তার চেয়ে- নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

কবিতা “তার চেয়ে” – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী: একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর “তার চেয়ে” বাংলা সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য আধুনিক কবিতা। “সকলকে জ্বালিয়ে কোনো লাভ নেই। তার চেয়ে বরং আজন্ম যেমন জ্বলছ ধিকিধিকি, একা, দিনরাত্রি” এই প্রথম লাইনগুলি দিয়ে শুরু হওয়া কবিতাটি একাকীত্ব, আত্মত্যাগ এবং আত্মসন্ধানের গভীর দার্শনিক বিষয়কে প্রতীকীভাবে ফুটিয়ে তোলে। কবিতাটি মানব জীবনের সংগ্রাম, একাকীত্বের মাঝেও সুন্দরকে আবিষ্কারের এবং আত্মিক শক্তির গভীর অনুভূতি প্রকাশ করে।

কবিতার পূর্ণাঙ্গ সারমর্ম ও মূল বিষয়বস্তু

“তার চেয়ে” কবিতাটির মূল উপজীব্য হলো আত্মিক সংগ্রাম এবং একাকীত্বের মধ্যে দিয়ে আত্মউন্নয়নের দর্শন। কবি বলেছেন অন্যদের ক্ষতি করার চেয়ে নিজে একাকী জ্বলতে থাকা, নিজে ক্ষয় হওয়া অনেক ভালো। কবিতাটি জীবনের কঠিন বাস্তবতা এবং একাকীত্বের মধ্যে থেকেও কিভাবে সুন্দরকে আবিষ্কার করা যায় সেই দর্শন নিয়ে আলোচনা করে। এটি একটি গভীর মানবিক ও দার্শনিক কবিতা যা পাঠককে আত্মচিন্তায় উদ্বুদ্ধ করে।

কবিতার কাঠামোগত দিক: ছন্দ, অলংকার ও ভাষাশৈলী

কবিতাটি মুক্তছন্দে রচিত, যা কবির দার্শনিক চিন্তার স্বতঃস্ফূর্ত প্রবাহকে প্রতিফলিত করে। ভাষা অত্যন্ত চিত্রধর্মী এবং প্রাঞ্জল। কবি বিভিন্ন ধরনের অলংকারের ব্যবহার করেছেন, যেমন: উপমা, রূপক এবং পুনরাবৃত্তি, যা কবিতাটির শব্দসৌন্দর্য ও গভীরতা বাড়িয়েছে। বিশেষ করে “জ্বলতে থাকা”, “ক্ষয়ে যাওয়া” এবং “নিয়তির ঘোমটা” এর মতো রূপকগুলি কবিতাটিকে একটি দৃঢ় দার্শনিক কাঠামো দিয়েছে।

প্রথম স্তবক: একাকী জ্বলার দর্শন

“সকলকে জ্বালিয়ে কোনো লাভ নেই। তার চেয়ে বরং আজন্ম যেমন জ্বলছ ধিকিধিকি, একা, দিনরাত্রি” – এই লাইন দিয়ে শুরু হওয়া প্রথম স্তবকটি কবির মূল দর্শন উপস্থাপন করে: অন্যদের ক্ষতি করার চেয়ে নিজে একাকীভাবে জ্বলতে থাকা উত্তম।

দ্বিতীয় স্তবক: সংগ্রামের ধারাবাহিকতা

“তেমনি করে জ্বলতে থাকো, জ্বলতে-জ্বলতে ক্ষয়ে যেতে থাকো, দিনরাত্রি, অর্থাৎ মুখের কশ বেয়ে যতদিন রক্ত না গড়ায়” – এই চরণগুলিতে কবি জীবনের সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার এবং নিজেকে উৎসর্গ করার দর্শন প্রকাশ করেছেন।

তৃতীয় স্তবক: অনিবার্য পরিণতির মুখোমুখি

“একদিন মুখের কশ বেয়ে রক্ত ঠিক গড়িয়ে পড়বে। ততদিন তুমি কী করবে? পালিয়ে-পালিয়ে ফিরবে নাকি?” – এই অংশে কবি জীবনের কঠিন বাস্তবতা এবং অনিবার্য পরিণতির মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন।

