বাবা বললেন,
অন্ধকারে একটুখানি দাঁড়িয়ে থাক আমার জন্য
মাটির তলার একটা সুড়ঙ্গে নেমে গেলেন
খুব আস্তে আস্তে
আকাশে প্রান্ত নির্ণয় ভুল করে ছুটে গেল একটা উল্কা
বন্দরে একটাও জাহাজ নেই, রাস্তাগুলো দুলে ওঠে
কী যে হল
বুঝতে বুঝতেই কেটে গেল আরও উনিশটা বছর
এর মধ্যে কত হুড়োহুড়ি, কত মধুলোভীদের সঙ্গে ঘুরপাক
বাবা, বাবা!
বোতাম বোতাম মাশরুম খুব ইচ্ছে করে
বাবাকে খাওয়াতে
আর রুমালি রুটি
অন্তত একবার কাস্পিয়ান হ্রদের মাছের ডিম
ইচ্ছে করে একটা বারান্দাওয়ালা ঘর উপহার দিতে
বাবার থেকে এখন আমি বয়েসে অনেক বড়
আমার একুশটা হাত
তিনটে চোখ
প্রতিদিন সাতশো দরজা পেরিয়ে যাই
শ্যামপুকুর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন আমার অল্পবয়েসি বাবা
বলে উঠি, সাবধানে যাও, গাড়ি চাপা পড়বে যে
ফুটপাথে ওঠো
পাঞ্জাবিতে বগলের নীচে ফুটো, আমার পাঞ্জাবি
লাগবে না বাবার গায়
একটাও দশতলা বাড়ি দেখেননি, আমি সেখানে থাকি
জেনে গেলেন না বাংলাদেশ নামে একটি নতুন দেশ হয়েছে
তাঁর জন্মস্থান ঘিরে…
আমার ছেলে ঠাকুমার পাশে শুয়ে গল্প শোনে
ঘুম পাড়ানি গল্প
ঐ সব গল্প কিছুদিনের মধ্যেই শরীরে আঁট হয়ে যায়
নতুন নতুন গল্প বানাতে ছেলের দল হৈ হৈ করে ছুটছে
বিমানে একটা বিন্দু হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে আকাশে
আমি যতদিন বাবার ছেলে ছিলাম
তার চেয়ে বেশিদিন নিজেই বাবা
আমার বুকের সব রোম পাকা, সকালবেলা কাশতে কাশতে
লক্ষ করি, রক্ত পড়ছে কিনা
বাবা ছবি হয়ে থেমে আছেন।
নিজের থেকে কমবয়েসি কারুকে কি বাবা বলে ডাকা যায়?
তবু দেখতে পাই মাঝে মাঝে
আমিই চেয়ে থাকি স্নেহের দৃষ্টিতে
তাঁর ঘামে ভেজা মুখ, পরিক্রমা ক্লান্ত পা
কিছু দিতে ইচ্ছে হয়, যা যা পাননি
আমার ছেলের কাছ থেকে কিছু নেবার আগের মুহূর্তে
একবার আমার হাত কাঁপে!
আরো কবিতা পড়তে ক্লিক করুন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
  বাবা – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় | বাংলা কবিতা বিশ্লেষণ ও সমালোচনা
  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত “বাবা” বাংলা সাহিত্যের একটি মর্মস্পর্শী ও জীবনঘনিষ্ঠ কবিতা, যেখানে কবি পিতৃত্ব, সময়ের প্রবাহ এবং প্রজন্মান্তরের সম্পর্ককে অত্যন্ত শিল্পিতভাবে উপস্থাপন করেছেন। কবিতাটির প্রথম লাইন “বাবা বললেন, অন্ধকারে একটুখানি দাঁড়িয়ে থাক আমার জন্য” পাঠককে সাথে সাথেই এক গভীর আবেগিক ও দার্শনিক অভিজ্ঞতার জগতে নিয়ে যায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
  
  কবিতার সারাংশ ও মূলভাব
  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “বাবা” কবিতাটি পিতা-পুত্রের সম্পর্ক, সময়ের পরিবর্তন এবং প্রজন্মগত দায়িত্ববোধের এক অনবদ্য চিত্রণ। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দেখিয়েছেন কীভাবে একজন পুত্র কালক্রমে নিজেই পিতায় পরিণত হয় এবং সেই অবস্থান থেকে সে তার পিতাকে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে শেখে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতায় বাবার আকস্মিক প্রস্থান, পুত্রের বেড়ে ওঠা এবং শেষে পিতার ভূমিকায় তার নিজের আবির্ভাব – এই চক্রাকার গতিধারাকে খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই কবিতা পিতৃত্বের বহুমাত্রিক অর্থ উন্মোচন করেছে।
  
