রান্নাঘরে নারীবাদী (প্রেমের কবিতা) – হুমায়ুন আজাদ

তুমি এসেছিলে লিসবন আর আমি দূর ঢাকা থেকে;

দেখা হয়েছিলো গ্রান্টস হাউজের উষ্ণ রান্নাঘরে;

রাঁধছিলে তুমি পোর্ক ও পোটটো; আমার শুঁটকি রান্না দেখে

চেয়ে রয়েছিলে দুই নীল চোখ বিষ্ময়ে পুরো ভ’রে।

‘হাই’, হেসে বলেছিলে,’কোথা থেকে যেনো তুমি?’

‘বাঙলাদেশ; আর ‘তুমি?’-বলেছিলে, ‘আমি পর্তুগাল।’

‘বাঙলাদেশ?’ চিনতে পারো নি;-সাগর না মরুভূমি;

লজ্জা তোমার গন্ডদেশকে ক’রে তুলেছিলো আরো লাল।

তারপর আমরা অনেক রেঁধেছি; বুঝেছি রান্নায়ও আছে সুখ।

তুমি খুব সুখে খেয়েছো শুঁটকি, ভর্তা, বিরিয়ানি, মাছ, ভাত,

আমিও খেয়েছি পোর্ক ও পোটেটো; স্বাদে ভ’রে গেছে মুখ;

কথা ব’লে ব’লে বুঝতে পারি নি গভীর হয়েছে রাত।

”নারীবাদী আমি’, বলেছিলে. ‘খুবই ঘৃণা করি প্রেম আর বিয়ে,

প্রেম বাজে কথা; বিয়ে? ওহ গশ! খুবই নোংরা কাজ।’

‘প্রেম বেশ লাগে’, বলেছি আস্তে, ‘কখনো বিবাহ নিয়ে

ভাবি নি যদিও; মনে হয় বিবাহের কোনো দরকার নেই আজ।’

চুমো খেতে খেতে ঘুমিয়েছি আমরা; বহু রাত গেছে সুখে,

আমাদের দেহে বেজেছে অর্গ্যান, ব্যাগপাইপ রাশিরাশি;

একরাতে দেখি কী যেনো জমেছে তোমার সুনীল চোখে,

আধোঘুমে ব’লে উঠেছিলে, ‘প্রিয়, তোমাকে যে ভালোবাসি।’

কেঁপে উঠেছিলো বুক সেই রাতে; বেশি নয়, আট মাস পরে

বলেছিলে, ‘চলো বিয়ে করি, আমার এখন বিয়ের ইচ্ছে ভারি।’

চুমো থেকে আমি পিছলে পড়েছি, ফিরেছি নিজের ঘরে;

‘চলো বিয়ে করি, চলো বিয়ে করি’, প্রতিটি চুমোর পরে;

এভাবেই , প্রিয়, একদিন হলো আমাদের চিরকাল ছাড়াছাড়ি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *