মানুষের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া চোখের জল
ভালো লাগে না আমার
সবচেয়ে বড় অপচয়ের নাম চোখের জল
অসহ্য, সরিয়ে নাও তোমার চোখ, আমি তাকাব না
খেতে দিতে না পেরে বাবা চলে গেলেন, মেঘলা আকাশ
মায়ের চোখ ফেটে সারাদিন শুধু জল নয়
যেন একজন নারী গলে গলে বেরিয়ে আসত ।
পাঁচ বছর বাদে ভাইকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ
মা, আমার অসহ্য লাগে চোখের জল । চুপ করো।
চোখের জলে লাগল জোয়ার, কথাটা দারুণ
কিন্তু মানে কি ?
একটা মানুষ চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ায়
দেয়াল থেকে হাতে তুলে নেয় টাঙ্গি
তারপর তুলে ধরে আকাশের দিকে
আকাশে কে থাকে ? ভগবান ?
পরিষ্কার একটা কথা বলি শোনো : তুমি গরিব
তোমার জন্য কোন ভগবান নেই
শনি পুজো না করে সেই টাকায়
কনডোম্ কেনো রাসকেল । রাতারাতি ভারতবর্ষ পাল্টে যাবে।
চোখের জলে কিছু হয় না
একটা জাতি উঠে দাঁড়ায় তিনটি কারণে :
মাথার জোরে, গায়ের জোরে, মনের জোরে ।
তোমরা যারা ভালো করে খেতে পাও না
তাঁদের চোখে এতো জল আসে কি করে ?
মাকেও দেখতাম যেটুকু খাবার জুটতো
ভাইবোনদের খাইয়ে নিজে চাঁচি মুখে দিয়ে
বাসন মাজতে মাজতে কাঁদতেন
গরিবের কি চোখের জল বেশি হয় ?
চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া চোখের জল
সহ্য করতে পারি না আমি
বাইপাসের ধারে একটা নগ্ন মেয়ের চোখ থেকে
জল গড়িয়ে পড়ল গালে
গাল থেকে একটা বিন্দু গিয়ে পড়ল স্তনের বোঁটায়
আমি অবচেতনের ঐশ্বর্য লিখতে আসিনি
আমার জামাটা খুলে তাঁকে দিই, বলি ওঠো
একটা কুলাঙ্গার তোমাকে ভালবেসে ফেলে চলে গেছে
তার জন্য তোমার জীবন শেষ হয়ে যেতে পারে না।
একটা জাতি উঠে দাঁড়ায়
একটা মানুষ উঠে দাঁড়ায় পরিষ্কার তিনটি কারণে
দরকার যেকোনো একটা জোর
হয় গায়ের নয় মাথার নয় মনের ।
তাজ বেঙ্গলের উল্টোদিকে, মাঝরাত্রে, একটি বালক
হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদছে
এই শালা কাঁদছিস কেন রে ?
ছুটে গিয়ে ভেতরে ঢুকে কামড়ে দিতে পারছিস না ?
আরো কবিতা পড়তে ক্লিক করুন। সুবোধ সরকার।
চোখের জল – সুবোধ সরকার | বাংলা কবিতা বিশ্লেষণ
সুবোধ সরকার রচিত “চোখের জল” বাংলা সাহিত্যের একটি শক্তিশালী সামাজিক-রাজনৈতিক কবিতা, যেখানে কবি দারিদ্র্য, সামাজিক অবিচার এবং মানবিক বেদনার বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদ তুলে ধরেছেন। কবিতাটির প্রথম লাইন “মানুষের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া চোখের জল ভালো লাগে না আমার” পাঠককে সাথে সাথেই এক কঠোর বাস্তবতার জগতে নিয়ে যায়।
কবিতার সারাংশ
এই কবিতায় কবি সমাজের দরিদ্র ও নিপীড়িত মানুষের চোখের জলের প্রতি তার রাগ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। কবি দেখিয়েছেন কীভাবে চোখের জল শুধু একটি আবেগ নয়, বরং এটি সামাজিক অবিচার ও দারিদ্র্যের প্রতীক। কবিতাটিতে রয়েছে গরীব মানুষের দৈনন্দন সংগ্রাম, পরিবারের成员দের হারানোর বেদনা, এবং সমাজের উচ্চবর্গের প্রতি তীব্র ক্ষোভ। কবি চোখের জলের পরিবর্তে সংগ্রাম ও বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন।
রূপক বিশ্লেষণ
কবিতায় “চোখের জল” একটি শক্তিশালী রূপক হিসেবে কাজ করেছে, যা দারিদ্র্য ও সামাজিক অবিচারের শিকার মানুষের passive suffering কে নির্দেশ করে। “টাঙ্গি” বিদ্রোহ ও প্রতিবাদের প্রতীক। “বাইপাসের ধারের নগ্ন মেয়ে” সমাজের প্রান্তিক মানুষের প্রতীক। “মাথার জোর, গায়ের জোর, মনের জোর” সামাজিক পরিবর্তনের তিনটি স্তম্ভের প্রতীক।
প্রধান রূপকসমূহ
চোখের জল – passive suffering এর প্রতীক; টাঙ্গি – বিদ্রোহের প্রতীক; নগ্ন মেয়ে – সমাজের প্রান্তিক মানুষের প্রতীক; বাইপাস – শহুরে marginalization এর প্রতীক; ভগবান – establishment এর প্রতীক; কনডোম – যৌনশিক্ষা ও সচেতনতার প্রতীক।
কবির উদ্দেশ্য ও সাহিত্যধারা
সুবোধ সরকার বাংলা সাহিত্যের একজন প্রগতিশীল ও বিদ্রোহী কবি, যিনি তার রাজনৈতিক সচেতনতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য পরিচিত। এই কবিতায় তার উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্র মানুষের passive suffering কে challenge করা এবং তাদের মধ্যে সংগ্রামের চেতনা জাগ্রত করা। এটি সামাজিক-রাজনৈতিক কবিতা এবং বিদ্রোহী কবিতার ধারায় রচিত, যেখানে কবি establishment এর বিরুদ্ধে সরাসরি challenge ছুঁড়ে দিয়েছেন।
