আমি তোমার নাম দিলাম হিয়া- সুবোধ সরকার

আমি তোমার নাম দিলাম হিয়া – কবিতা | সুবোধ সরকার

আমি তোমার নাম দিলাম হিয়া – কবিতা | সুবোধ সরকার

“আমি তোমার নাম দিলাম হিয়া” কবিতাটি সুবোধ সরকারের একটি অমর রচনা যা বাংলা সাহিত্যের এক অত্যন্ত প্রভাবশালী কবিতা হিসেবে পরিচিত। এটি প্রেম, বেদনা, মানব অনুভূতির গভীরতা এবং দার্শনিক ভাবনার একটি অসাধারণ সংমিশ্রণ। কবিতাটি এমন একটি অবস্থান থেকে শুরু হয় যেখানে প্রেমের যন্ত্রণা এবং তার গা dark ় বাস্তবতা ফুটে ওঠে। এটি পাঠকদের এক গভীরভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করে, জীবন এবং সম্পর্কের মাঝে যে অস্থিরতা এবং সমঝোতা লুকিয়ে থাকে তা উদ্ঘাটন করে।

সুবোধ সরকার তার কবিতায় প্রেমের প্রকৃত রূপ তুলে ধরেছেন। তাঁর কবিতার প্রথমেই আসে সেই প্রেমিকের অস্থিরতা যা তাকে তার অবস্থা এবং অনুভূতি সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। কবিতাটির মাধ্যমে তিনি জীবনের প্রতিটি অনুভূতির এক গভীরতার সঙ্গে পাঠককে পরিচিত করেন। “আমি তোমার নাম দিলাম হিয়া” কবিতার নাম এবং কবির পরিচয় এক অনন্য শৈলীতে মিশে থাকে।

এই কবিতার প্রতিটি পংক্তি যেন প্রেম, অভ্যন্তরীণ যন্ত্রণার চিত্রায়ণ। কবির ভাষায় উঠে আসে এক প্রকার জীবনবোধ, যেখানে সম্পর্কের জটিলতা এবং ভালোবাসার প্রতিফলন ঘটে। কবিতার প্রথম বাক্যই তা স্পষ্ট করে দেয়: “তোমাকে ভালোবাসলে যত সর্বনাশ হতো, না বাসলেও হতো।” এখানে কবি প্রেমের অগাধ গভীরতা, তার অসম্ভবতা, সম্পর্কের জটিলতা এবং এর যন্ত্রণার অনুভূতি প্রকাশ করেছেন।

এটি এমন এক কবিতা যেখানে জীবন, সম্পর্ক এবং অনুভূতির মিশ্রণ রয়েছে। কবি প্রেমের অসীম শক্তি ও দুর্বলতা নিয়ে চিন্তা করেছেন এবং একথা প্রকাশ করেছেন যে, ভালোবাসা কখনোই নিখুঁত নয়। এটি বরং এক অনন্ত প্রক্রিয়া, যা সময়ের সঙ্গে অস্থির হয়ে ওঠে। তাঁর কবিতায় প্রেম এমন একটি ভাবনা যা তার গভীরতা এবং অনুভূতির সাথে একীভূত হয়ে মানব জীবনের চিরন্তন সত্যতার সঙ্গে মিশে যায়।

কবিতার আরও কিছু অংশে, বিশেষত যখন তিনি বলেন, “কান্নাটুকু রাখতে দাও তোমার মায়া ঝিনুকে”, সেখানে প্রেমের এক গভীর রূপ প্রতিফলিত হয়। কবি এখানে প্রেমের রহস্য, এর প্রভাব, এবং সম্পর্কের অস্থিরতাকে এক অনন্য রূপে তুলে ধরেছেন। প্রেম এবং সম্পর্কের মধ্যে যে অব্যক্ত কথাগুলো থাকে, সেগুলোও কবিতায় তার অসাধারণ শৈলীতে প্রকাশিত হয়েছে।

সুবোধ সরকারের কবিতায়, বিশেষত “উল্কা খসে পড়ে না যার বাগানে”, দেখা যায় যে তিনি সম্পর্কের অস্থিরতা এবং মানুষের আবেগের নানান স্তরকে আলোচনায় এনেছেন। তিনি তাঁর কবিতার মাধ্যমে এ বিষয়টি বুঝাতে চেয়েছেন যে প্রেম কখনোই নিষ্কলুষ বা নিরবচ্ছিন্ন থাকে না। এটি জটিলতার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ে এবং একসময় আমাদের অভ্যন্তরীণ দুঃখ-বেদনা ও অবিচ্ছিন্ন চাহিদাকে সামনে নিয়ে আসে।

তিনি প্রেমকে এমন একটি শক্তি হিসেবে প্রকাশ করেছেন যা অপ্রতিরোধ্য এবং পৃথিবীর যেকোনো রকমের বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে চলে। কবিতার আরও কিছু অংশে দেখা যায় যে কবি জীবন এবং সম্পর্কের বেদনা-বিষন্নতার কথা বলেন, যা আমাদের সকলের কাছে পরিচিত একটি অনুভূতি। “আমিও নই, তুমিও নও, কেউ থাকি না সুখে” এই বাক্যটি এমন একটি অবস্থা প্রতিফলিত করে, যেখানে একজন প্রেমিক এবং প্রেমিকার মনোভাব একে অপরের প্রতি বিপরীত হলেও তাদের সম্পর্কের ভিতর এক অদ্ভুত শক্তি কাজ করে।

কবিতায় আমরা দেখতে পাই যে, “বজ্র হয়ে কলঙ্কে সে হিরের মতো হাসবে” বাক্যটি এক চমৎকার দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। এখানে কবি প্রেম এবং জীবনের প্রকৃত দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন, যেখানে সম্পর্কগুলি একে অপরের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করলেও, শেষ পর্যন্ত তারা একে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। প্রেম একটি শক্তি যা আমাদের জীবনের কঠিন বাস্তবতা থেকে শক্তি সংগ্রহ করে, এবং সেই শক্তি আবার আমাদের সম্পর্কগুলোকেও দৃঢ় করে তোলে।

এই কবিতার মাধ্যমে কবি এমন এক দর্শনীয় জগতের সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন, যেখানে প্রেম এবং সম্পর্কের জটিলতা, বেদনা, এবং একে অপরের প্রতি ভালোবাসার অদৃশ্য শক্তি প্রবাহিত হয়। সুবোধ সরকারের কবিতায় এক অদ্ভুত মাধুর্যতা এবং শক্তি রয়েছে, যা পাঠকদের জীবনের প্রতি একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। তার কবিতার শব্দ, বাক্য এবং প্রতীকগুলো আমাদের জীবনের গভীর উপলব্ধি এবং সম্পর্কের যে আসল অর্থ তা উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।

এই কবিতায় সুবোধ সরকার আমাদের একটি চিরকালীন পাঠ দিয়েছেন, যেখানে প্রেমের মর্মার্থ এবং সম্পর্কের অবিচ্ছিন্ন গতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তিনি খুব সাবলীলভাবে প্রেমের শাশ্বত শক্তি এবং এর যন্ত্রণার সংমিশ্রণ তুলে ধরেছেন। কবি বিশ্বাস করেন, জীবন এবং প্রেম কখনোই এক রৈখিক পথে চলে না, বরং এটি এক শক্তি যা কখনো অপ্রতিরোধ্য, কখনো দুঃখজনক, আবার কখনোবা অনির্বচনীয় হতে পারে।

এই কবিতাটি যখন পাঠ করা হয়, তখন এটি পাঠকদের মধ্যে এক নতুন অনুভূতির সঞ্চার করে। এটি তাদের নিজেদের সম্পর্ক, অনুভূতি, এবং জীবনের প্রতি এক অদ্ভুত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চিন্তা করতে বাধ্য করে। কবির শব্দ ও ভাবনার গভীরতা পাঠকদের মনের ভেতর একটি প্রতিচ্ছবি তৈরি করে, যা তাদের জীবনের নানা দিক দেখতে সাহায্য করে।

তোমাকে ভালোবাসলে যত সর্বনাশ হতো
না বাসলেও হতো
যতই তীরবিদ্ধ করো পাখিদুজন গাইছে গান
আজও আমার মতো।

উল্কা খসে পড়ে না যার বাগানে
গগনে তার সন্ধ্যা নেই,যোজনব্যাপী গন্ধা নেই
অশান্তিতে ভালোবাসাই জেতে!
বাসনাপুরে বাসনাহীন কেউ কী পারে যেতে?

কান্নাটুকু রাখতে দাও তোমার মায়া ঝিনুকে
ঝিনুকে ঠোঁট দিলেই তবে খোলে
আকাশে চাঁদ হন্যমান হলে।
আমিও নই তুমিও নও, কেউ থাকি না সুখে।

ভালবাসাই ন হন্যতে, হরণ করে হিংসা
আমি তোমার নাম দিলাম হিয়া
তোমার সব বজ্র আমি দুহাত ভরে নিয়েও দেখি
আমার মধ্যে রচিত হয় তোমার বাতাসিয়া।

উল্কা যার খসে পড়েনি,আগুনে ঢুকে হাত ধরেনি
কী করে ভালোবাসবে?
কালো সাগর ভালো সাগর পেরিয়ে সে কী আসবে?

যার ঝিনুকে যন্ত্রণা নেই,বসন্তে যার বঞ্চনা নেই
কী করে ভালোবাসবে?
বজ্র হয়ে কলঙ্কে সে হিরের মতো হাসবে

তোমাকে ভালোবাসলে যত সর্বনাশ হতো, না বাসলেও হতো
গাছের ডালে দুজন পাখি আজও আমার,আজও তোমার মতো

কৃতজ্ঞতা: দেশ, মে ২,২০২৪

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x