যমুনাবতী – শঙ্খ ঘোষ।

যমুনাবতী – শঙ্খ ঘোষ | বাংলা কবিতা বিশ্লেষণ

শঙ্খ ঘোষ রচিত “যমুনাবতী” বাংলা সাহিত্যের একটি ঐতিহাসিক ও সামাজিক চেতনামূলক কবিতা, যেখানে কবি নারীশক্তি ও বিপ্লবী চেতনার মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছেন। কবিতাটির প্রথম লাইন “নিভন্ত এই চুল্লীতে মা একটু আগুন দে” পাঠককে সাথে সাথেই এক গভীর সংগ্রাম ও প্রতিবাদের জগতে নিয়ে যায়।

কবিতার সারাংশ

এই কবিতায় কবি যমুনাবতী নামক এক নারী চরিত্রের মাধ্যমে নারীশক্তি, বিপ্লবী চেতনা এবং সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের গল্প বলেছেন। কবিতাটিতে নারীদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা শক্তির প্রকাশ, সামাজিক বাধা অতিক্রমের দৃঢ়সংকল্প এবং পরিবর্তনের জন্য আত্মত্যাগের মর্মস্পর্শী বর্ণনা রয়েছে। কবি দেখিয়েছেন কীভাবে একজন সাধারণ নারী অসাধারণ শক্তির অধিকারী হতে পারে যখন সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।

রূপক বিশ্লেষণ

কবিতায় “নিভন্ত চুল্লী” একটি শক্তিশালী রূপক হিসেবে কাজ করেছে, যা ম্রিয়মাণ মানবিকতা ও বিপ্লবী চেতনাকে নির্দেশ করে। “আগুন” এখানে বিদ্রোহ ও পরিবর্তনের শক্তির প্রতীক। “খাঁচাতে বন্দী পায়রা” সমাজে আবদ্ধ নারীশক্তির রূপক। “যমুনাবতী সরস্বতী” শিক্ষা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারীজাগরণের প্রতীক।

প্রধান রূপকসমূহ

নিভন্ত চুল্লী – ম্রিয়মাণ মানবিকতার প্রতীক; আগুন – বিপ্লবী চেতনার প্রতীক; বন্দী পায়রা – সমাজে আবদ্ধ নারীশক্তির প্রতীক; যমুনাবতী – নারীজাগরণের প্রতীক; বারুদ – সংগ্রামের শক্তির প্রতীক; বিষের টোপর – বিপ্লবের ঝুঁকি ও বেদনার প্রতীক।

কবির উদ্দেশ্য ও সাহিত্যধারা

শঙ্খ ঘোষ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি, যিনি তার রাজনৈতিক ও সামাজিক চেতনার জন্য পরিচিত। এই কবিতায় তার উদ্দেশ্য ছিল নারীশক্তির জাগরণ এবং সামাজিক পরিবর্তনে নারীদের ভূমিকা তুলে ধরা। এটি সামাজিক সচেতনতামূলক কবিতা ও নারীবাদী কবিতার মিশ্র ধারায় রচিত, যেখানে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে contemporary issues ফুটে উঠেছে।

আবেগ বিশ্লেষণ

কবিতায় গভীর বেদনা, সংগ্রামের দৃঢ়সংকল্প, মাতৃ-কন্যার সম্পর্কের মর্মস্পর্শী বর্ণনা এবং সামাজিক পরিবর্তনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পেয়েছে। কবির ভাষায় “হায় তোকে ভাত দিই কী করে যে ভাত দিই হায়” – এই লাইনের মধ্যে যে মাতৃহৃদয়ের বেদনা ও অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে, তা পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করে। আবার “চলল মেয়ে রণে চলল” – এই পংক্তিতে যে দৃঢ়তা ও সংকল্পবদ্ধতা প্রকাশ পেয়েছে, তা পাঠকের মনে সাহস ও উদ্দীপনা জাগায়।

কবিতার কাঠামো বিশ্লেষণ

কবিতাটি বিভিন্ন ছন্দ ও গঠনের সমন্বয়ে রচিত, যেখানে প্রতিটি অংশ যমুনাবতীর সংগ্রামের একটি বিশেষ দিক উপস্থাপন করে। কবিতার গঠনশৈলীতে রয়েছে traditional এবং modern poetic forms এর মিশ্রণ।

শৈলীগত বৈশিষ্ট্য

কবি lyrical এবং narrative style এর সমন্বয়ে গভীর সামাজিক বার্তা প্রকাশ করেছেন। তাঁর শব্দচয়নে রয়েছে folk elements এবং modern sensibility এর uncommon combination। repetitive patterns এবং rhythmic variations কবিতাকে করেছে আরও শক্তিশালী এবং impactful।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট

এই কবিতায় বাংলার গ্রামীণ সমাজ ও নারীজীবনের realities এর ছোঁয়া রয়েছে। কবি বাংলাদেশ/পশ্চিমবঙ্গের social structure এবং নারীদের struggle কে তার কবিতার background হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এই কবিতার মাধ্যমে তিনি নারী শিক্ষা, নারী স্বাধীনতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।

শিক্ষণীয় দিক

কবিতাটি পাঠককে শেখায় যে সামাজিক পরিবর্তন শুধু বাহ্যিক সংগ্রাম নয়, বরং এটি internal transformation থেকেই শুরু হয়। এটি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে নারীশক্তি যখন জাগ্রত হয়, তখন তা সমগ্র সমাজকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে। কবিতাটি collective struggle এবং individual courage এর মধ্যে interconnection কে highlight করে।

মেটা ডেসক্রিপশন

শঙ্খ ঘোষের “যমুনাবতী” কবিতার সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ। কবিতার রূপক, ছন্দ, শৈলী ও সামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়ে গভীর আলোচনা। প্রথম লাইন “নিভন্ত এই চুল্লীতে মা একটু আগুন দে” সহ সমগ্র কবিতার ব্যাখ্যা।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)

কবিতাটির মূল বিষয়বস্তু কী?

