ঘোষনা : ১৯৮৪ – রুদ্র মোহাম্মাদ শহিদুল্লাহ

ঘোষনা : ১৯৮৪ কবিতা – রুদ্র মোহাম্মাদ শহিদুল্লাহ

ঘোষনা : ১৯৮৪ – রুদ্র মোহাম্মাদ শহিদুল্লাহ

‘ঘোষনা : ১৯৮৪’ কবিতাটি রুদ্র মোহাম্মাদ শহিদুল্লাহের একটি অতি প্রভাবশালী কাজ, যা ১৯৮৪ সালে রচিত হয়েছিল। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং অর্থনৈতিক সংকটের প্রতি একটি তীব্র প্রতিবাদ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। কবিতার মাধ্যমে শহিদুল্লাহ তাঁর দেশের দুর্দশা, অসমতা, শোষণ, এবং বিশেষত ক্ষমতাসীনদের নির্বিকার আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় অভিযোগ করেছেন। তিনি দেশের জনগণের প্রতি সরকারের অবহেলা এবং দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন, যা তখনকার সমাজের পক্ষে অত্যন্ত বিষাক্ত ছিল। কবিতার মধ্যে অন্তর্নিহিত প্রতিবাদ এবং পরিবর্তনের আহ্বান রয়েছে, যা এখনো আমাদের বর্তমান সমাজের জন্য প্রাসঙ্গিক।

কবিতাটির প্রথম লাইন: “আমাদের নাগরিকবৃন্দ মলমূত্র ছাড়া আর কোনো ত্যাগেই উৎসাহী নয়।” এটি একটি চরম অশান্তি ও অস্থিরতার চিত্র তুলে ধরে, যেখানে সমাজের সাধারণ মানুষের প্রতি সরকারি প্রশাসনের অবহেলা এবং শোষণের বাস্তবতা ফুটে ওঠে। শহিদুল্লাহর কবিতা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, একজন নাগরিকের সঠিক অধিকার এবং সমাজের প্রতি নৈতিক দায়িত্ব কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এবং তা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার মধ্যে কিভাবে বিকৃত হয়েছে। এটি একটি গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে, যেখানে সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের অসংলগ্নতা এবং দায়িত্বহীনতা নির্ধারিত হয়েছে।

‘ঘোষনা : ১৯৮৪’ কবিতার মাধ্যমে শহিদুল্লাহ মূলত সেসব সমস্যার দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন, যেগুলি তখনকার সমাজে অবহেলিত ছিল। তিনি জনগণের সংগ্রাম, তাদের অধিকার অর্জনের জন্য টানাপোড়েন এবং রাষ্ট্রের শাসক গোষ্ঠীর নির্বিকারতাকে বিশ্লেষণ করেছেন। কবিতার প্রতিটি লাইন এমনকি প্রতিটি শব্দ জনগণের অবহেলিত অবস্থার প্রতিবাদ করে এবং তাদের একত্রিত হয়ে এই অব্যবস্থার বিরুদ্ধে কাজ করার আহ্বান জানায়। শহিদুল্লাহ বুঝিয়েছেন যে রাষ্ট্রের শাসকরা জনগণের প্রতি নিজেদের কর্তব্য ভুলে গিয়ে শুধুমাত্র ক্ষমতার কুক্ষিগত থাকেন, ফলে জনগণের মৌলিক অধিকার বিপন্ন হয়।

শহিদুল্লাহ এই কবিতার মাধ্যমে একটি বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেন, যেখানে সমাজের প্রতিটি সদস্য, সবার যোগ্যতার জন্য সংগ্রাম করে। তার কবিতায় এটি স্পষ্ট যে, রাজনৈতিক দলগুলোর অক্ষমতা এবং শাসকগোষ্ঠীর একে অপরকে দায়ী করার খেলায় জনগণের অধিকার অগ্রাহ্য হয়। কবিতার মধ্যে এক ধরনের আত্মসচেতনতা এবং প্রতিবাদ লক্ষ করা যায় যা আমাদের অব্যবস্থা ও নৈরাজ্যের মধ্যে একটি শক্তিশালী চেতনা জাগ্রত করে। কবিতাটি তার গভীর সামাজিক বিশ্লেষণ এবং সূক্ষ্ম ভাষার কারণে একটি অমর সাহিত্যকর্ম হয়ে উঠেছে।

প্রশ্ন: ‘ঘোষনা : ১৯৮৪’ কবিতাটি রচনা করা হয়েছিল কেন?

