কমলকে চেন তুমি;
সুন্দর সুঠাম দেহ
প্রদীপ্ত চোখ
দুপুর বোদের মতো
তীব্র প্রখর।
একটা বুলেট
কমলের ডান চোখ
ছিঁড়ে নিয়ে গেছে।
অথবা আমার বন্ধু,
বিদগ্ধ সচেতন
হৃৎপিণ্ড যার
কুকুর শেয়াল খেয়ে
আজ পলাতক
আরো বহু,
আমার তোমার
বন্ধু কি প্রিয়জন
ধমনী যাদের ছিল
কৃষ্ণচূড়ার মতো
তাজা সোচ্চার
রক্তের কোলাহলে
স্তব্ধ এখন।
কমলের চোখ
রক্ত হৃৎপিণ্ড
ওরা কেন দিল?
যে প্রশ্ন করি নি তো।
সম্প্রতি মাতা তার
ছোট শিশু বেচেছে,
কেননা চাল প্রয়োজন।
তুলসীর ঘাটে
নগণ্য প্রাণ এক
শাশুড়ি আত্মঘাতী।
কারণ সুবর্ণ গ্রাম
গিয়েছে কি?
তবে একবার ঘুরে
দেখে আস।
চেয়ে দেখ
উঠানে দাওয়ায়
কিংবা পুকুর ঘাটে,
রমণীর নগ্ন শরীর
জ্যোৎস্না প্লাবিত
অন্ধকারে
তার আশ্রয়, নতুবা
গলায় ফাঁসি।
কমলের চোখ
রক্ত হৃৎপিণ্ড
ওরা কেন দিল?
সে প্রশ্ন তোমার নিকট।
আরো কবিতা পড়তে ক্লিক করুন। কমলের চোখ – আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ।
কবিতা “কমলের চোখ” – বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা
এই কবিতাটি যুদ্ধ, সামাজিক অবিচার ও মানবিক বিপর্যয়ের মর্মান্তিক চিত্র প্রকাশ করে, যেখানে কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বীভৎস realities-কে শিল্পিতভাবে উপস্থাপন করেছেন। কবিতাটির ভাষা করুণ ও মর্মস্পর্শী, যা পাঠকের মনে গভীর শোক ও বেদনার সৃষ্টি করে।
কবিতার সারাংশ
কবিতাটি যুদ্ধের ভয়াবহতা ও সামাজিক বিপর্যয়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব ও যন্ত্রণার চিত্র তুলে ধরে। কবি কমল নামক এক যুবকের চোখ হারানো, বন্ধুদের মৃত্যু, মায়ের সন্তান বিক্রি এবং শাশুড়ির আত্মহননের মতো মর্মান্তিক ঘটনাবলীর মাধ্যমে যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশের করুণ দশা চিত্রিত করেছেন।
রূপক বিশ্লেষণ
কবিতে ‘কমলের চোখ’ একটি গভীর রূপক হিসেবে কাজ করে, যা শুধু শারীরিক অঙ্গহানি নয়, বরং সমগ্র জাতির দৃষ্টিশক্তি হরণের象征। ‘বুলেট’ রূপকটি যুদ্ধের সহিংসতা ও ধ্বংসের প্রতীক। ‘কৃষ্ণচূড়ার মতো তাজা ধমনী’ যুবশক্তির প্রাণচাঞ্চল্য ও তার ধ্বংসের指示ক। ‘নগ্ন শরীর জ্যোৎস্না প্লাবিত অন্ধকারে’ নারীর নিরাপত্তাহীনতা ও সামাজিক অবক্ষয়ের রূপক।
কবির উদ্দেশ্য ও সাহিত্যধারা
কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ যুদ্ধের ভয়াবহতা, মানবিক বিপর্যয় ও সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে শিল্পিত প্রতিবাদ জানাতে চেয়েছেন। সাহিত্যধারায় এটি যুদ্ধবিরোধী কবিতা ও সামাজিক সচেতনতামূলক রচনার অন্তর্গত। কবিতাটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের সমাজচিত্র ও মানবিক সঙ্কটকে শক্তিশালীভাবে উপস্থাপন করে।
আবেগ বিশ্লেষণ
এই কবিতায় গভীর বেদনা, ক্ষোভ, হতাশা ও মানবিক মর্মবেদনার সমন্বয় ঘটেছে। কবির আবেগ এতটাই মর্মস্পর্শী যে পাঠক যুদ্ধের ভয়াবহতা ও মানুষের অসহায়ত্ব সরাসরি অনুভব করতে পারেন। বারবার “কমলের চোখ রক্ত হৃৎপিণ্ড ওরা কেন দিল?” প্রশ্নটি কবির乃至 সমগ্র জাতির মানসিক যন্ত্রণা ও প্রশ্নের প্রকাশ।
