কবিতার খাতা
- 8 mins
মা- বীথি চট্টোপাধ্যায়
আমার মায়ের ডাকনাম রোদ্দুর
আমাকে স্পষ্ট মেঘ বলে চেনা যেত,
এভাবেই আমি এবং আমার মা
সম্পর্কটি মেঘ রোদ্দুর পেত।
সম্পর্কটি দূরপাল্লার রেল
মার কোল ঘেঁসে আট বছরের ভয়,
সম্পর্কটি বিকেলবেলার ছাদে
বাংলায় লেখা বর্ণের পরিচয়।
এভাবেই আমি এবং আমার মা
জ্যোৎস্নারাত্রে ঘুমপাড়ানির সুর,
সম্পর্কটি পাখির কলস্বর-
আমার মায়ের ডাকনাম রোদ্দুর
কিন্তু আমি তো নিবিড় মেঘের ঢল
সম্পর্কটি শৈশব কৈশোর,
সোনার মতন আমার মায়ের হাত
সম্পর্কটি বর্ষায় ভেজা ভোর।
সম্পর্কটি মানবিক জীবজড়
সম্পর্কটি অনেক বছর পর
সম্পর্কটি ঠোঁটে নিমপাতা ছোঁয়
কবিতা লেখার বিষয় অতঃপর।
আমার মায়ের ডাকনাম রোদ্দুর
সম্পর্কটি তিলকাঞ্চন করে,
এভাবেই আমি এবং আমার মা
মেঘ-রোদ্দুর জল পড়ে পাতা নড়ে।
মা – বীথি চট্টোপাধ্যায় | মেঘ-রোদ্দুরের কবিতা, সম্পর্কের গভীর মানবিক রূপ
মা- বীথি চট্টোপাধ্যায়
“মা” কবিতাটি বীথি চট্টোপাধ্যায়-এর এক অসাধারণ সংবেদনশীল সৃষ্টি, যেখানে মা ও সন্তানের সম্পর্ক মেঘ-রোদ্দুরের দ্বৈততায় গঠিত। কবিতাটি একাধারে ব্যক্তিগত স্মৃতির ভাঁজ খুলে দেয়, অন্যদিকে এক সার্বজনীন আবেগের স্পর্শ এনে দেয়। প্রথম পঙক্তিতেই—“আমার মায়ের ডাকনাম রোদ্দুর”—শুরু হয় এক উষ্ণ সম্পর্কের কাব্যিক চিত্রায়ন, যা পরবর্তী প্রতিটি স্তবকে বিস্তার লাভ করে।
কবি মাকে রোদ্দুরের সঙ্গে তুলনা করেছেন, আর নিজেকে চিহ্নিত করেছেন মেঘ হিসেবে। এই তুলনা নিছক উপমা নয়, বরং এক জৈবিক, আবেগঘন, পরিপূরক সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি। মা যে উষ্ণতা দেন, সন্তান সেই উষ্ণতার মধ্যে নিজেকে খুঁজে পায়। মেঘ ও রোদ্দুরের সম্পর্ক যেমন একে অপরের উপস্থিতিতে দ্যুতিময় হয়ে ওঠে, তেমনই সন্তানের জীবনও মাতৃত্বের আলোয় উজ্জ্বল হয়।
কবিতায় একাধিক স্তর রয়েছে—শৈশবের রেলযাত্রা, ভয়ের মুহূর্তে মায়ের কোলে আশ্রয়, বিকেলবেলার ছাদে বর্ণপরিচয় শেখা—সব মিলিয়ে সম্পর্কটি শুধুই আবেগ নয়, বরং সময়ের বিভিন্ন পর্বে গড়ে ওঠা অভিজ্ঞতার সংগঠন। এই অংশগুলো পাঠকের মনেও ব্যক্তিগত স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।
“জ্যোৎস্নারাত্রে ঘুমপাড়ানির সুর”, “পাখির কলস্বর”, “বর্ষায় ভেজা ভোর” ইত্যাদি চিত্রকল্পগুলো কবিতাটিকে প্রকৃতি ও অনুভূতির গভীর সংলগ্নতায় স্থাপন করেছে। কবি এখানে মায়ের ভালোবাসাকে একেকটি ঋতুর, সময়ের, প্রাকৃতিক উপাদানের সঙ্গে যুক্ত করে তুলেছেন। পাঠকের কাছে এটি শুধু মায়ের স্মৃতি নয়, বরং একটি ছন্দবদ্ধ আবেগ, যা জীবনের নানা মোড় ঘুরে ফিরে আসে।
