দেশ দেখাচ্ছ অন্ধকারে-নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

দেশ দেখাচ্ছ অন্ধকারে :
এই যে নদী, ওই অরণ্য, ওইটে পাহাড়,
এবং ওইটে মরুভূমি।
দেশ দেখাচ্ছ অন্ধকারের মধ্যে তুমি,
বার করেছ নতুন খেলা।
শহর-গঞ্জ-খেত-খামারে
ঘুমিয়ে আছে দেশটা যখন, রাত্রিবেলা
খুলেছ মানচিত্রখানি।
এইখানে ধান, চায়ের বাগান, এবং দূরে ওইখানেতে
কাপাস-তুলো, কফি, তামাক।
দম-লাগানো কলের মতন হাজার কথা শুনিয়ে যাচ্ছ।
গুরুমশাই,
অন্ধকারের মধ্যে তুমি দেশ দেখাচ্ছ।

কিন্তু আমরা দেশ দেখি না অন্ধকারে।
নৈশ বিদ্যালয়ের থেকে চুপি চুপি
পালিয়ে আসি জলের ধারে।
ঘাসের পরে চিত হয়ে শুই, আকাশে নক্ষত্র শুনি,
ছলাত-ছলাত ঢেউয়ের টানা শব্দ শুনি।
মাথার মধ্যে পাক খেয়ে যায় টুকরো-টুকরো হাজার ছবি;
উঠোন জুড়ে আলপনা, আল-পথের পাশে
হিজল গাছে সবুজ গোটা,
পুণ্যি-পুকুর, মাঘমণ্ডল, টিনের চলে হিমের ফোঁটা।
একটু-একটু বাতাস দিচ্ছে, বাতাস আনছে ফুলের গন্ধ;
তার মানে তো আর-কিছু নয়,
ছেলেবেলার শিউলি গাছে
এই আঁধারেও ফুলের দারুন সমারোহ।
গুরুমশাই,
অন্ধকারে কে দেখাবে মানচিত্রখানা?
মাথার মধ্যে দৃশ্য নানা,
স্মৃতির মধ্যে অজস্র ফুল,
তার সুবাসেই দেশকে পাচ্ছি বুকের কাছে।

দেশ দেখাচ্ছ অন্ধকারে – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী | স্মৃতি, অন্ধকার ও শিশুমনের দেশচিন্তার কাব্য

“দেশ দেখাচ্ছ অন্ধকারে” কবিতাটি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী-এর এক অসাধারণ সৃষ্টি, যা শিশুমনের দেশচিন্তা, স্মৃতি এবং প্রতীকী বোধের সম্মিলনে রচিত। এই কবিতায় অন্ধকারের মধ্যে দেশ দেখানোর যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে, তা নিছক ভূগোল শেখার প্রয়াস নয়, বরং একটি ভিন্ন মাত্রায় – অনুভব, ঘ্রাণ, স্মৃতি ও কল্পনার এক অনুপম চিত্ররূপ। গুরুমশাই যখন মানচিত্র খুলে দেশ দেখান, তখন শিশুর মন খুঁজে ফেরে তার আপন দেশ—ঘাসে ঘেরা মাঠ, পুকুর, পুণ্যির হাট, এবং শিউলি ফুলের গন্ধে ভরা সেই ছোট্ট জীবন।

কবিতার শুরুতে গুরুমশাই-এর কণ্ঠে ভেসে আসে নদী, অরণ্য, পাহাড়, মরুভূমি—সবকিছু যেন একটি কাঠামোগত ও রাজনৈতিক দেশচিন্তার প্রতীক। শিশুদের নৈশ বিদ্যালয়ে মানচিত্রের মুখোমুখি করে তিনি শিক্ষা দিতে চান দেশের চেহারা। কিন্তু এই অন্ধকারে, যখন বাইরের আলো নিভে আসে, শিশুরা চলে যায় অন্য একটি দেশে—নিজস্ব স্মৃতির, অনুভবের, ভালোবাসার দেশে।

কবিতার প্রকৃত সৌন্দর্য নিহিত রয়েছে এই দ্বৈত স্তরে—একদিকে গুরুমশাই-এর শিক্ষা, অন্যদিকে শিশুমনের বাস্তবতা। অন্ধকারের মধ্যে শিশুরা পালিয়ে আসে নদীর ধারে, শুয়ে থাকে ঘাসের উপর, অনুভব করে বাতাসে শিউলির গন্ধ, চোখে ভেসে ওঠে বাড়ির উঠোনে আঁকা আলপনা, মাঠে দোলা দেওয়া হিজল গাছ। তাদের মাথায় মানচিত্র নয়, জেগে ওঠে টুকরো টুকরো স্মৃতির ছবি।

