ছিন্ন মুকুল-সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

সবচেয়ে যে ছোট্ট পিঁড়িখানি
সেইখানি আর কেউ রাখে না পেতে,
ছোট থালায় হয় নাকো ভাত বাড়া,
জল ভরে না ছোট্ট গেলাসেতে;
বাড়ির মধ্যে সবচেয়ে যে ছোট
খাবার বেলায় কেউ ডাকে না তাকে,
সবচেয়ে যে শেষে এসেছিল
তারি খাওয়া ঘুচেছে সব আগে।

সবচেয়ে যে অল্পে ছিল খুশি
খুশি ছিল ঘেঁষাঘেঁষির ঘরে,
সেই গেছে হায়, হাওয়ার সঙ্গে মিশে
দিয়ে গেছে জায়গা খালি করে।
ছেড়ে গেছে পুতুল, পুঁতির মালা,
ছেড়ে গেছে মায়ের কোলের দাবি;
ভয়-তরাসে ছিলো যে সবচেয়ে
সেই খুলেছে আঁধার ঘরের চাবি।

হারিয়ে গেছে- হারিয়ে গেছে, ওরে!
হারিয়ে গেছে বোল্-বলা সেই বাঁশি,
হারিয়ে গেছে কচি সে মুখখানি,
দুধে-ধোওয়া কচি দাঁতের হাসি।
আঁচল খুলে হঠাৎ স্রোতের জলে
ভেসে গেছে শিউলি ফুলের রাশি,
ঢুকেছে হায় শ্মশান ঘরের মাঝে
ঘর ছেড়ে তাই হৃদয় শ্মশান-বাসী।

সবচেয়ে যে ছোট কাপড়গুলি,
সেগুলি কেউ দেয় না মেলে ছাদে;
যে শয্যাটি সবার চেয়ে ছোট
আজকে সেটি শূন্যে পড়ে কাঁদে,
সব-চেয়ে যে শেষে এসেছিলো
সে গিয়েছে সবার আগে সরে,
ছোট্ট যে জন ছিলো রে সব চেয়ে
সে দিয়েছে সকল শূন্য করে।

ছিন্ন মুকুল – সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের শিশু শোক ও হৃদয়স্পর্শী বাংলা কবিতা

“ছিন্ন মুকুল” বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য রত্ন, যা লিখেছেন ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। এই কবিতাটি শিশুদের মৃত্যু নিয়ে লেখা এক হৃদয়বিদারক সাহিত্যকর্ম, যা পাঠককে গভীর বিষাদের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। “ছিন্ন মুকুল” শব্দবন্ধেই নিহিত আছে কবিতার মূল ভাবনা—একটি কচি ফুল ছিঁড়ে গেছে, ঝরে গেছে অকালে, যেমন একটি শিশু চলে যায় এই পৃথিবী থেকে তার আগে পূর্ণতা পাওয়ার আগেই।

কবিতার শুরুতেই আমরা দেখি, সবচেয়ে ছোট পিঁড়ি, ছোট গেলাস, ছোট থালা – সবকিছু পড়ে আছে অব্যবহৃত অবস্থায়। এটি একটি শিশু, যে ছিল পরিবারের সবচেয়ে ছোট, তার অনুপস্থিতি ও শূন্যতাকে খুব সূক্ষ্মভাবে প্রকাশ করে। বাড়ির সবাই খেতে বসেছে, কিন্তু কেউ আর তাকে ডাকে না। সেই ছোট্ট মানুষটি সবার শেষে এসেছিল, অথচ চলে গেছে সবার আগে। এই পংক্তিগুলো কেবল শিশুর মৃত্যু নয়, বরং তার চলে যাওয়ার পর ঘরে কী শূন্যতা বিরাজ করে—তাও দেখায়।

কবিতার দ্বিতীয় স্তবকে আসে শিশুর সহজে খুশি হওয়া স্বভাব। যে একটু জায়গাতেই খুশি ছিল, যে ঘেঁষাঘেঁষির মাঝেই মজা পেত—সেই আজ জায়গা খালি করে দিয়ে চলে গেছে। সে রেখে গেছে তার খেলনা, পুতুল, পুঁতির মালা—আরও রেখে গেছে মায়ের কোলের দাবি। এই ছিন্নতা কেবল জিনিসের নয়, মায়ের হৃদয়েরও।

এরপর যে দৃশ্য উঠে আসে, তা আরও হৃদয়বিদারক। শিশুটির হাসিমুখ, দুধে ধোয়া দাঁত, বাঁশির সুর—সব হারিয়ে গেছে। শিশুটির মৃত্যু আর শোক এখানে বাস্তবতা পেরিয়ে চিত্রকল্পে পরিণত হয়, যেখানে শিউলি ফুলের মতো সে ভেসে গেছে স্রোতের জলে। তার ঘর আজ শূন্য নয়, বরং যেন এক শ্মশানঘর, কারণ হৃদয়ের মধ্যেই সে শ্মশানবাসী হয়ে গেছে। এই দৃশ্যপট বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী শোক-প্রতিবিম্ব।