“সম্পর্কটি মানবিক জীবজড়”—এই পঙক্তিটি কবিতাটির সবচেয়ে গভীর দার্শনিক দিক তুলে ধরে। মা ও সন্তানের সম্পর্কটি কেবল মানসিক নয়, সেটি জড় ও জীবের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সেতুবন্ধন। মা যেন পৃথিবীর সঙ্গে সন্তানের সংযোগের এক প্রাথমিক সেতু। এই সম্পর্ক বহু বছর পরও রয়ে যায়, কবিতার ছায়ায়, স্মৃতির পাতায়, ভাষার গভীরতায়।
কবিতার শেষ স্তবকে “তিলকাঞ্চন” শব্দটি বিশিষ্টতা তৈরি করেছে। এটি মায়ের ছোঁয়ায় পবিত্র হয়ে ওঠার এক প্রতীক। “জল পড়ে পাতা নড়ে” – এই প্রবাদসম পঙক্তিটি দিয়ে কবি সম্পর্কের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে ধরেছেন। ছোট কোনো ঘটনা, একটি ছায়া, একটি ঘ্রাণ, হঠাৎ করে এনে দিতে পারে মায়ের উপস্থিতির স্মৃতি। এই স্মৃতি কখনো শৈশবের বিকেলে খেলার সঙ্গী, আবার কখনো রাত্রির ঘুমের সুর হয়ে ফিরে আসে।
কবিতাটি আবৃত্তির জন্য একেবারে উপযোগী। প্রত্যেকটি চরণ শ্রোতার মনে মায়া ও আবেগের আবেশ জাগায়। মায়ের প্রতি সন্তানের অমোচনীয় ভালোবাসা ও স্মৃতি এখানে গীতিময় রূপে ধরা দিয়েছে। বাংলা সাহিত্যে মাকে নিয়ে লেখা অসংখ্য কবিতার মাঝে এই কবিতাটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি কোনো আড়ম্বর বা অলংকার নয়, বরং সরলতাতেই সত্য এবং আন্তরিকতায় সমৃদ্ধ।
এই কবিতাটি শুধুই একজন ব্যক্তির আত্মকথা নয়, এটি এক সামাজিক, পারিবারিক ও সাংস্কৃতিক চিত্রও। মা নামক সম্পর্ক যে কত রকমভাবে, কত গভীরতায় ও কত সূক্ষ্ম স্পর্শে একজন মানুষের জীবনে জড়িয়ে থাকে, এই কবিতা তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। “মা” শব্দটি যেন এখানে একটি শব্দ নয়, বরং এক অনুভব, এক আশ্রয়, এক চিরন্তন পরিচয়।
“মা – বীথি চট্টোপাধ্যায়” কবিতাটি আধুনিক বাংলা কাব্যজগতে মায়ের প্রতি এক মূর্ত প্রতীকী শ্রদ্ধা। এই কবিতা শুধুই একটি কাব্যিক রচনা নয়, বরং এক জীবন্ত স্মৃতি, এক চিরন্তন অনুভব। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে “মা” শীর্ষক কবিতাগুলোর মধ্যে এটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কারণ এতে রয়েছে ভাষার মাধুর্য, অনুভবের গভীরতা ও সম্পর্কের বিশুদ্ধতা।
ফোকাস কীওয়ার্ড:
- মা
- বীথি চট্টোপাধ্যায়
- আমার মায়ের ডাকনাম রোদ্দুর
- বাংলা মা নিয়ে কবিতা
- মা ও সন্তানের সম্পর্ক
- আবৃত্তিযোগ্য বাংলা কবিতা
- মেঘ রোদ্দুরের সম্পর্ক
- শৈশব স্মৃতি ও মা
- মানবিক সম্পর্কের কবিতা
- SEO ফ্রেন্ডলি বাংলা কবিতা
এই হিডেন SEO বর্ণনা Google এবং অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন বটের জন্য নির্মিত, যাতে “মা – বীথি চট্টোপাধ্যায়” কবিতাটি সহজে ইনডেক্স হয় এবং পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পারে। এটি বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের জন্য একটি আবেগঘন উপহার।