মেঘ বললো- শুভ দাশগুপ্ত

মেঘ বললো,”যাবি ?
অনেক দুরের গেরুয়া নদী,
অনেক দুরের একলা পাহাড়,
অনেক দুরের গহীন সে বন- গেলেই দেখতে পাবি। যাবি?”
জানালা দিয়ে মুখ ঝুঁকিয়ে বললো সে মেঘ,
“যাবি? আমার সঙ্গে যাবি?

দিন ফুরিয়ে রাত ঘনাবে, রাত্রি গিয়ে সকাল হবে,
নীল আকাশে উড়বে পাখি,
-গেলেই দেখতে পাবি, যাবি?”
শ্রাবণ মাসের একলা দুপুর, মেঘ বললো, “যাবি?”

“কেমন করে যাবরে মেঘ? কেমন করে যাব?
নিয়ম ঘেরা জীবন আমার,
নিয়ম ঘেরা এধার ওধার,
কেমন করে নিয়ম ভেঙে এ জীবন হারাবো?
কেমন করে যাবরে মেঘ? কেমন করে যাব?”

মেঘ বললো,”দূরের মাঠে বৃষ্টি হয়ে ঝরবো,
সবুজ পাতায় পাতায় ভালবাসা হয়ে ঝরবো,
শান্ত নদীর বুকে আনবো জলোচ্ছ্বাসের প্রেম,
ইচ্ছে মতন ভাঙবো,ভেঙে পড়ব-
এই মেয়ে তুই যাবি?আমার সঙ্গে যাবি?”
“যাবো না রে মেঘ-পারবো না রে যেতে,
আমার আছে কাজের বাঁধন ; কাজেই থাকি মেতে।

কেবল যখন ঘুমিয়ে পড়ি তখন আমি যাই ;
সীমার বাঁধন ডিঙ্গিয়ে দৌরে এক ছুটে পালাই,
তখন আমি যাই;
স্বপ্নে আমার গেরুয়া নদী,স্বপ্নে আমার সুনীল আকাশ,
স্বপ্নে আমার দূরের পাহাড়- সব কিছুকে পাই।
জাগরণের এই যে আমি,ক্রীতদাসদের মতন
জাগরণের এই যে আমি এবং আমার জীবন,
কাজ অকাজের সুতোয় বোনা মুখোশ ঘেরা জীবন ,
তবুরে মেঘ যাবো,একদিন ঠিক তোরই সঙ্গে;

শ্রাবণ হাওয়ার নতুন রঙ্গে, যাব রে মেঘ যাবো।
সেদিন আমি,শিমুল,পলাশ ভিজবো বলে যাবো,
পাগল হাওয়ায় উতল ধারায় আমায় খুঁজে পাব,
যাবো রে মেঘ যাবো,যাবো রে মেঘ যাবো,যাবো রে মেঘ যাবো।

মেঘ বললো – শুভ দাশগুপ্ত | আধুনিক রূপক কবিতার এক আত্মবিশ্লেষণ

“মেঘ বললো” কবিতাটি শুভ দাশগুপ্ত-এর অন্যতম জনপ্রিয় কবিতা, যেখানে এক নারীর স্বপ্ন, স্বাধীনতা, ও অভ্যন্তরীণ আকাঙ্ক্ষার দ্বন্দ্ব খুবই সংবেদনশীলভাবে তুলে ধরা হয়েছে। কবিতার সূচনাতেই আমরা দেখতে পাই একটি মেঘ চরিত্র, যে কেবল প্রকৃতির কোনো উপাদান নয়, বরং জীবনের এক আমন্ত্রণ, এক মুক্তির প্রতীক।

মেঘ বারবার প্রশ্ন করে – “যাবি?” – যেন সে এক মুক্তির দ্বার খুলে দিতে চায়। পাঠকের কাছে এটি শুধু এক কল্পনাপ্রবণ প্রশ্ন নয়, বরং জীবনের বাস্তবতা ও স্বাধীনতার টানাপোড়েনের প্রতিচ্ছবি। নারী চরিত্রটি যে উত্তর দেয়, তা আমাদের এক গভীর বাস্তবতায় ফিরিয়ে আনে – “নিয়ম ঘেরা জীবন আমার”, যেখানে সে জানে, সে চাইলেও যেতে পারবে না।