চতুর্থ স্তবক: দাঁড়িয়ে থাকার সাহস

“পালিয়ে-পালিয়ে কোনো লাভ নেই। তার চেয়ে বরং আজন্ম যেমন আছ, একা, পৃথিবীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে দিনরাত্রি” – এখানে কবি পালিয়ে বেড়ানোর বিপরীতে সাহসের সাথে মোকাবিলা করার কথা বলেছেন।

পঞ্চম স্তবক: নিয়তির রহস্য

“তেমনি করে জ্বলতে থাকো, জ্বলতে-জ্বলতে ক্ষয়ে যেতে থাকো, দিনরাত্রি, অর্থাৎ নিয়তি যতদিন ঘোমটা না সরায়” – কবি এখানে নিয়তি বা ভাগ্যের রহস্যময়তার কথা বলেছেন যা সময়到来之前 অজানা থাকে।

ষষ্ঠ স্তবক: নিয়তির মুখোমুখি

“নিয়তির ঘোমটা একদিন হঠাৎ সরবে। সরলে তুমি কী করবে? মুখে রক্ত, চোখে অন্ধকার নিয়ে তাকে বলবে নাকি ‘আর যেন না জ্বলি’?” – এই অংশে কবি ভাগ্যের সম্মুখীন হওয়ার এবং তার পরিণতি接受 করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন।

সপ্তম স্তবক: আত্মত্যাগের গরিমা

“না না, তা বোলো না। তার চেয়ে বরং বলো, ‘আমি দ্বিতীয় কাউকে না জ্বালিয়ে একা-একা জ্বলতে যে পেরেছি, সে-ই ভাল'” – শেষ স্তবকে কবি আত্মত্যাগের গরিমা এবং অন্যদের ক্ষতি না করে নিজে কষ্ট ভোগ করার মহানুভবতার কথা বলেছেন।

অষ্টম স্তবক: সুন্দরের স্বীকৃতি

“‘আগুনে হাত রেখে তবু বলতে যে চেয়েছি, ‘সবকিছু সুন্দর’- সে-ই ভাল।’ বলো যে, এ ছাড়া কিছু বলবার ছিল না” – কবিতাটির সমাপ্তি হয়েছে একটি আশাবাদী note সহ, যেখানে কষ্টের মধ্যেও সবকিছু সুন্দর বলতে পারার মানসিক শক্তির কথা বলা হয়েছে।

রূপক ও প্রতীক বিশ্লেষণ

কবিতায় বিভিন্ন শক্তিশালী রূপক ব্যবহার করা হয়েছে: “জ্বলতে থাকা” – জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার প্রতীক; “ক্ষয়ে যাওয়া” – আত্মত্যাগ এবং ত্যাগের প্রতীক; “নিয়তির ঘোমটা” – ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা এবং রহস্যের প্রতীক; “আগুনে হাত রাখা” – কষ্টের অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রতীক। এই সমস্ত রূপক মানব জীবনের গভীর দার্শনিক সত্যকে effectively表达 করে।

কবির উদ্দেশ্য ও সাহিত্যধারা

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সম্ভবত পাঠকদের কাছে জীবনসংগ্রামের একটি গভীর দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করতে চেয়েছেন, যেখানে অন্যদের ক্ষতি করার চেয়ে নিজে কষ্ট ভোগ করা更加 মহান। সাহিত্যধারায় এটি আধুনিক বাংলা কবিতার অন্তর্গত, বিশেষ করে those works that explore philosophical themes of existence, sacrifice, and human resilience. The poem falls within the tradition of modern Bangla poetry that focuses on existential questions and spiritual depth.

