আমি এখন একাকী মাঝরাত
মাধুরীলতা পাশে ঘুমিয়ে আছে,
তুমি এখন শিলাইদহে বোটে
নিবিড় চিঠি ইন্দিরার কাছে।
তোমার বোটে জ্যোৎস্না ফটফটে
আমার কথা ভুলে যাবার মতো,
উপযুক্ত স্নিগ্ধ পটভূমি
জ্যোৎস্নারাত আকাশ যথাযথ।
এখন তুমি প্রেমিক কবি চিঠি
এখন তুমি হারানো বউঠান—
বিবির কথায় আত্মহারা হও
ওকে পাঠাও নতুন লেখা গান।
আমি তোমার আটপৌরে বউ
তোমাকে আমি সত্যি ভালবাসি,
আমার শরীর যখন তুমি নাও
যখন তোমার শোভন মধুর বাঁশি—
বুঝতে পারি অন্য কাউকে ভাবছ
আমার বুকে কোমল রঙ সুখ,
অথচ তুমি আমাকে দেখছ না!
দিগন্তে কার গভীর স্মিতমুখ ?
এসব কথা তোমাকে বলবো না
আমার বলার ভাষাও ভালো নয়,
রাগরাগিণীর সুর চিনতে আজও
আমার দারুণ ভুলভ্রান্তি হয়।
আমি একটা বোকা গ্রাম্য মেয়ে
তোমার লেখা বুঝতে ভয়ে সারা,
আমায় তোমার কীবা প্রয়োজন ?
রান্নাঘর আর শয্যাকক্ষ ছাড়া ?
প্রথম প্রথম তোমার ছন্দ ভুল
শুধরে দিতেন নতুন বউঠান,
এখন যেমন বিবি তোমার লেখা
অসামান্য সুরে বসিয়ে গান।
আমি নীরব একাকী মাঝরাতে
আমার কোনো নিজস্ব সুর নেই,
যে সুর দিয়ে তোমার ঘুম ভাঙে
তোমার সে ঘুম আমায় ছুঁতে নেই।
যেদিন তুমি পদ্মা থেকে ফেরো
বিবির মতো আঁট করে চুল বাঁধি,
তবুও তুমি আবার চিঠি লেখো
শুনছ আমি লুকিয়ে একা কাঁদি।
যেদিন তোমার অমন মুখে মেঘ
আমি সেদিন চোখে কাজল পরি,
আত্মঘাতী বউঠানের মতো
পিঠের ওপর চুলটা মেলে ধরি।
তবুও তুমি মেঘ হয়েই থাকো
আর কীভাবে কত নকল করি ?
যারা তোমায় মেঘ বানিয়ে দেয়–
তাদের মতো অধরা অপ্সরী…..
আমি তো নই,এটাই আমার দোষ !
আমার দুঃখে আভিজাত্য নেই,
আমার অশ্রু লেখনি কোনদিন
আমার ক্রোধেও রুচির ছাপ নেই ।
আমার কথা ফুরিয়ে এল যেন
এসব কথা ফুরিয়ে যাওয়াই ভালো
তুমি এখন শিলাইদহে একা
ফুটছে প্রথম রূপের মতো আলো !
প্রাণাধিকেষু – বীথি চট্টোপাধ্যায় | প্রেম, বেদনা ও আত্মপরিচয়ের গভীর কবিতা
“প্রাণাধিকেষু – বীথি চট্টোপাধ্যায়” একটি হৃদয়বিদারক আধুনিক বাংলা কবিতা, যেখানে ভালোবাসা, একাকিত্ব, ঈর্ষা ও আত্মপরিচয়ের প্রশ্ন উঠে এসেছে গভীরভাবে। “আমি এখন একাকী মাঝরাত” এই লাইন দিয়ে কবিতা শুরু হলেও, এতে একটি পরিণত নারীর মনের জটিল অনুভূতিগুলি অত্যন্ত সংবেদনশীলভাবে চিত্রিত হয়েছে।
এই কবিতাটি এক স্ত্রীর আত্মপ্রকাশ, যার স্বামী একজন বিশিষ্ট কবি। স্বামীর শিল্পীসত্তার উন্মাদনায়, তার ব্যক্তিগত ভালোবাসা, তার নারীজ উপলব্ধি, ঈর্ষা আর একান্ত চাওয়া-পাওয়া – সবকিছুই কবিতায় অদ্ভুতভাবে মিশে গেছে। “তুমি এখন শিলাইদহে বোটে, নিবিড় চিঠি ইন্দিরার কাছে”—এই পংক্তিতে রবীন্দ্রনাথের বউঠানকে ঘিরে এক মিথ বাস্তবতার সঙ্গে একাত্ম হয়ে উঠে আসে।
