কবিতার খাতা
- 8 mins
প্রতিদান – পল্লীকবি জসিম উদ্দীন।
প্রতিদান – জসীম উদ্দীন
কবিতাটি “প্রতিদান” জসীম উদ্দীনের এক গভীর মানবিক অনুভূতির প্রকাশ। এখানে কবি তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, ক্ষতি, এবং তার প্রতিদানের অনুভূতি গুলোকে আবেগপ্রবণ এবং প্রতীকী ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন। কবিতার ভাষা সরল হলেও তা শক্তিশালী একটি বার্তা প্রদান করে, যেখানে প্রেম, শোক, ক্ষতি, এবং প্রতিশোধের অনুভূতির মিশ্রণ রয়েছে।
কবিতার সারাংশ
কবিতাটির মূল বিষয় হলো এক ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ সংগ্রাম এবং ক্ষতির প্রতিদান প্রদান। কবি এখানে ব্যক্তিগত আঘাত এবং সেই আঘাতের পর যে অনুভূতি তৈরি হয়, তা তুলে ধরেছেন। একদিকে, কবি শত্রুর প্রতি সহানুভূতি এবং ভালবাসার প্রতিফলন দেখাচ্ছেন, অন্যদিকে, ক্ষতিপূরণ ও প্রতিশোধের অনুভূতি প্রকাশ করছেন। কবির ভাষায় আমরা দেখতে পাই, যাকে শত্রু হিসেবে দেখা হয়েছে, তার প্রতি একটি অদ্ভুতভাবে গভীর আবেগ এবং শ্রদ্ধা থাকে।
রূপক বিশ্লেষণ
কবিতায় কবি “ঘর ভাঙা” এবং “কুল বাঁধা” রূপক ব্যবহার করেছেন যা সম্পর্কের ভাঙন এবং পুনর্নির্মাণের ধারণাকে চিত্রিত করে। “বিষে ভরা বাণ” এবং “ফুল দিয়ে দান” রূপকগুলি মানুষের অভ্যন্তরীণ শত্রুতা এবং ভালোবাসার পবিত্রতা ফুটিয়ে তোলে। এখানে, কবি নিজেকে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিদান দেওয়ার মাধ্যমে একটি ধর্মীয় বা মানবিক দায়বদ্ধতার কথা বলেন, যেখানে শত্রু বা ক্ষতিকে ফুলে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন।
কবির উদ্দেশ্য ও সাহিত্যধারা
কবি জসীম উদ্দীন “প্রতিদান” কবিতার মাধ্যমে মানুষের অন্ধ প্রতিশোধের পরিবর্তে, আন্তরিকতা ও মানবিকতা প্রদর্শন করেছেন। কবির উদ্দেশ্য হলো মানুষের ভেতর থাকা ভালোবাসা এবং শত্রুতা একসাথে মিশিয়ে এক নতুন সমাজ ও সম্পর্কের ধারণা তৈরি করা। কবি এখানে একদিকে শত্রুতা এবং অন্যদিকে সেই শত্রুতা থেকে উঠে আসা মানবিক অনুভূতির এক অদ্ভুত মিশ্রণ উপস্থাপন করেছেন। এই কবিতাটি একটি মানবিক কবিতা, যেখানে প্রতিদান এবং ভালোবাসার প্রসঙ্গ নিয়ে গভীর চিন্তা ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
আবেগ বিশ্লেষণ
এই কবিতার আবেগ অত্যন্ত শক্তিশালী এবং গভীর। কবি তার ভাঙা হৃদয়ের যন্ত্রণা, শত্রুদের প্রতি অনুভূত শত্রুতা, এবং সেই একই শত্রুদের প্রতি গভীর সহানুভূতি এবং ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। “যে মোরে করিল পথের বিবাগী, – পথেপথে আমি ফিরি তার লাগি”—এই পংক্তি কবির আবেগকে প্রকাশ করে, যেখানে শত্রুর প্রতি একধরনের দুঃখ, সমবেদনা এবং সহানুভূতির অনুভূতি রয়েছে। কবি শত্রুতা এবং ভালোবাসার যে মিশ্রণ তৈরি করেছেন, তা পাঠককে ভাবায় এবং এই সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে চিন্তা করতে বাধ্য করে।
শোক, সম্পর্ক ও প্রতিদান