আবেগ বিশ্লেষণ

এই কবিতায় একাকীত্ব, সংগ্রাম, আত্মত্যাগ,但却一种 গরিমা এবং আশাবাদ ফুটে উঠেছে, যা পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করে। কবির আবেগ গভীর及জটিল, যা জীবনের কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত anyone এর কাছেই পরিচিত। Emotional landscape moves from isolation to acceptance, with undercurrents of philosophical resilience and ultimate optimism.

মেটা ডেসক্রিপশন

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর “তার চেয়ে” কবিতার পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ। কবিতার রূপক, উদ্দেশ্য এবং আবেগপূর্ণ বিশ্লেষণ যা SEO জন্য উপযোগী। কবিতার প্রথম লাইন: “সকলকে জ্বালিয়ে কোনো লাভ নেই। তার চেয়ে বরং আজন্ম যেমন জ্বলছ ধিকিধিকি, একা, দিনরাত্রি”।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)

কবিতাটি কোন সাহিত্যধারায় পড়ে?

এটি আধুনিক বাংলা কবিতার ধারায় অন্তর্গত, বিশেষভাবে those works that explore philosophical themes of existence and sacrifice.

কবিতার মূল রূপক কী?

“জ্বলতে থাকা” এবং “ক্ষয়ে যাওয়া” জীবন সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

কবিতাটির কেন্দ্রীয় theme কী?

কবিতাটির কেন্দ্রীয় theme হলো অন্যদের ক্ষতি করার চেয়ে নিজে একাকী সংগ্রাম করা এবং আত্মত্যাগের গরিমা।

কবিতাটির প্রথম লাইন কী?

কবিতাটির প্রথম লাইন: “সকলকে জ্বালিয়ে কোনো লাভ নেই। তার চেয়ে বরং আজন্ম যেমন জ্বলছ ধিকিধিকি, একা, দিনরাত্রি”

কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সম্পর্কে তথ্য

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী একজন বিখ্যাত আধুনিক বাংলা কবি, যিনি তার দার্শনিক depth এবং spiritual insights এর জন্য পরিচিত। তাঁর কবিতায় মানব অস্তিত্বের গভীর প্রশ্নগুলি frequently explored হয়। তিনি বাংলা সাহিত্যে একটি স্বতন্ত্র স্থান অধিকার করে আছেন।

© Kobitarkhata.com – কবি: নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

সকলকে জ্বালিয়ে কোনো লাভ নেই।
তার চেয়ে বরং
আজন্ম যেমন জ্বলছ ধিকিধিকি, একা,
দিনরাত্রি,
তেমনি করে জ্বলতে থাকো,
জ্বলতে-জ্বলতে ক্ষয়ে যেতে থাকো,
দিনরাত্রি,
অর্থাৎ মুখের
কশ বেয়ে যতদিন রক্ত না গড়ায়
.
একদিন মুখের কশ বেয়ে
রক্ত ঠিক গড়িয়ে পড়বে।
ততদিন তুমি কী করবে?
পালিয়ে-পালিয়ে ফিরবে নাকি?
.
পালিয়ে-পালিয়ে কোনো লাভ নেই।
তার চেয়ে বরং
আজন্ম যেমন আছ,একা,
পৃথিবীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে
দিনরাত্রি
তেমনি করে জ্বলতে থাকো,
জ্বলতে-জ্বলতে ক্ষয়ে যেতে থাকো,
দিনরাত্রি,
অর্থাৎ নিয়তি
যতদিন ঘোমটা না সরায়।
.
নিয়তির ঘোমটা একদিন
হঠাৎ সরবে।
সরে গেলে তুমি কী করবে?
মুখে রক্ত,চোখে অন্ধকার
নিয়ে তাকে বলবে নাকি “আর যেন না জ্বলি”?
.
না না, তা বেলো না।
তার চেয়ে বরং
বলো,”আমি দ্বিতীয় কাউকে
না জ্বালিয়ে একা-একা জ্বলতে যে পেরেছি,
সে-ই ভাল;
আগুনে হাত রেখে তবু বলতে যে চেয়েছি,
‘সবকিছু সুন্দর’-
সে-ই ভাল।”
বলো যে, এ ছাড়া কিছু বলবার ছিল না।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x