কবিতার খাতা
একটি সংলাপ-সুভাষ মুখোপাধ্যায়
একটি সংলাপ – সুভাষ মুখোপাধ্যায়
কবিতার অংশ
মেয়ে: তুমি কি চাও আমার ভালবাসা ?
ছেলে: হ্যাঁ, চাই !
মেয়ে: গায়ে কিন্তু তার কাদা মাখা !
ছেলে: যেমন তেমনিভাবেই চাই ।
মেয়ে: আমার আখেরে কী হবে বলা হোক ।
ছেলে: বেশ!
মেয়ে: আর আমি জিগ্যেস করতে চাই ।
ছেলে: করো ।
মেয়ে: ধরো’ আমি কড়া নাড়লাম ।
ছেলে: আমি হাত ধরে ভেতরে নিয়ে যাব !
মেয়ে: ধরো’ তোমাকে তলব করলাম ।
ছেলে: আমি হুজুরে হাজির হব ।
মেয়ে: তাতে যদি বিপদ ঘটে ?
ছেলে: আমি সে বিপদে ঝাঁপ দেব ।
মেয়ে: যদি তোমার সঙ্গে প্রতারণা করি?
ছেলে: আমি ক্ষমা করে দেব ।
মেয়ে: তোমাকে তর্জনী তুলে বলব, গান গাও ।
ছেলে: আমি গাইব ।
মেয়ে: বলব,কোনো বন্ধু এলে তার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দাও।
ছেলে: বন্ধ করে দেব ।
মেয়ে: তোমাকে বলব, প্রাণ নাও ।
ছেলে: আমি নেব ।
মেয়ে: বলব, প্রাণ দাও ।
ছেলে: দেব ।
মেয়ে: যদি তলিয়ে যাই ?
ছেলে: আমি টেনে তুলবো ।
মেয়ে: তাতে যদি ব্যথা লাগে ?
ছেলে: সহ্য করব ।
মেয়ে: আর যদি থাকে বাধার দেয়াল ?
ছেলে: ভেঙ্গে ফেলব ।
মেয়ে: যদি থাকে একশো গিঠঁ ?
ছেলে: তাহলেও ।
মেয়ে: তুমি চাও আমার ভালবাসা ?
ছেলে: হ্যাঁ, তোমার ভালবাসা ।
মেয়ে: তুমি কখনোই পাবে না ।
ছেলে: কিন্তু কেন ?
মেয়ে: কারণ, যারা ত্রীতদাস আমি তাদের কখনই ভালবাসি না ।
কবিতার বিশ্লেষণ
সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের এই কবিতাটি প্রেম, সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত অনুভূতির একটি গভীর চিত্র। এখানে একটি মেয়ে এবং ছেলের মধ্যে একটি সংলাপ চলছে, যেখানে মেয়ে নানা শর্তে ছেলেকে তার ভালোবাসা দেওয়ার প্রশ্ন তুলে ধরছে, এবং ছেলে এসব শর্ত মেনে নিচ্ছে। কবিতার মাধ্যমে সুভাষ মুখোপাধ্যায় আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, প্রেম কখনো একপেশে হতে পারে না। এতে দুই পক্ষের আশা এবং দ্বন্দ্ব থাকতে পারে, যা সম্পর্কের মধ্যে গভীরতা সৃষ্টি করে। কবিতার মধ্যে প্রেমের প্রতি এক অদৃশ্য শক্তি এবং তার নিষ্ঠা অত্যন্ত প্রভাবশালীভাবে উঠে এসেছে।
প্রেমের শর্ত ও সম্পর্কের জটিলতা
কবিতায় প্রেমের শর্তগুলির মাধ্যমে একটি গভীর এবং জটিল সম্পর্কের পরিচয় পাওয়া যায়। মেয়ে তার ভালবাসার শর্তগুলো একের পর এক ছেলের কাছে তুলে ধরে, এবং ছেলেটি তা মেনে নেয়। এতে সম্পর্কের দুটি দিক প্রকাশ পায়—একটি পক্ষের আশা এবং অন্য পক্ষের প্রতিশ্রুতি। এই সম্পর্কের জটিলতাগুলি কবির ভাষায় এমনভাবে মূর্ত হয়ে ওঠে যে, পাঠক এই আবেগময় যাত্রার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পারেন। প্রেম শুধু একপেশে নয়, বরং দুইজনের মধ্যে গভীর বোঝাপড়া এবং পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি থাকে।
সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং প্রভাব
কবিতাটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপস্থাপনা নয়, এটি সমাজের প্রচলিত ধারণা এবং বাস্তবতাও উপস্থাপন করে। মেয়ে ছেলেকে বলছে, “যারা ত্রীতদাস আমি তাদের কখনই ভালবাসি না”, এখানে পুরুষশাসিত সমাজের প্রতি একটি প্রতিবাদ এবং নারীর ক্ষমতাকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কবিতাটি পাঠকদের মনে প্রেমের সম্পর্কের মধ্যকার শক্তির ভারসাম্য এবং শর্তসাপেক্ষতা সম্পর্কে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করে।
মেয়ে: তুমি কি চাও আমার ভালবাসা ?
ছেলে: হ্যাঁ, চাই !
মেয়ে: গায়ে কিন্তু তার কাদা মাখা !
ছেলে: যেমন তেমনিভাবেই চাই ।
মেয়ে: আমার আখেরে কী হবে বলা হোক ।
ছেলে: বেশ!
মেয়ে: আর আমি জিগ্যেস করতে চাই ।
ছেলে: করো ।
মেয়ে: ধরো’ আমি কড়া নাড়লাম ।
ছেলে: আমি হাত ধরে ভেতরে নিয়ে যাব !
মেয়ে: ধরো’ তোমাকে তলব করলাম ।
ছেলে: আমি হুজুরে হাজির হব ।
মেয়ে: তাতে যদি বিপদ ঘটে ?
ছেলে: আমি সে বিপদে ঝাঁপ দেব ।
মেয়ে: যদি তোমার সঙ্গে প্রতারণা করি?
ছেলে: আমি ক্ষমা করে দেব ।
মেয়ে: তোমাকে তর্জনী তুলে বলব, গান গাও ।
ছেলে: আমি গাইব ।
মেয়ে: বলব,কোনো বন্ধু এলে তার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দাও।
ছেলে: বন্ধ করে দেব ।
মেয়ে: তোমাকে বলব, প্রাণ নাও ।
ছেলে: আমি নেব ।
মেয়ে: বলব, প্রাণ দাও ।
ছেলে: দেব ।
মেয়ে: যদি তলিয়ে যাই ?
ছেলে: আমি টেনে তুলবো ।
মেয়ে: তাতে যদি ব্যথা লাগে ?
ছেলে: সহ্য করব ।
মেয়ে: আর যদি থাকে বাধার দেয়াল ?
ছেলে: ভেঙ্গে ফেলব ।
মেয়ে: যদি থাকে একশো গিঠঁ ?
ছেলে: তাহলেও ।
মেয়ে: তুমি চাও আমার ভালবাসা ?
ছেলে: হ্যাঁ, তোমার ভালবাসা ।
মেয়ে: তুমি কখনোই পাবে না ।
ছেলে: কিন্তু কেন ?
মেয়ে: কারণ, যারা ত্রীতদাস আমি তাদের কখনই ভালবাসি না ।
নারীবিাদী কবিতা পঢ়তে ক্লিক করুন এখানে। সুভাষ মুখোপাধ্যায়