এখানে “অন্ধকার” শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হয়ে ওঠে। এটি শুধু ভৌত অন্ধকার নয়, বরং এক ধরণের চেতনার ভেতরের জগৎ—যেখানে শিক্ষার কাঠামো ঢোকে না, যেখানে কল্পনা ও অনুভবের রাজত্ব। শিশুরা এই অন্ধকারে সেই দেশ দেখে, যা তারা হৃদয়ে ধারণ করে। সেখানে নদী মানে মা’র হাত ধরে চলা নদীর ধারে পিকনিক, পাহাড় মানে সেই ছবিতে দেখা রহস্যময় দৃশ্য, আর পুকুর মানে কাকিদের সঙ্গে পুণ্যি-পুকুরে স্নান।

কবির মুন্সিয়তা এখানেই—তিনি দেশচিন্তার ভিন্ন দুই স্তরকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন। একদিকে শ্রেণিকক্ষের শিক্ষা, যা বাস্তবতাকে মানচিত্রে পরিণত করে; অন্যদিকে স্মৃতির বাস্তবতা, যা ‘ফুলের গন্ধ’, ‘বাতাসের ছোঁয়া’ এবং ‘আলপনার ছবি’ দিয়ে দেশকে উপলব্ধি করে। কবি বলতে চান, শুধু শিক্ষা নয়, অনুভব ও স্মৃতিও দেশের পরিচয়।

এই কবিতাটি আবৃত্তির জন্যও দারুণ উপযোগী। প্রতিটি স্তবকে ছড়িয়ে আছে শ্রুতিমধুরতা, বর্ণনার ছন্দ, এবং চিত্রকল্পের জীবনময়তা। যখন বলা হয়, “ছেলেবেলার শিউলি গাছে এই আঁধারেও ফুলের দারুন সমারোহ”, তখন সেই দৃশ্য শুধু চোখে নয়, মনে-মগজে এক অপূর্ব আবেগ জাগায়।

“দেশ দেখাচ্ছ অন্ধকারে – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী” কবিতাটি কেবল সাহিত্য নয়, বরং শিশুমনের দর্শন, স্মৃতিবিজ্ঞান ও জাতিগত চেতনারও দলিল। কবি এখানে একটি মৌলিক প্রশ্ন তুলেছেন—আমরা কি কেবল রাজনৈতিক মানচিত্র দিয়ে দেশ বুঝি, নাকি হৃদয়ের মানচিত্র দিয়েও চিনতে পারি নিজের দেশকে?

যারা শিশুদের মানসিক গঠন, স্মৃতির প্রভাব, এবং আবেগ-ভিত্তিক দেশচিন্তা নিয়ে গবেষণা করেন, তাদের জন্যও এই কবিতা এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পাশাপাশি সাধারণ পাঠকের কাছেও এটি এক আবেগঘন ভ্রমণ—যেখানে তারা খুঁজে পায় নিজেদের শৈশব, ছোটবেলার গন্ধ, এবং এক অনন্বয় অনুভবের ছোঁয়া।

এই কবিতাটি SEO ফ্রেন্ডলি করার জন্য আমরা এর মূল বিষয়বস্তু, কবির নাম, কবিতার নাম, এবং প্রসঙ্গভিত্তিক কীওয়ার্ডগুলো সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরেছি যাতে এটি গুগল সার্চে সহজেই ইনডেক্স হয় এবং পাঠকেরা সহজে খুঁজে পান।

ফোকাস কীওয়ার্ড:

  • দেশ দেখাচ্ছ অন্ধকারে
  • নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
  • বাংলা কবিতা
  • শিশুমনের দেশচিন্তা
  • স্মৃতি ও কল্পনার কবিতা
  • আবৃত্তির উপযোগী বাংলা কবিতা
  • স্মৃতির দেশ
  • অন্ধকার প্রতীকি কবিতা
  • SEO ফ্রেন্ডলি বাংলা সাহিত্য
  • বাংলা ক্লাসিক কবিতা বিশ্লেষণ

এই বর্ণনা অংশটি Google এবং অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন বট-এর জন্য হিডেন SEO ব্লক হিসেবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে “দেশ দেখাচ্ছ অন্ধকারে – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী” কবিতাটি সহজে খুঁজে পাওয়া যায় এবং বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের কাছে পৌঁছায়।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x