‘ঘোষনা : ১৯৮৪’ কবিতা রচনা করা হয়েছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা নিয়ে। কবি রুদ্র মোহাম্মাদ শহিদুল্লাহ তখনকার সমাজ ও রাষ্ট্রের দুর্দশা, অস্থিরতা এবং সরকারের দায়িত্বহীনতার বিরুদ্ধে একটি তীব্র প্রতিবাদ হিসেবে এই কবিতাটি লেখেন। কবিতার প্রতিটি শব্দ জনগণের সংগ্রাম এবং সামাজিক ন্যায়ের জন্য আহ্বান জানায়।

প্রশ্ন: এই কবিতার মাধ্যমে কবি কী বার্তা দেন?

কবি তার কবিতায় সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি শাসকগোষ্ঠীর প্রতি জনগণের অধিকার এবং ন্যায়ের প্রতি অবহেলার বিরোধিতা করেছেন। শহিদুল্লাহ আশা করেন যে, সমাজে পরিবর্তন আসবে এবং একদিন সাধারণ মানুষ তার অধিকার পুনরুদ্ধার করবে। কবিতাটি একধরণের আন্দোলন সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে লেখা, যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।

প্রশ্ন: কবিতার ভাষা ও ছন্দ কেমন?

কবিতার ভাষা তীক্ষ্ণ, শক্তিশালী এবং প্রতিবাদী। কবি তার ভাষায় সমাজের দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনা নিয়ে সরাসরি সমালোচনা করেছেন। কবিতার ছন্দ সহজ এবং সোজা, তবে তার মধ্যে রয়েছে এক ধরনের গূঢ় অর্থ যা পাঠককে গভীরভাবে ভাবায়।

‘ঘোষনা : ১৯৮৪’ কবিতার মূল বার্তা হল যে, এই অব্যবস্থা, দুর্নীতি, এবং অবহেলার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো উচিত। কবিতার মাধ্যমে শহিদুল্লাহ যে দৃঢ় প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, সেটি কেবল তখনকার বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী শোষণ, দুর্নীতি, এবং মানবাধিকারের প্রতি অবহেলার বিরুদ্ধে একটি চিরন্তন প্রতিবাদ। শহিদুল্লাহ তাঁর কবিতায় আশাবাদও প্রকাশ করেছেন যে, একদিন আমাদের সমাজে পরিবর্তন আসবে এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে।

আজও এই কবিতা আমাদের সামাজিক আন্দোলন এবং সংগ্রামের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। কবিতার ভাষা, গভীরতা, এবং তার চিত্রায়ন একে আজও অত্যন্ত শক্তিশালী এবং প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। এই কবিতা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমাদের সংগ্রামের পথে অন্তর্ভুক্তি এবং ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। শহিদুল্লাহর শব্দগুলো আজও আমাদের কাজের শক্তি এবং সত্যের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার প্রতি সতর্ক করে। তিনি আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন, আমরা যেন একত্রিত হয়ে সকল দুর্নীতি এবং অব্যবস্থা মোকাবেলা করি, এবং একটি সুন্দর এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করি।

‘ঘোষনা : ১৯৮৪’ কবিতাটি রুদ্র মোহাম্মাদ শহিদুল্লাহর প্রতিটি পাঠকের হৃদয়ে এক অবিস্মরণীয় ছাপ রেখে গেছে। এটি একটি সশক্ত প্রতিবাদ এবং পরিবর্তনের চিত্র। সমাজে যে নৈতিক অবক্ষয় এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল, তা শহিদুল্লাহ তার কবিতার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেছেন এবং তার প্রতিবাদী ভাষায় জনগণের জন্য একটি শক্তিশালী আহ্বান তৈরি করেছেন। কবিতাটির মধ্যে অব্যাহত শোষণ, দুর্নীতি এবং জনস্বার্থের প্রতি উদাসীনতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ একটি অমুল্য শিক্ষার বার্তা দিয়ে যায়। এই কবিতা সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের জন্য এক ঐতিহাসিক গৌরব হয়ে রয়ে গেছে।

এই কবিতাটি আজও বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক আন্দোলনের মধ্যে আলোচিত হয়ে থাকে। শহিদুল্লাহ তার শক্তিশালী ভাষার মাধ্যমে একটি নিখুঁত সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলন তৈরি করেছেন। এই কবিতার শব্দগুলো আজও আমাদের মাঝে অনুপ্রেরণা দেয়, আমরা যেন সচেতন হই এবং সমাজে পরিবর্তন আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করি।

