তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ- সৈয়দ শামসুল হক

তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ – সৈয়দ শামসুল হক

তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ – সৈয়দ শামসুল হক

কবিতার অংশ

তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার মানচিত্রের ভেতরে
যার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তেরোশো নদীর ধারা ;

তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার করতলে পাঙরাটির বুকে
যার ডানা এখন রক্ত আর অশ্রুতে ভেজা ;

তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার বৃষ্টিভেজা খড়ের কুটিরে
যার ছায়ায় কত দীর্ঘ অপেক্ষায় আছে সন্তান এবং স্বপ্ন ;

তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার তোমার নৌকার গলুইয়ে
যার গ্রীবা এখন ভবিষ্যতের দিকে কেটে চলেছে স্রোত ;

তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার মাছধরা জালের ভেতরে
যেখানে লেজে মারছে বাড়ি একটা রুপালী চিতল ;

তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার হালের লাঙলের ভতরে
যার ফাল এখন চিরে চলেছে পৌষের নবান্নের দিকে ;

তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার নেহাই ও হাতুড়ির সংঘর্ষের ভতরে
যার একেকটি স্ফুলিঙ্গে এখন আগুন ধরছে অন্ধকারে ;

তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার কবিতার উচ্চারণে
যার প্রতিটি শব্দ এখন হয়ে উঠছে বল্লমের রুপালী ফলা ;

তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার দোতারার টান টান তারের ভেতরে
যার প্রতিটি টঙ্কার এখন ইতিহাসকে ধ্বনি করছে ;

তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার লাল সূর্য্ আঁকা পতাকার ভেতরে
যার আলোয় এখন রঞ্জিত হয়ে উঠছে সাহসী বদ্বীপ ;

তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার অনাহারী শিশুটির কাছে
যার মুঠোর ভেতরে এখন একটি ধানের বীজ ;

তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার প্লাবনের পর কোমল পলিমাটিতে
যেখানে এখন অনবরত পড়ছে কোটি কোটি পায়ের ছাপ ।

কবিতার বিশ্লেষণ

“তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ” কবিতাটি **সৈয়দ শামসুল হকের** একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম, সংগ্রাম এবং পুনর্নির্মাণের প্রতীক হিসেবে দেখা যায়। কবিতার প্রতিটি স্তরে বাংলাদেশের অন্তর্নিহিত শক্তি, সংকট এবং পুনর্জন্মের চিত্র আঁকা হয়েছে। কবি দেশের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন, যেখানে প্রতিটি সঙ্কটের পর বাংলাদেশ পুনঃজীবিত হয়েছে।

এই কবিতার মাধ্যমে কবি তার দেশের যেসব কষ্ট ও সংগ্রামকে তুলে ধরেছেন, তা একটি অটুট জাতির পরিচয় বহন করে। কবিতার মধ্যে প্রতিটি চিত্র – নদী, নৌকা, খড়ের কুটির, মাছধরা জাল, লাঙল – সবই দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মানুষের সংগ্রামের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই প্রতীকগুলোর মাধ্যমে কবি দেশের পরিবর্তনশীল অবস্থা, সংগ্রাম, সংগ্রামের পরবর্তী জয় এবং ভবিষ্যতের প্রতীক তুলে ধরেছেন।

কবিতার বার্তা স্পষ্ট, যেখানে বাঙালি জাতির অতীতের সংগ্রাম এবং ভবিষ্যতের সংগ্রাম উন্মোচিত হচ্ছে। কবি বাংলাদেশকে তার আত্মবিশ্বাসী প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেছেন, যা একটি জাতির পুনর্জন্মের ক্ষমতা এবং প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।

কবিতায় যে **নদী** এবং **পাণির প্রবাহ** তুলে ধরা হয়েছে, তা বাংলাদেশের মানুষের জীবনধারা এবং সংস্কৃতির প্রতীক। নদী বাংলাদেশের মাটি এবং জীবনের মূল উপাদান, যা বাংলাদেশের জীবনধারা এবং তার সমৃদ্ধির পরিচয় দেয়।

প্রকৃতি ও সংগ্রামের চিত্র

কবিতার মধ্যে **প্রকৃতি** এবং **সংগ্রাম** সম্পর্কিত যে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তা বাংলাদেশের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। বিশেষভাবে, বাংলাদেশে যে অশান্তির ইতিহাস আছে, তা যুদ্ধ, সংগ্রাম এবং পুণর্জন্মের প্রতীক হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। এটি শুধু একটি জাতির নয়, বরং মানবতার বৃহত্তর প্রতীক, যা প্রতিটি জনগণের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের অদম্য ইচ্ছা ও শক্তি ফুটিয়ে তোলে।