কবিতাটির মূল বিষয়বস্তু হলো নারীশক্তির জাগরণ, সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং বিপ্লবী চেতনার মাধ্যমে পরিবর্তন সাধন। কবিতাটি যমুনাবতী নামক এক নারী চরিত্রের মাধ্যমে নারীদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা শক্তির প্রকাশ ঘটিয়েছে।

কবিতার প্রধান রূপকগুলি কী কী?

প্রধান রূপকগুলি হলো: নিভন্ত চুল্লী, আগুন, বন্দী পায়রা, যমুনাবতী, বারুদ, এবং বিষের টোপর – যারাそれぞれ বিভিন্ন সামাজিক ও মানসিক অবস্থার প্রতীক।

শঙ্খ ঘোষের কবিতার বৈশিষ্ট্য কী?

শঙ্খ ঘোষের কবিতায় সাধারণত রাজনৈতিক চেতনা, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রকাশ ঘটে। তাঁর ভাষায় lyrical quality এবং intellectual depth এর uncommon combination দেখা যায়।

কবিতাটির প্রথম লাইন কী?

কবিতাটির প্রথম লাইন: “নিভন্ত এই চুল্লীতে মা একটু আগুন দে” যা সরাসরি পাঠককে কবিতার মূল mood এবং thematic concern এ নিয়ে যায়।

কবিতাটি কোন ধারার অন্তর্গত?

কবিতাটি আধুনিক বাংলা কবিতার সামাজিক-রাজনৈতিক ধারা এবং নারীবাদী কবিতার অন্তর্গত, যেখানে historical narrative এর মাধ্যমে contemporary social issues কে address করা হয়েছে।

কবিতাটির বিশেষত্ব কী?

কবিতাটির বিশেষত্ব হলো এর powerful imagery এবং folk narrative style এ গভীর রাজনৈতিক ও সামাজিক commentary। কবিতাটি personal এবং political কে seamlessly connect করে।

কবিতাটির শেষ লাইনের তাৎপর্য কী?

কবিতাটির শেষ লাইন “নিভন্ত এই চুল্লীতে বোন আগুন ফলেছে” – এই লাইনের মাধ্যমে কবি দেখিয়েছেন যে সংগ্রামের আগুন একবার জ্বলে উঠলে তা থামানো যায় না, এবং এই বিপ্লবী চেতনা এক নারী থেকে অন্য নারীতে ছড়িয়ে পড়ে।

© Kobitarkhata.com – কবি: শঙ্খ ঘোষ

One more unfortunate
Weary of breath
Rashly importunate
Gone to her death. – Thomas Hood

নিভন্ত এই চুল্লীতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে।
নোটন নোটন পায়রাগুলি
খাঁচাতে বন্দী
দু’এক মুঠো ভাত পেলে তা
ওড়াতে মন দি’।

হায় তোকে ভাত দিই কী করে যে ভাত দিই হায়
হায় তোকে ভাত দেব কী দিয়ে যে ভাত দেব হায়

নিভন্ত এই চুল্লী তবে
একটু আগুন দে –
হাড়ের শিরায় শিখার মাতন
মরার আনন্দে।
দু’পারে দুই রুই কাৎলার
মারণী ফন্দী
বাঁচার আশায় হাত-হাতিয়ার
মৃত্যুতে মন দি’।

বর্গী না টর্গী না, যমকে কে সামলায়!
ধার-চকচকে থাবা দেখছ না হামলায়?
যাস্ নে ও-হামলায়, যাস্ নে।।

কান্না কন্যার মায়ের ধমনীতে আকুল ঢেউ তোলে, জ্বলে না-
মায়ের কান্নায় মেয়ের রক্তের উষ্ণ হাহাকার মরে না-
চলল মেয়ে রণে চলল।
বাজে না ডম্বরু, অস্ত্র ঝন্ ঝন্ করে না, জানল না কেউ তা
চলল মেয়ে রণে চলল।
পেশীর দৃঢ় ব্যথা, মুঠোর দৃঢ় কথা, চোখের দৃঢ় জ্বালা সঙ্গে
চলল মেয়ে রণে চলল।

নেকড়ে-ওজর মৃত্যু এল
মৃত্যুরই গান গা-
মায়ের চোখে বাপের চোখে
দু-তিনটে গঙ্গা।
দূর্বাতে তার রক্ত লেগে
সহস্র সঙ্গী
জাগে ধক্ ধক্, যজ্ঞে ঢালে
সহস্র মণ ঘি।

যমুনাবতী সরস্বতী কাল যমুনার বিয়ে
যমুনা তার বাসর রচে বারুদ বুকে দিয়ে
বিষের টোপর নিয়ে।
যমুনাবতী সরস্বতী গেছে এ পথ দিয়ে
দিয়েছে পথ, গিয়ে।

নিভন্ত এই চুল্লীতে বোন আগুন ফলেছে।

আরো কবিতা পড়তে ক্লিক করান। শঙ্খ ঘোষ।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x