  রূপক ও প্রতীক বিশ্লেষণ
  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “বাবা” কবিতায় বিভিন্ন শক্তিশালী রূপক ও প্রতীকের ব্যবহার লক্ষণীয়। “মাটির তলার একটা সুড়ঙ্গে নেমে যাওয়া” মৃত্যু ও অন্তর্ধানের রূপক। “উনিশটা বছর” সময়ের দীর্ঘ যাত্রা ও প্রজন্মান্তরের প্রতীক। “সাতশো দরজা পেরিয়ে যাওয়া” জীবনের জটিলতা ও দায়িত্বের প্রতীক। “ছবি হয়ে থেমে থাকা” স্মৃতিতে বন্দী হওয়ার রূপক। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের রূপক ব্যবহার বাংলা কবিতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
  
  কবির উদ্দেশ্য ও সাহিত্যধারা
  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যের একজন কিংবদন্তি কবি ও ঔপন্যাসিক, যিনি তার গভীর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং জীবনবোধের জন্য পরিচিত। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই কবিতায় মূল উদ্দেশ্য ছিল পিতৃত্বের বহুমুখী অর্থ, সময়ের সাথে সম্পর্কের রূপান্তর এবং প্রজন্মগত ধারাবাহিকতাকে তুলে ধরা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “বাবা” কবিতাটি আত্মজৈবনিক কবিতা ও দার্শনিক কবিতার মিশ্র ধারায় রচিত, যেখানে কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে সার্বজনীন রূপ দিয়েছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই কবিতা বাংলা সাহিত্যে পিতৃত্বের নতুন সংজ্ঞা নির্মাণ করেছে।
  
  আবেগ ও মানসিক দ্বন্দ্ব বিশ্লেষণ
  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “বাবা” কবিতায় পুত্রের গভীর মমতা, অনুশোচনা এবং মানসিক দ্বন্দ্ব খুবই শক্তিশালীভাবে প্রকাশ পেয়েছে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাষায় “বাবা, বাবা!” – এই আকুতি এবং “বোতাম বোতাম মাশরুম খুব ইচ্ছে করে বাবাকে খাওয়াতে” – এই লাইনের মধ্যে যে অপরিপূর্ণ ইচ্ছা এবং অনুশোচনা ফুটে উঠেছে, তা পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতায় “আমি যতদিন বাবার ছেলে ছিলাম তার চেয়ে বেশিদিন নিজেই বাবা” – এই স্বীকারোক্তির মধ্যে প্রজন্মগত পরিবর্তনের যে গভীর বোধ রয়েছে, তা বাংলা কবিতায় অনন্য। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার আবেগিক গভীরতা বাংলা সাহিত্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
  কবিতার কাঠামো ও শৈলীগত বৈশিষ্ট্য
  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “বাবা” কবিতাটির কাঠামো খুবই স্বতন্ত্র এবং অর্থপূর্ণ। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় narrative style এ গল্প বলার technique ব্যবহার করেছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাষায় একটি গদ্যিক flow রয়েছে যা কবিতাকে বিশেষ প্রাণবন্ততা দিয়েছে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের শব্দচয়নে uncommon simplicity এবং profound emotional depth এর combination লক্ষ্য করা যায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের conversational tone এবং imagery ব্যবহার কবিতাকে বিশেষ মাত্রা দান করেছে।
  সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট
  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “বাবা” কবিতাটি বাংলা সমাজের পারিবারিক বন্ধন, প্রজন্মগত সম্পর্ক এবং সময়ের পরিবর্তনের ছোঁয়া রয়েছে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় contemporary Bengali society এর পরিবার কাঠামো এবং সামাজিক রূপান্তরকে তার কবিতার background হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই কবিতার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ সৃষ্টির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও স্পর্শ করেছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা বাংলা সাহিত্যে সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
  শিক্ষণীয় দিক ও দার্শনিক তাৎপর্য
  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “বাবা” কবিতা পাঠককে শেখায় যে পিতৃত্ব একটি সার্বজনীন অভিজ্ঞতা যা সময়ের সাথে সাথে তার রূপ পরিবর্তন করে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে প্রতিটি প্রজন্মেরই তার পূর্বপুরুষদের কাছে কিছু না কিছু ঋণ থাকে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই কবিতা reminds us that time waits for none এবং relationships evolve with changing circumstances। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি বাংলা সাহিত্যে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
  মেটা ডেসক্রিপশন
  সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “বাবা” কবিতার সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনী, কবিতার রূপক, ছন্দ, শৈলী ও দার্শনিক প্রেক্ষাপট নিয়ে গভীর আলোচনা। প্রথম লাইন “বাবা বললেন, অন্ধকারে একটুখানি দাঁড়িয়ে থাক আমার জন্য” সহ সমগ্র কবিতার ব্যাখ্যা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
  
  FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)
  
    
      সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “বাবা” কবিতাটির মূল বিষয়বস্তু কী?
      
        সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “বাবা” কবিতাটির মূল বিষয়বস্তু হলো পিতৃত্ব, সময়ের প্রবাহ এবং প্রজন্মগত সম্পর্কের রূপান্তর। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দেখিয়েছেন কীভাবে একজন পুত্র কালক্রমে নিজেই পিতায় পরিণত হয় এবং সেই অবস্থান থেকে সে জীবনকে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে শেখে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই কবিতাটি পিতাপুত্রের সম্পর্কের এক অনবদ্য চিত্রণ।
       
     
    
      সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার প্রধান রূপকগুলি কী কী?
      
        সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার প্রধান রূপকগুলি হলো: মাটির তলার সুড়ঙ্গ, উনিশটা বছর, সাতশো দরজা, এবং ছবি হয়ে থেমে থাকা – যারাそれぞれ মৃত্যু, সময়ের দীর্ঘ যাত্রা, জীবনের জটিলতা এবং স্মৃতির প্রতীক। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের রূপক ব্যবহার খুবই অর্থবহ এবং শিল্পিত।
       
     
    
      সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার বৈশিষ্ট্য কী?
      
        সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতায় সাধারণত গভীর জীবনবোধ, মানবিক সম্পর্কের জটিলতা এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটের প্রকাশ ঘটে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাষায় narrative quality এবং emotional depth এর uncommon combination দেখা যায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা বাংলা সাহিত্যে তার স্বতন্ত্র স্বাক্ষর রেখেছে।
       
     
    
      সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাটির প্রথম লাইন কী?
      
        সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাটির প্রথম লাইন: “বাবা বললেন, অন্ধকারে একটুখানি দাঁড়িয়ে থাক আমার জন্য” যা সরাসরি পাঠককে কবিতার মূল theme এবং emotional landscape এ নিয়ে যায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের এই প্রথম লাইনটি বাংলা কবিতার একটি অবিস্মরণীয় পঙ্ক্তি।
       
     
    
      সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাটি কোন ধারার অন্তর্গত?
      
        সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাটি আধুনিক বাংলা কবিতার আত্মজৈবনিক ধারা এবং দার্শনিক কবিতার অন্তর্গত, যেখানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে সার্বজনীন রূপ দিয়েছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা বাংলা সাহিত্যে নতুন ধারার সূচনা করেছে।
       
     
    
      সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাটির বিশেষত্ব কী?
      
        সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাটির বিশেষত্ব হলো এর গভীর মানবিক আবেদন এবং জীবনঘনিষ্ঠতা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা পাঠককে তার নিজের জীবনের সাথে connect করতে সাহায্য করে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের রচনাশৈলী বাংলা কবিতাকে সমৃদ্ধ করেছে।
       
     
    
      সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাটির শেষের দিকের লাইনগুলোর তাৎপর্য কী?
      
        সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতাটির শেষের দিকের লাইনগুলো “আমার ছেলের কাছ থেকে কিছু নেবার আগের মুহূর্তে একবার আমার হাত কাঁপে!” – এই লাইনের মাধ্যমে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রজন্মগত দায়িত্ববোধ এবং পিতৃত্বের গুরুভারের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় দেখিয়েছেন যে প্রতিটি পিতাই তার সন্তানের কাছে কিছু না কিছু ঋণী।
       
     
   
  
  © Kobitarkhata.com – কবি: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় | বাংলা কবিতা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