আমাদের নাগরিকবৃন্দ
মলমূত্র ছাড়া আর কোনো ত্যাগেই উৎসাহী নয়

আমাদের কৃষিমন্ত্রীর সাথে
আমাদের কোনো কৃষকের কখনোই দ্যাখা হয় না।
আমাদের শ্রমমন্ত্রী
শারীরিক কোনো শ্রমের সাথেই জড়িত নয়।
আমাদের শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষক নয়।
আমাদের খাদ্যমন্ত্রী নিজের খাদ্যের ব্যাপারেও উদাসিন।

আমাদের সেনামন্ত্রী
সৈন্য পরিচালনার চেয়ে বেশি পছন্দ করেন কবিতা লিখতে।

তিনি বেশি উৎসাহ বোধ করেন রাজ্য পরিচালনায়।
আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কের চিকিৎসা প্রয়োজন।

আমাদের জলমন্ত্রী
একবার নদীপথে ভ্রমন করেছেন তেষট্টি মাইল-
নদী তাকে মুগ্ধ করেছে।
আমাদের অরন্যমন্ত্রীর অরন্যভীতি
জনপ্রিয় আড্ডার বিষয়।

একজন সাংবাদিক আমাদের প্রধান কবি।
একজন আমলা আমাদের শিল্পকলার খবরদারি করছেন।
আমাদের সৃজনশীলতা নিয়ন্ত্রন করছেন বন্ধা একটি লোক।

আমাদের প্রশাসন মৌলিক কাজের ব্যাপারে আস্থাহীন।
আমাদের দক্ষ ব্যবসায়ী শুধুমাত্র ব্যবসায়ীই নয়
তিনি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতাও।

আমাদের শ্রম-বিভাগ ত্রুটিপূর্ন।
অযৌক্তিক আমাদের শিক্ষাপদ্ধতি।
আমাদের রাজনীতি সুবিধাবাদের দখলে।

শান্তিরক্ষা বাহিনীর বিশেষ প্রযত্নে
বেঁচে আছে আমাদের আবহমান অন্ধকার।
আমাদের আইনের গৃহগুলো
আইনহীনতার প্রকাশ্য দৃষ্টান্ত এখন।

আমরা এই নৈরাজ্যের অবসান চাই-

আমরা চাই
কৃষক ফিরে পাক তার শ্রমের সকল উপাদান।
নির্মাতা ফিরে পাক তার নির্মানের উপাদানসমূহ
চিকিৎসক ফিরে পাক তার শুশ্রূষার স্বপ্ন।
শিল্পী ফিরে পাক তার স্বপ্নের স্বাধীনতা।
শিক্ষক ফিরে পাক তার শিক্ষার বাসনা।

আমরা এই দুঃস্বপ্নের অবসান চাই
আমরা এই৷ দুর্ভাবনার অবসান চাই
আমরা এই দুর্ব্যবস্থার অবসান চাই৷

ঘোষনা : ১৯৮৪ কবিতা – রুদ্র মোহাম্মাদ শহিদুল্লাহ

ঘোষনা : ১৯৮৪ – রুদ্র মোহাম্মাদ শহিদুল্লাহ

প্রশ্ন: ‘ঘোষনা : ১৯৮৪’ কবিতাটি রচনা করা হয়েছিল কেন?

‘ঘোষনা : ১৯৮৪’ কবিতা রচনা করা হয়েছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা নিয়ে। কবি রুদ্র মোহাম্মাদ শহিদুল্লাহ তখনকার সমাজ ও রাষ্ট্রের দুর্দশা, অস্থিরতা এবং সরকারের দায়িত্বহীনতার বিরুদ্ধে একটি তীব্র প্রতিবাদ হিসেবে এই কবিতাটি লেখেন। কবিতার প্রতিটি শব্দ জনগণের সংগ্রাম এবং সামাজিক ন্যায়ের জন্য আহ্বান জানায়।

উত্তর:

কবি তার কবিতায় সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি শাসকগোষ্ঠীর প্রতি জনগণের অধিকার এবং ন্যায়ের প্রতি অবহেলার বিরোধিতা করেছেন। শহিদুল্লাহ আশা করেন যে, সমাজে পরিবর্তন আসবে এবং একদিন সাধারণ মানুষ তার অধিকার পুনরুদ্ধার করবে। কবিতাটি একধরণের আন্দোলন সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে লেখা, যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।

প্রশ্ন: এই কবিতার মাধ্যমে কবি কী বার্তা দেন?

শহিদুল্লাহ আশা করেন যে, সমাজে পরিবর্তন আসবে এবং একদিন সাধারণ মানুষ তার অধিকার পুনরুদ্ধার করবে। কবিতাটি একধরণের আন্দোলন সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে লেখা, যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।

উত্তর:

এটি মূলত একটি প্রতিবাদী কবিতা যা সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা তুলে ধরেছে এবং মানবাধিকার ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x