মেটা ডেসক্রিপশন
বাংলা কবিতা “কমলের চোখ” – আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর যুদ্ধবিরোধী কবিতা বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা। কবিতার রূপক, উদ্দেশ্য এবং আবেগপূর্ণ বিশ্লেষণ যা এসইওর জন্য উপযোগী। কবিতার প্রথম লাইন: “কমলকে চেন তুমি; সুন্দর সুঠাম দেহ প্রদীপ্ত চোখ দুপুর বোদের মতো তীব্র প্রখর”
FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)
কবিতাটি কোন সাহিত্যধারায় পড়ে?
এটি যুদ্ধবিরোধী কবিতা ও সামাজিক সচেতনতামূলক রচনার ধারায় অন্তর্গত একটি শক্তিশালী কবিতা।
কবিতার মূল রূপক কী?
‘কমলের চোখ’ একটি গভীর রূপক যা শারীরিক অঙ্গহানির পাশাপাশি সমগ্র জাতির দৃষ্টিশক্তি হরণের象征। ‘বুলেট’ যুদ্ধের সহিংসতা ও ধ্বংসের প্রতীক।
কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ সম্পর্কে জানতে চাই
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ (১৯৩৪-২০০১) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত কবি ও সরকারি কর্মকর্তা। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতা Voice-এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার কবিতায় মানবিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেম ও সামাজিক দায়বদ্ধতা বিশেষভাবে ফুটে উঠে।
কবিতাটির historical context কী?
কবিতাটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১) ও তার পরবর্তী সময়ের সামাজিক-অর্থনৈতিক সংকটের পটভূমিতে রচিত। যুদ্ধের ভয়াবহতা, মানবিক বিপর্যয় ও সমাজের চরম অবক্ষয় এ কবিতার মূল উপজীব্য।
কবিতাটির কেন্দ্রীয় বার্তা কী?
কবিতাটির কেন্দ্রীয় বার্তা হলো যুদ্ধের ভয়াবহ পরিণতি, মানবিক মূল্যবোধের ধ্বংস ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিবাদ। কবি দেখিয়েছেন কীভাবে যুদ্ধ শুধু মানুষের জীবনই নয়, তাদের মানবিকতাকেও ধ্বংস করে দেয়।
কবিতার মূল বিষয়বস্তু
কবিতাটি যুদ্ধের মাধ্যমে সৃষ্ট মানবিক বিপর্যয়ের বহুমাত্রিক চিত্র তুলে ধরে। শারীরিক অঙ্গহানি (কমলের চোখ), মানসিক Trauma (বন্ধুদের মৃত্যু), অর্থনৈতিক সংকট (মায়ের সন্তান বিক্রি) এবং সামাজিক অবক্ষয় (শাশুড়ির আত্মহত্যা) – এই সবকিছুর মাধ্যমে কবি যুদ্ধপরবর্তী সমাজের সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপের চিত্র অঙ্কন করেছেন।
কবিতার শৈলীগত বৈশিষ্ট্য
কবিতাটিতে আধুনিক বাংলা কবিতার মুক্তছন্দের skillfull ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। করুণরস为主导 এই কবিতায় rhetorical questions-এর মাধ্যমে কবি পাঠককে directly জড়িত করেছেন। বাস্তববাদী বর্ণনা ও রূপকের সমন্বয়ে কবিতাটি একটি শক্তিশালী social document-এ পরিণত হয়েছে।
© Kobitarkhata.com – কবি: আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