বাংলাদেশে প্রতি আঘাতের পর জাতি উঠে দাঁড়িয়েছে। **রক্ত, অশ্রু, দুঃখ এবং সঙ্কট** অতীতে দেখা গেছে, কিন্তু প্রতিটি সময় দেশটি তার শক্তি ও আত্মবিশ্বাসে পুনঃজন্ম নিয়েছে।

কবিতার মধ্যে প্রতিটি চিত্র, যেমন **দোতারা** বা **বলা** — এটি দেশের সৃজনশীলতা এবং সংস্কৃতির গভীরতা প্রতিফলিত করে। আমাদের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে এগুলো সংগ্রাম, ত্যাগ এবং দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা দেখানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।

বাংলাদেশের পুনর্নির্মাণ

কবিতার শেষ অংশে **বাংলাদেশের পুনর্নির্মাণ** এবং **ভবিষ্যতের সম্ভাবনা** উন্মোচিত হয়েছে। কবি জানাচ্ছেন যে, একটি জাতি যখন বিপর্যস্ত হয়, তখন তার পুনরুত্থান ঘটে নতুন শক্তি ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে। **ধানের বীজ**, **পলিমাটি** এবং **পতাকা** — এগুলি দেশের শক্তি ও উন্নতির প্রতীক। এগুলো বাংলাদেশের শাশ্বততার এবং দেশকে প্রতিষ্ঠিত করার শক্তি সম্পর্কে আমাদের মনে করিয়ে দেয়।

কবিতার মাধ্যমে সৈয়দ শামসুল হক বাংলাদেশকে একটি **ফিনিক্সপাখি** হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যা প্রতিটি বিপর্যয়ের পর নিজেকে পুনরুদ্ধার করে এবং তার শক্তি ফিরে পায়।

**ফিনিক্স** এর প্রতীক দিয়ে কবি তুলে ধরেছেন, যে জাতি কখনও হারায় না, বরং প্রতিটি সংকটের পর নিজেকে আবার নতুন করে তৈরি করে এবং আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই কবিতাটি বাংলাদেশের এক অটুট জাতির আত্মবিশ্বাস এবং সংগ্রামের অনুপ্রেরণা প্রদান করে।

তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার মানচিত্রের ভেতরে
যার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তেরোশো নদীর ধারা ;
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার করতলে পাঙরাটির বুকে
যার ডানা এখন রক্ত আর অশ্রুতে ভেজা ;


তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার বৃষ্টিভেজা খড়ের কুটিরে
যার ছায়ায় কত দীর্ঘ অপেক্ষায় আছে সন্তান এবং স্বপ্ন ;
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার তোমার নৌকার গলুইয়ে
যার গ্রীবা এখন ভবিষ্যতের দিকে কেটে চলেছে স্রোত ;


তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার মাছধরা জালের ভেতরে
যেখানে লেজে মারছে বাড়ি একটা রুপালী চিতল ;
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার হালের লাঙলের ভতরে
যার ফাল এখন চিরে চলেছে পৌষের নবান্নের দিকে ;
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার নেহাই ও হাতুড়ির সংঘর্ষের ভতরে
যার একেকটি স্ফুলিঙ্গে এখন আগুন ধরছে অন্ধকারে ;


তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার কবিতার উচ্চারণে
যার প্রতিটি শব্দ এখন হয়ে উঠছে বল্লমের রুপালী ফলা ;
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার দোতারার টান টান তারের ভেতরে
যার প্রতিটি টঙ্কার এখন ইতিহাসকে ধ্বনি করছে ;
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার লাল সূর্য্ আঁকা পতাকার ভেতরে
যার আলোয় এখন রঞ্জিত হয়ে উঠছে সাহসী বদ্বীপ ;


তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার অনাহারী শিশুটির কাছে
যার মুঠোর ভেতরে এখন একটি ধানের বীজ ;
তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,
তুমি ফিরে এসেছ তোমার প্লাবনের পর কোমল পলিমাটিতে
যেখানে এখন অনবরত পড়ছে কোটি কোটি পায়ের ছাপ ।

দেশ প্রেমের কবিতা পড়তে ক্লিক করুন এখানে। সৈয়দ শামসুল হক

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x