও
স্নান হয়ে আসে কোনও বিষণ্ণ বিকেলে
বোকা সেই মেয়েটার চোখের সামনে
হঠাৎ আগ্নেয়শিলা ফেটে যায় ক্রোধে ও বিস্ময়ে
তোকে ছাড়া কাকে বলি, ছোট্ট সকাল!
সকাল বললে কেন? আমি জল- শিশুটির গভীর বিশ্বাস
জলের শুশ্রূষা নিতে ডুব দিই তোরই গভীরে
শূন্য আঁজলায় ওঠে তোর ছোট মুখ
তুই না থাকলে সোনা, কবেই যে তলিয়ে যেতাম
শিশুটি বলল, ইস, বললেই হল, আমি টেনে আনতাম,
জানো না আসলে আমি স্পাইডারম্যান!
তা হলে সমুদ্রে ভেলা ভাসিয়ে ভাসিয়ে
খুঁজে বেড়াতাম বুনো মানুষের দ্বীপ,
শাড়ি জামা অলংকার, ‘উনিশে এপ্রিল’
শেহনাজ, রেভলন, গার্সিয়া মার্কেজ
পরিবার পরিবার খেলা ভেঙে দলছুট মেয়ে
পুরুষালি সভ্যতার চাঁদমারি থেকে বহু দূরে
কাঁচা মাংস দাঁতে ছিঁড়ে তুলতাম তির ও ধনুক
তুই যদি সভ্যতার অংশ না হতি, ছোট শিশু!
শিশুটি বলল, মা, মা, চল না বেড়াতে-
চল না দুজনে মিলে অন্যগ্রহে বসতি বানাই
তুই আমি ঝড়বৃষ্টি সমুদ্র পাহাড়
তোর স্বপ্ন-জগতের ডোরা বাঘ, রাক্ষস খোক্ষস
লিলিপুট রাজপুত্র, ছোট্ট গালিভার
চাঁদের পাহাড়ে হবে আমাদের সৈন্য সমাবেশ
সে বলল, যুদ্ধ হলে আমরাই জিতে যাব, তাই না বলে।
না, যুদ্ধ না, অন্য কিছু, অনন্য কোথাও
চল না পালিয়ে গিয়ে ঢুকে পড়ি ল্যাবরেটারিতে
নাড়ি ছেঁড়া ভালবাসা, তাও জানি শাশ্বত হবে না
বয়স বাড়লে তুই ছিটকে পড়বি দূরে, আর
বেনোজল মানুষেরা আমাদের মধ্যে ঢুকে যাবে
ও বলল, ঢুকতেই দেব না, দেখো, কত আদর করছি…
তোর গালে গাল দিয়ে এই যে এখন
আদর আদর শুধু, ঠিক এই ভাবে
চল টেস্টটিউবের মধ্যে ঢুকে প্রার্থনা জানাই
গবেষণাগার, ওগো বিজ্ঞান ঠাকুর
অলৌকিক রসায়নে অজড় অক্ষয় করো এই ভালবাসা।
আরো কবিতা পড়তে এখানে ক্লিক করুন। মল্লিকা সেনগুপ্ত।