কবিতাটির সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো শোক, সম্পর্ক, এবং প্রতিদানের মিশ্রণ। “বিষে ভরা বাণ” এবং “ফুল দিয়ে দান” দুটি রূপক সম্পর্কের ভাঙন এবং পুনর্নির্মাণের দিকে নির্দেশ করে। কবি শত্রুদের প্রতি এমন এক ধরনের অনুভূতি প্রকাশ করছেন যেখানে ক্ষতি করার পরও, তাদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার অনুভূতি গড়ে তোলা সম্ভব। কবি বুঝিয়ে দেন যে, জীবন একটি দুঃখ এবং সংগ্রামের জায়গা হতে পারে, কিন্তু প্রতিদান এবং সহানুভূতির মাধ্যমে সেই কষ্টকে সুস্থতায় পরিণত করা সম্ভব।
স্বাধীনতা এবং প্রতিক্রিয়া
কবিতার এক গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো স্বাধীনতা এবং প্রতিক্রিয়ার সংমিশ্রণ। কবি এখানে, স্বাধীনতার পর যেসব আঘাত এবং ক্ষতি সহ্য করা হয়েছে, তা পুরস্কৃত এবং প্রতিক্রিয়া আকারে ফিরিয়ে দেওয়ার ভাবনা প্রকাশ করেছেন। কবির ভাষায়, “যে আমার ঘর ভাঙিয়াছে, আমি বাঁধি তার ঘর” এই পংক্তি প্রতিদানের শক্তিকে গুরুত্ব প্রদান করে। কবি স্বাধীনতা সংগ্রামের পরেও যে হারানো কিছু থাকে, তা ফিরে পাওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে চিন্তা করেন।
মেটা ডেসক্রিপশন
বাংলা কবিতা “প্রতিদান” এর বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যা। কবিতার রূপক, উদ্দেশ্য এবং আবেগপূর্ণ বিশ্লেষণ যা SEO জন্য উপযোগী। “প্রতিদান” কবিতাটি সম্পর্কের ভাঙন, শোক এবং প্রতিশোধের প্রতি কবির দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে।
FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)
কবিতাটি কোন সাহিত্যধারায় পড়ে?
এটি প্রেম, প্রতিশোধ ও মানবিক আবেগের ধারায় অন্তর্গত একটি কবিতা।
কবিতার মূল রূপক কী?
“ঘর ভাঙা”, “কুল বাঁধা”, “বিষে ভরা বাণ” এবং “ফুল দিয়ে দান” কবিতার রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
কবির উদ্দেশ্য কী?
কবি স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং শোকের অনুভূতির গুরুত্ব তুলে ধরতে চেয়েছেন।
© Kobitarkhata.com – কবি: জসীম উদ্দীন
আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা, আমি বাঁধি তার ঘর,
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।
যে মোরে করিল পথের বিবাগী, –
পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি।
দীঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হরেছে মোর ;
আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর।
আমার এ কুল ভাঙিয়াছে যেবা আমি তার কুল বাঁধি,
যে গেছে বুকেতে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি;
সে মোরে দিয়েছে বিষে ভরা বাণ,
আমি দেই তারে বুকভরা গান;
কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম ভর,
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।
মোর বুকে যেবা কবর বেঁধেছে আমি তার বুক ভরি,
রঙিন ফুলের সোহাগ-জড়ান ফুল-মালঞ্চ ধরি ।
যে মুখে সে কহে নিঠুরিয়া বানী
আমি লয়ে সখি, তারি মুখখানি,
কত ঠাঁই হতে কত কি যে আনি, সাজাই নিরন্তর,
আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।