কবিতার শেষ স্তবকে আমরা দেখি, ছোট কাপড়গুলো কেউ আর ছাদে মেলে না। ছোট খাট পড়ে থাকে অশ্রুসিক্ত শূন্যতায়। যেটি ঘরে এসেছিল সবার শেষে, চলে গেছে সবার আগে। তার প্রস্থানে যেন পরিবারের হৃদয় ছিন্নভিন্ন হয়েছে। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এই কবিতায় কেবল একটি শিশুর মৃত্যু নয়, বরং তার রেখে যাওয়া প্রতিটি চিহ্নকে জীবন্ত করে তুলেছেন।

সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে “ছিন্ন মুকুল”

ছিন্ন মুকুল কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের একটি অসাধারণ এলিগি (Elegy), যেখানে বিষাদ ও সৌন্দর্য পাশাপাশি অবস্থান করে। এটি একটি সাহিত্যিক শোকগাঁথা, যেখানে প্রত্যেক চরণে উঠে এসেছে অন্তর্গত বেদনা, স্মৃতি, মমতা এবং নিঃসঙ্গতা। কবির অসাধারণ প্রতীকি চিত্রকল্প (imagery) ও ছন্দময় নির্মাণ এই কবিতাকে সময়ের সীমানা ছাড়িয়ে দিয়েছে।

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছন্দের জন্য বিখ্যাত হলেও, “ছিন্ন মুকুল” কবিতায় তিনি শুধুমাত্র ছন্দ নয়—দিয়েছেন এক অনুপম আবেগঘন অভিজ্ঞতা। এটি এমন এক কবিতা, যা কেবল শিশুর জন্য নয়—প্রতিটি পাঠকের হৃদয়কে স্পর্শ করে যায়। আবৃত্তি করার জন্য এটি একটি আদর্শ কবিতা, যেখানে আবেগ, ছন্দ এবং ভাষার সৌন্দর্য একত্রে বিরাজ করে।

কেন এই কবিতাটি SEO দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ?

  • ছিন্ন মুকুল একটি জনপ্রিয় বাংলা কবিতা, যার জন্য পাঠকগণ Google এ নিয়মিত সার্চ করে
  • এই কবিতা আবৃত্তির জন্য আদর্শ, তাই স্কুল, কলেজ, আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রে এটি উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন
  • “সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কবিতা”, “বাংলা শিশু কবিতা”, “হৃদয়স্পর্শী বাংলা কবিতা” – এসব কীওয়ার্ডে এই পৃষ্ঠা র‍্যাঙ্ক করার সম্ভাবনা বেশি
  • পাঠকেরা সাধারণত কবিতার পাশাপাশি কবি পরিচিতি ও ব্যাখ্যা খোঁজেন, যা এই ব্লকে সংযুক্ত

ছিন্ন মুকুল – আবৃত্তির জন্য আদর্শ কবিতা

আবৃত্তিকার বা কবিতা প্রেমীদের জন্য “ছিন্ন মুকুল” এক অমূল্য সম্পদ। এর প্রতিটি স্তবক আবেগের ছন্দে গাঁথা, যা আবৃত্তির সময় শ্রোতার মন ছুঁয়ে যায়। আবৃত্তির প্রতিযোগিতায়, অনলাইন ভিডিওতেও এই কবিতা সহজে জায়গা করে নিতে পারে। যারা শিশু-কবিতা খোঁজেন, তাদের জন্য এটি এক অনন্য নজির।

শেষ কথা

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের “ছিন্ন মুকুল” একটি অমর কবিতা, যা বাঙালির আবেগ, ভাষা ও সাহিত্যের গর্ব। শিশুদের জন্য লেখা হলেও এটি সকল বয়সের মানুষের হৃদয়ে আলোড়ন তোলে। এই কবিতাকে SEO অনুকূলে উপস্থাপন করে আমরা বাংলা সাহিত্যকে আরও বেশি পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। আমাদের ওয়েবসাইটের বাচ্চাদের কবিতা ক্যাটাগরিতে আপনি আরও এই ধরনের আবেগঘন ছড়ার সংকলন পাবেন।

ফোকাস কীওয়ার্ড: ছিন্ন মুকুল, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, বাংলা শিশু কবিতা, বাংলা আবৃত্তির কবিতা, হৃদয়স্পর্শী কবিতা, শিশুমৃত্যুর কবিতা, বাংলা এলিগি
সেকেন্ডারি কীওয়ার্ড: বাংলা ছড়া, আবৃত্তির জন্য কবিতা, বাংলা দুঃখের কবিতা, বাংলা সাহিত্য

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x