এই কবিতার সৌন্দর্য নিহিত রয়েছে এর দ্বৈত রূপকে – একদিকে রয়েছে প্রকৃতির রোমান্টিক আহ্বান, অন্যদিকে বাস্তব জীবনের দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা। মেঘ এখানে প্রেমিক, বন্ধু, বা হয়তো নিজেরই অবচেতন ইচ্ছা, যে বারবার ডাকে – দূরে, ভিন্ন এক জীবনের খোঁজে। নারী চরিত্রটি জানে, সে চাইলে পালাতে পারে না, কিন্তু তার ভেতরকার বোধ তাকে নিয়ে যায় সেই ‘গেরুয়া নদী’ বা ‘দূরের পাহাড়ে’।

দিন ফুরিয়ে রাত ঘনাবে, রাত্রি গিয়ে সকাল হবে” – এই পঙক্তিগুলো জীবনের চক্রবৃদ্ধি সময়চক্রকে নির্দেশ করে, যেন সবকিছুরই পুনরাবৃত্তি রয়েছে, কিন্তু সেই পুনরাবৃত্তির মাঝেও কেউ কেউ ভিন্ন কিছু খোঁজে। নারী বলছে, “ঘুমিয়ে গেলে আমি যাই” – সে বোঝায়, স্বপ্নেই সে যেতে পারে মুক্তির পথে, বাস্তবে নয়। স্বপ্ন এখানে একটি আশ্রয়, যেখানে নিয়মের বাঁধন নেই, যেখানে সে পেয়ে যায় নিজের ইচ্ছেমতো নদী, আকাশ, পাহাড়।

কবিতার শেষাংশে তার দৃঢ় প্রত্যয় ফুটে ওঠে – “তবু রে মেঘ যাবো, একদিন ঠিক তোরই সঙ্গে” – যা একপ্রকার মানসিক প্রতিজ্ঞা। বাস্তবে হয়তো সে বন্দিনী, কিন্তু তার কল্পনায় সে এক মুক্ত নারী। এই মুক্তির আকাঙ্ক্ষাই কবিতাটিকে করে তোলে শক্তিশালী ও প্রাসঙ্গিক।

SEO বিশ্লেষণ অনুসারে, এই কবিতা “মেঘ বললো”, “শুভ দাশগুপ্ত কবিতা”, “বাংলা রূপক কবিতা”, “নারীর স্বাধীনতা” ইত্যাদি কীওয়ার্ডের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন পাঠকদের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম, যারা বাংলা আধুনিক কবিতা, কল্পনা ও বাস্তবতার মেলবন্ধন, এবং নারীর আত্মপ্রত্যয়ের কাব্যিক উপস্থাপনা খুঁজছেন।

এই কবিতাটি একাধারে একটি রূপক গল্প, প্রেমের আমন্ত্রণ, এবং সমাজের নিয়মে আটকে থাকা এক নারীর অন্তর্দ্বন্দ্বের চিত্র। এখানে মেঘ হয়ে উঠেছে জীবন থেকে পলায়নের দরজা, আবার নারী চরিত্রটির ভেতরে রয়েছে সেই দ্বন্দ্ব – যাবো না থাকবো? কবির ভাষায়, সে একদিন ঠিক যাবে।

ফোকাস কীওয়ার্ড:

  • মেঘ বললো
  • শুভ দাশগুপ্ত
  • মেঘ বললো কবিতা বিশ্লেষণ
  • নারীর কল্পনা ও বাস্তবতা
  • বাংলা আধুনিক রূপক কবিতা
  • স্বপ্ন ও স্বাধীনতা
  • শ্রাবণের কবিতা
  • নারীর মানসিক দ্বন্দ্ব
  • বাংলা কবিতা SEO

এই বর্ণনাটি সার্চ ইঞ্জিন বট ও পাঠকদের জন্য একসাথে উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে, যাতে “মেঘ বললো – শুভ দাশগুপ্ত” কবিতাটি গুগল সার্চে সহজে খুঁজে পাওয়া যায় এবং পাঠক এর ভাবনাগত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। যারা বাংলা সাহিত্যে রূপক কবিতা ও নারীর আত্মানুসন্ধানমূলক কাব্য খুঁজছেন, তাদের জন্য এটি এক মূল্যবান সংযোজন।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x