কবিতাটি যেন একান্ত ব্যক্তিগত অথচ সার্বজনীন। “আমি তোমার আটপৌরে বউ”—এই স্বীকারোক্তি শুধু একজন গৃহিণীর নয়, বরং সেই সকল নারীর প্রতিনিধিত্ব করে, যারা শিল্পীপ্রেমিক কিংবা খ্যাতিমান পুরুষদের পাশে থেকেও উপেক্ষিত। প্রেমিকা নয়, পত্নী হয়ে বেঁচে থাকা নারীর নিঃসঙ্গ আত্মকথন হয়ে ওঠে এটি।
কবিতায় বারবার ফুটে উঠেছে শারীরিক ভালোবাসা ও মানসিক বিচ্ছিন্নতার দ্বন্দ্ব। “আমার শরীর যখন তুমি নাও”—এই পংক্তি যেমন কামনার প্রতিচ্ছবি, তেমনি পরের লাইনগুলিতে যে অনুভব ফুটে উঠেছে, তা হলো প্রিয়জনের মনে অন্য নারীর উপস্থিতি।
“আমি একটা বোকা গ্রাম্য মেয়ে”—এই স্বীকারোক্তি আত্মদীনতার প্রকাশ নয়, বরং সমাজে ‘আধুনিক’ ও ‘সাংস্কৃতিক’ নারীর সঙ্গে এক সাধারণ স্ত্রীর দ্বন্দ্বকে তুলে ধরে। এখানে রান্নাঘর ও শয্যাকক্ষ – এই দুটি জায়গাই নারীর পরিচিতি হয়ে দাঁড়ায়, যা একধরনের গভীর ব্যঙ্গের ইঙ্গিত দেয়।
এই কবিতা এক প্রান্তিক নারীর আত্মমর্যাদা, প্রেমে হেরে যাওয়ার কষ্ট, আবার নিজের মধ্যে জীবনের জন্য অদম্য আকাঙ্ক্ষা বহন করে। “আমার দুঃখে আভিজাত্য নেই”—এই পংক্তি কেবল একটি স্ত্রীর নয়, বরং সেই সকল নারীর কণ্ঠস্বর যারা ভালোবাসা পেয়েও বঞ্চিত হয়েছেন শ্রদ্ধা থেকে।
SEO দৃষ্টিকোণ থেকে, “প্রাণাধিকেষু – বীথি চট্টোপাধ্যায়” কবিতাটি এমন পাঠকের জন্য উপযোগী যারা সার্চ করেন: “আধুনিক বাংলা কবিতা”, “স্ত্রীর একাকিত্বের কবিতা”, “নারীর আত্মকথন বাংলা সাহিত্য”, “বীথি চট্টোপাধ্যায় প্রেমের কবিতা”, “প্রেম ও বেদনার কবিতা”, “রবীন্দ্রনাথ ও কাদম্বিনী প্রসঙ্গ কবিতায়” ইত্যাদি বিষয়ে।
এই বর্ণনা সার্চ ইঞ্জিন বটের জন্য তৈরি করা হয়েছে যাতে এটি সঠিকভাবে ইন্ডেক্স হয় এবং কবিতার গভীর ভাবার্থ ও আবেগ গুগল সহ সকল সার্চ প্ল্যাটফর্মে সহজে উপলব্ধ হয়। এটি বাংলা কবিতার নারীস্বরের এক শক্তিশালী নিদর্শন।
ফোকাস কীওয়ার্ড:
- প্রাণাধিকেষু
- বীথি চট্টোপাধ্যায়
- আমি এখন একাকী মাঝরাত
- নারীর আত্মকথন
- স্ত্রীর একাকিত্ব
- আধুনিক বাংলা কবিতা
- প্রেম ও বেদনার কবিতা
- রবীন্দ্রনাথ ও কাদম্বিনী প্রসঙ্গ
- নারীর দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রেম
- বাংলা কবিতার SEO বর্ণনা
“প্রাণাধিকেষু” কেবল একটি কবিতা নয়, এটি একটি প্রেমিক নারীর হাহাকার, উপেক্ষার বিরুদ্ধে তার মৌন প্রতিবাদ এবং তার একান্ত মনের কথা। বীথি চট্টোপাধ্যায় এই কবিতার মাধ্যমে যে আবেগ-সত্য তুলে ধরেছেন, তা একাধারে ব্যক্তিগত এবং সমাজমনস্তত্ত্বের গভীর প্রতিফলন।