আবেগ বিশ্লেষণ
কবিতায় তীব্র রাগ, ক্ষোভ, হতাশা, এবং সামাজিক পরিবর্তনের জন্য এক গভীর আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে। কবির ভাষায় “সবচেয়ে বড় অপচয়ের নাম চোখের জল” – এই লাইনের মধ্যে যে রাগ ও frustration ফুটে উঠেছে, তা পাঠককে গভীরভাবে নাড়া দেয়। “তোমরা যারা ভালো করে খেতে পাও না তাঁদের চোখে এতো জল আসে কি করে?” – এই প্রশ্নের মধ্যে সমাজের প্রতি যে bitter irony রয়েছে, তা পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগায়।
কবিতার কাঠামো বিশ্লেষণ
কবিতাটি মুক্ত ছন্দে রচিত, যেখানে প্রতিটি অংশ সমাজের একটি বিশেষ সমস্যা উপস্থাপন করে। কবিতার গঠনশৈলীতে রয়েছে narrative এবং argumentative style এর সমন্বয়। কবি personal experience কে political statement এ রূপান্তরিত করেছেন।
শৈলীগত বৈশিষ্ট্য
কবি direct এবং confrontational language ব্যবহার করেছেন। তাঁর শব্দচয়নে রয়েছে uncommon bluntness এবং political urgency। colloquial language এবং slang এর ব্যবহার কবিতাকে করেছে আরও impactful এবং mass-oriented।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট
এই কবিতায় ভারতবর্ষ বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের দারিদ্র্য, সামাজিক বৈষম্য এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির ছোঁয়া রয়েছে। কবি contemporary Indian society এর harsh realities কে তার কবিতার background হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এই কবিতার মাধ্যমে তিনি class struggle, religious superstition, এবং social inequality এর বিরুদ্ধে তার stance নিয়েছেন।
শিক্ষণীয় দিক
কবিতাটি পাঠককে শেখায় যে passive suffering কোন সমাধান নয়, বরং active resistance এবং struggle ই সামাজিক পরিবর্তন আনে। এটি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে দারিদ্র্য এবং সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে mental, physical, এবং intellectual strength – তিনটিরই প্রয়োজন।
মেটা ডেসক্রিপশন
সুবোধ সরকারের “চোখের জল” কবিতার সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ। কবিতার রূপক, ছন্দ, শৈলী ও সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে গভীর আলোচনা। প্রথম লাইন “মানুষের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া চোখের জল ভালো লাগে না আমার” সহ সমগ্র কবিতার ব্যাখ্যা।
FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)
কবিতাটির মূল বিষয়বস্তু কী?
কবিতাটির মূল বিষয়বস্তু হলো দারিদ্র্য, সামাজিক অবিচার এবং passive suffering এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। কবি চোখের জলের মাধ্যমে প্রকাশিত বেদনার পরিবর্তে সক্রিয় সংগ্রামের ডাক দিয়েছেন।
কবিতার প্রধান রূপকগুলি কী কী?
প্রধান রূপকগুলি হলো: চোখের জল, টাঙ্গি, নগ্ন মেয়ে, বাইপাস, ভগবান, এবং কনডোম – যারাそれぞれ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ের প্রতীক।
সুবোধ সরকারের কবিতার বৈশিষ্ট্য কী?
সুবোধ সরকারের কবিতায় সাধারণত রাজনৈতিক বিদ্রোহ, সামাজিক সচেতনতা, এবং প্রগতিশীল চেতনার প্রকাশ ঘটে। তাঁর ভাষা direct, provocative এবং politically charged।
কবিতাটির প্রথম লাইন কী?
কবিতাটির প্রথম লাইন: “মানুষের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া চোখের জল ভালো লাগে না আমার” যা সরাসরি পাঠককে কবিতার মূল mood এবং thematic concern এ নিয়ে যায়।
কবিতাটি কোন ধারার অন্তর্গত?
কবিতাটি আধুনিক বাংলা কবিতার রাজনৈতিক বিদ্রোহ ধারা এবং সামাজিক সচেতনতামূলক কবিতার অন্তর্গত, যেখানে কবি establishment এর বিরুদ্ধে সরাসরি challenge ছুঁড়ে দিয়েছেন।
কবিতাটির বিশেষত্ব কী?
কবিতাটির বিশেষত্ব হলো এর unapologetic political stance এবং direct confrontation। কবিতাটি traditional poetic sensibility কে challenge করে এবং mass language ব্যবহার করে।
কবিতাটির শেষের দিকের লাইনগুলোর তাৎপর্য কী?
কবিতাটির শেষের দিকের লাইনগুলো “ছুটে গিয়ে ভেতরে ঢুকে কামড়ে দিতে পারছিস না?” – এই প্রশ্নের মাধ্যমে কবি passive suffering এর পরিবর্তে active resistance এর আহ্বান জানিয়েছেন।
© Kobitarkhata.com – কবি: সুবোধ সরকার