কবিতার খাতা
অলৌকিক-বীথি চট্টোপাধ্যায়
তুমি যদি রবীন্দ্রনাথ হতে
আমি হতাম নতুন বৌঠান
সূর্যাস্ত জোড়াসাঁকোর ছাদে
বৈশাখী ঝড় নতুন বাঁধা গান।
তোমার তখন তেইশ চব্বিশ
তোমার গায়ে পিরাণ দুধসাদা,
সকালবেলা ভৈরবী সুর বাজে
বাঁধানো ঘাটে বজরাটিও বাঁধা।
নদীর ঘাটে নুয়ে পড়েছে গাছ
জ্যোতিদাদাও ব্যস্ত যথারীতি,
সারা দুপুর দুজনে মিলে ভাবি
কবিতা লেখার নানান রীতিনীতি।
সন্ধে নাগাদ লেখাও হয়ে যায়
তবুও কত গল্প বাকি থাকে,
সেবার তুমি বিলেত যাবার পথে
জাহাজ-ডেকে মনে করতে কাকে?
দেখতে দেখতে তোমার নাম হল
উদীয়মান নবীন কবি বলে ;
আমার মুঠি আলগা হয়ে আসে
তোমার জন্যে পাত্রী দেখা চলে।
তুমি নতুন বন্ধু পেয়ে যাও
আমার তো আর কেউ-ই তেমন নেই,
গোপনে রাখা ঘুমের বড়ি নিয়ে
হারিয়ে যাই আলোকবর্ষেই…
সেই ঘটনার বছর দুয়েক বাদে
তুমি আমার পরিত্যক্ত ঘরে,
এসে দেখতে ধুলো জমেছে কাচে
হঠাৎ হাওয়ায় বইয়ের পাতা ওড়ে।
তুমি তখন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে
বসে পড়তে পালঙ্কের কাছে,
মৃদু ডাকতে নতুন বউঠান
কোথায় তুমি? বারান্দার গাছে-
হাত বুলোতে জল ছিটিয়ে দিতে
আমি তখন আলোকবর্ষ দূরে,
একা ঘুরছি আকাশ পথে পথে
শুধুই মেঘ নবীন মেঘের সুরে।
অথচ তুমি জোড়াসাঁকোর ঘরে
বসে ভাবছ তোমার বউঠান,
কোথায় আছে? সত্যি আছে নাকি?
ভেবে তোমার কলম খরশান।
তুমি যদি রবীন্দ্রনাথ হতে
তাহলে এক কিংবদন্তী হত,
বাংলাভাষা বাংলা কবিতায়
আমি হতাম কাদম্বরীরর মতো।