শেষ চাওয়া- রুমানা শাওন

সময়ের কাছে,
একটু থামতে চেয়েছিলাম—
সময় থামেনি।
আমি একা হলাম, সাথে একরত্তি ছেলে।
সামনে এক দীর্ঘ পথ,
যার প্রতিটি ধুলোমাখা মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিল
কারও করুনা,
কারও সন্দেহ,
আর অনেকের মৌন অবজ্ঞা।

পৃথিবী কখনো আমাকে জিজ্ঞেস করেনি—
“কি হয়েছিল?”
তারা বরং গল্প বানিয়েছিল,
যেখানে আমি কখনো নায়িকা,
কখনো খলনায়িকা,
আর কখনো শুধু “উপযুক্ত নয়”।

আমি হয়ে উঠলাম গল্পের খোড়াক,
যেন সত্যের চেয়ে গল্প বেশি বিশ্বাসযোগ্য।
আমি ধোয়া তুলসীপাতা নই—
তবে আমি সেইও নই,
যার গায়ে তোমরা এতোটা ছাপ মেরে দেবে
পথ না জেনে, পা না রেখে।

আজ শরীর আমার নিজের দখলে নেই।
চোখে-মুখে বয়ে বেড়াই ক্লান্তি আর অভিমান,
আর ভিতরে জমে থাকা এক শীতল নিস্তব্ধতা।
আমার নিজের জন্য কিছু গড়ার সময় হয়নি।
যারা পাশে থেকেছে,
তাদের প্রয়োজন মেটাতে মেটাতে
আমি হয়েছি কেবল প্রয়োজনীয়।

নিজের ইচ্ছেগুলো
অবচেতনে একদিন তুলে রেখেছিলাম
জীবনের তাকের পিছন ভাগে।

অনেকেই বলেছিল—
“সেটেল করো।”
মাথায় ঘুরপাক ,
যে শিশুটি এখনো পৃথিবীতে শিকড়ই গাড়তে পারেনি,
তার শিকড় ছিঁড়ে নতুন মাটি দিলে সে বাঁচবে তো!

কেউ বলতো—
“বয়স হলে কে দেখবে?”
আমি বলতাম— “টাকা দিয়ে সেবা কিনে নেবো।”
কিন্তু এখন বুঝি—
মনকে সেবা দেওয়া যায় না টাকায়।

আমি ধরেই নিয়েছিলাম
ভালোবাসার আরেক নাম ‘ত্যাগ’।
এই স্বাধীনতা—
যার জন্য এত কিছু ছাড়তে হয়েছিল,
সেই স্বাধীনতা মাঝে মাঝে
ফাঁসির দড়ির মতো গলায় চেপে বসে।

তবু, এত কিছু সত্ত্বেও আমি কাউকে দোষ দিই না।
কারণ আমি জানি—
এই সমাজ ভালোবাসে রঙিন ছবি,
কালো-সাদা জীবন নয়।

তাই এই চিঠিটা রেখে যাচ্ছি—
তাদের জন্য, যারা একদিন আমার মতো
চুপচাপ হাঁটতে হাঁটতে,
হাঁপিয়ে উঠবে।

আমার কোনো প্রত্যাশা নেই কারো কাছে।
শুধু ইশ্বরের কাছে চাই—
আমার বিদায় যেন হয়
নিজের দেহ-মন নিয়ে,
অসুস্থতা বা অপ্রয়োজনীয় হয়ে নয়।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x