মাকে আমার পড়ে না মনে।
শুধু কখন খেলতে গিয়ে হঠাৎ অকারণে
একটা কি সুর গুনগুনিয়ে কানে আমার বাজে,
মায়ের কথা মিলায় যেন আমার খেলার মাঝে।
মা বুঝি গান গাইত আমার দোলনা ঠেলে ঠেলে –
মা গিয়েছে, যেতে যেতে গানটি গেছে ফেলে।
মাকে আমার পড়ে না মনে।
শুধু যখন আশ্বিনেতে ভোরে শিউলিবনে
শিশির-ভেজা হাওয়া বেয়ে ফুলের গন্ধ আসে
তখন কেন মায়ের কথা আমার মনে ভাসে।
কবে বুঝি আনত মা সেই ফুলের সাজি বয়ে –
পুজোর গন্ধ আসে যে তাই মায়ের গন্ধ হয়ে।
মাকে আমার পড়ে না মনে।
শুধু যখন বসি গিয়ে শোবার ঘরের কোণে,
জানলা দিয়ে তাকাই দূরে নীল আকাশের দিকে-
মনে হয় মা আমার পানে চাইছে অনিমিখে।
কোলের ‘পরে ধ’রে কবে দেখত আমায় চেয়ে,
সেই চাউনি রেখে গেছে সারা আকাশ ছেয়ে।
মনে পড়া – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাকে নিয়ে অনবদ্য বাংলা কবিতা
“মনে পড়া” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেইসব কবিতার অন্যতম, যেগুলিতে ব্যক্তিগত স্মৃতি, আবেগ এবং অস্তিত্বের গভীরতর অনুভবের ছোঁয়া পাওয়া যায়। এই কবিতার মূল উপজীব্য একটি শিশুর স্মৃতিতে মায়ের অনুপস্থিতি—যা সে অনুভব করে গন্ধে, গানে, আকাশের দিকে তাকিয়ে কিংবা শিউলি ফুলের স্নিগ্ধতায়। এখানে “মা” কোনো বাস্তব চরিত্র নয়, বরং এক অনুভব, এক অপূর্ণতা, এক রুদ্ধ কান্না।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কবিতার মাধ্যমে পাঠককে একটি অনবদ্য মানসিক যাত্রায় নিয়ে যান। কবির বর্ণনায় দেখা যায়—শিশুটি মায়ের মুখ মনে করতে পারে না, কিন্তু মায়ের গলার গান, দোলনায় দোল খাওয়ানো, কিংবা পূজোর শিউলি ফুলের ঘ্রাণে সে যেন অস্পষ্টভাবে মায়ের অস্তিত্ব টের পায়। এটা কেবলমাত্র মা-সন্তানের সম্পর্ক নয়, বরং মানব জীবনের গভীর অভাব-অনুভূতি, স্মৃতি আর বিস্মৃতির দ্বন্দ্ব।
কবিতাটির গঠন অত্যন্ত সহজ, কিন্তু এর ভাব গভীর। প্রতিটি স্তবকে একটি করে অনুভব বা পরিবেশকে কেন্দ্র করে মায়ের কথা মনে পড়ার সূত্র পাওয়া যায়—খেলার সময়, শিউলি ফুলের গন্ধে, অথবা জানলার পাশে বসে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে। এটি মূলত এক ধরনের নস্টালজিয়া, যেখানে মা একটি অলৌকিক ছায়ার মতো ঘুরে বেড়ায়, চোখের সামনে না থাকলেও হৃদয়ে গাঁথা থাকে।
“মনে পড়া” কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে মাকে নিয়ে লেখা অন্যতম আবেগঘন কবিতা। বাংলা কবিতায় মায়ের স্থান সর্বোচ্চ আবেগ এবং মানবিকতার প্রতীক, আর রবীন্দ্রনাথ তার কাব্যভাষায় সেই অনুভূতিকে নির্মেদ, অথচ স্নিগ্ধভাবে প্রকাশ করেছেন। এটি শিশু-মনের একান্ত অনুভব, যা সময়ের সাথে মুছে না গিয়ে বরং নতুনরূপে ফুটে ওঠে।
যারা মাকে নিয়ে বাংলা কবিতা খুঁজছেন, আবেগপ্রবণ সাহিত্য ভালোবাসেন, কিংবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার গভীরতা অনুভব করতে চান, তাদের জন্য “মনে পড়া” একটি অবশ্যপাঠ্য সৃষ্টি। কবিতাটি শুধুই মায়ের অভাব নয়, বরং স্মৃতির অভিঘাতে তৈরি এক নীরব অনুভব—যা সময়ের আকাশে অনিমিখে তাকিয়ে থাকা এক চাহনির মতো।
Focus Keywords: মনে পড়া, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
Secondary Keywords: মাকে নিয়ে বাংলা কবিতা, রবীন্দ্রনাথের কবিতা, মায়ের স্মৃতি, বাংলা আবেগপ্রবণ কবিতা, শিউলি ফুলের গন্ধ, মা ও আকাশ
এই SEO বর্ণনা “মনে পড়া – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর” কবিতার সারাংশ, থিম, আবেগ এবং পাঠকের জন্য প্রাসঙ্গিকতাকে সামনে এনে তৈরি করা হয়েছে। এটি সার্চ ইঞ্জিনে ভালো র্যাঙ্ক করবে এবং সাহিত্যের পাঠকদের টার্গেট করবে—বিশেষ করে যারা মাকে নিয়ে বাংলা কবিতা খুঁজে থাকেন।