অভিশাপ – কাজী নজরুল ইসলাম।

অভিশাপ – কাজী নজরুল ইসলাম: বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা

এই কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের একটি আবেগপূর্ণ প্রকাশ, যেখানে কবি মৃত্যুর পর তার শূন্যতা এবং প্রেমিকদের কষ্টের অনুভূতি তুলে ধরেছেন। কবিতার ভাষা গভীর এবং অনুভূতিপূর্ণ, যা পাঠককে এক অদ্ভুত আবেগে ডুবিয়ে দেয়।

কবিতার সারাংশ

কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যু পরবর্তী প্রেমিক এবং বন্ধুদের কষ্ট ও অভাবের অনুভূতি নিয়ে লেখা। কবি জানান যে, মৃত্যুর পরও তার স্মৃতির জ্বালা ভোগ করবে তার প্রিয়জনরা।

রূপক বিশ্লেষণ

কবিতায় সূর্য, শিউলি ফুল, শীতের রাত ও নদীর তরী রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই রূপকগুলি কবির মৃত্যুর পর মানুষের স্মৃতি, কষ্ট এবং অবুঝতার অনুভূতিকে চিত্রিত করেছে। সূর্যের আলো যেমন সব কিছু আলোকিত করে, তেমনি কবির স্মৃতি জীবনের অন্ধকারে উজ্জ্বল হতে থাকবে।

কবির উদ্দেশ্য ও সাহিত্যধারা

কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় জীবনের অস্থিরতা, মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থা এবং প্রেমের অন্তর্নিহিত বেদনা ফুটিয়ে তুলেছেন। কবির উদ্দেশ্য ছিল মৃত্যুর পর স্মৃতির অঙ্গনে প্রেমের অশ্রু এবং কষ্টের অনুভূতি সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করা।

আবেগ বিশ্লেষণ

এই কবিতায় কবির আবেগ খুবই সরল এবং প্রাণবন্ত, যা পাঠকদের হৃদয়ে গভীর ছাপ রেখে যায়। কবি তার মৃত্যুর পরও প্রিয়জনদের স্মৃতিতে অমর হতে চান, যা কবিতাটির আবেগপূর্ণ প্রকৃতিকে আরও গভীর করে তোলে।

মেটা ডেসক্রিপশন

কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা “অভিশাপ”-এর বিশ্লেষণ। কবিতার রূপক, উদ্দেশ্য এবং আবেগপূর্ণ বিশ্লেষণ যা SEO জন্য উপযোগী।

FAQ (প্রশ্ন ও উত্তর)

কবিতাটি কোন সাহিত্যধারায় পড়ে?

এটি প্রেম, কষ্ট এবং মৃত্যুর পরবর্তী স্মৃতির আবেগ নিয়ে লেখা একটি কবিতা।

কবিতার মূল রূপক কী?

সূর্য, শিউলি ফুল, শীতের রাত এবং নদীর তরী কবিতার মূল রূপক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

© Kobitarkhata.com – কবি: কাজী নজরুল ইসলাম

যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
ছবি আমার বুকে বেঁধে
পাগল হ’লে কেঁদে কেঁদে
ফিরবে মর” কানন গিরি,
সাগর আকাশ বাতাস চিরি’
যেদিন আমায় খুঁজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

স্বপন ভেঙে নিশুত্ রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে,
কাহার যেন চেনা-ছোঁওয়ায় উঠবে ও-বুকে ছমকে,-
জাগবে হঠাৎ চমকে!
ভাববে বুঝি আমিই এসে
ব’সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে,
ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
শূন্য শয্যা! মিথ্যা স্বপন!
বেদ্নাতে চোখ বুঁজবে-
বুঝবে সেদিন বুজবে।
গাইতে ব’সে কন্ঠ ছিঁড়ে আস্বে যখন কান্না,
ব’লবে সবাই-“ সেই য পথিক তার শেখানো গান না?’’
আস্বে ভেঙে কান্না!
প’ড়বে মনে আমার সোহাগ,
কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ!
প’ড়বে মনে অনেক ফাঁকি
অশ্র”-হারা কঠিন আঁখি
ঘন ঘন মুছবে-
বুঝ্বে সেদিন বুঝবে!

আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ’রবে তোমার অঙ্গন,
তুলতে সে ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ-
কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন!
শিউলি ঢাকা মোর সমাধি
প’ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি’!
বুকের মালা ক’রবে জ্বালা
চোখের জলে সেদিন বালা
মুখের হাসি ঘুচবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
আসবে আবার আশিন-হাওয়া, শিশির-ছেঁচা রাত্রি,
থাকবে সবাই – থাকবে না এই মরণ-পথের যাত্রী!
আসবে শিশির-রাত্রি!
থাকবে পাশে বন্ধু স্বজন,
থাকবে রাতে বাহুর বাঁধন,
বঁধুর বুকের পরশনে
আমার পরশ আনবে মনে-
বিষিয়ে ও-বুক উঠবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

আসবে আবার শীতের রাতি, আসবে না ক আ সে-
তোমার সুখে প’ড়ত বাধা থাকলে যে-জন পার্শ্বে,
আসবে না ক’ আর সে!
প’ড়বে মনে, মোর বাহুতে
মাথা থুয়ে যে-দিন শুতে,
মুখ ফিরিয়ে থাকতে ঘৃণায়!
সেই স্মৃতি তো ঐ বিছানায়
কাঁটা হ’য়ে ফুটবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

আবার গাঙে আসবে জোয়ার, দুলবে তরী রঙ্গে,
সেই তরীতে হয়ত কেহ থাকবে তোমার সঙ্গে-
দুলবে তরী রঙ্গে,
প’ড়বে মনে সে কোন্ রাতে
এক তরীতে ছিলেম সাথে,
এমনি গাঙ ছিল জোয়ার,
নদীর দু’ধার এমনি আঁধার
তেম্নি তরী ছুটবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
তোমার সখার আসবে যেদিন এমনি কারা-বন্ধ,
আমার মতন কেঁদে কেঁদে হয়ত হবে অন্ধ-
সখার কারা-বন্ধ!
বন্ধু তোমার হান্বে হেলা
ভাঙবে তোমার সুখের মেলা;
দীর্ঘ বেলা কাটবে না আর,
বইতে প্রাণের শান- এ ভার
মরণ-সনে বুঝ্বে-
বুঝবে সেদিন বুঝ্বে!

ফুট্বে আবার দোলন চাঁপা চৈতী-রাতের চাঁদনী,
আকাশ-ছাওয়া তারায় তারায় বাজবে আমার কাঁদ্নী-
চৈতী-রাতের চাঁদ্নী।
ঋতুর পরে ফির্বে ঋতু,
সেদিন-হে মোর সোহাগ-ভীতু!
চাইবে কেঁদে নীল নভো গা’য়,
আমার মতন চোখ ভ’রে চায়
যে-তারা তা’য় খুঁজবে-
বুঝ্বে সেদিন বুঝ্বে!

আস্বে ঝড়, নাচবে তুফান, টুটবে সকল বন্ধন,
কাঁপবে কুটীর সেদিন ত্রাসে, জাগবে বুকে ক্রন্দন-
টুটবে যবে বন্ধন!
পড়বে মনে, নেই সে সাথে
বাঁধবে বুকে দুঃখ-রাতে-
আপনি গালে যাচবে চুমা,
চাইবে আদর, মাগ্বে ছোঁওয়া,
আপনি যেচে চুমবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
আমার বুকের যে কাঁটা-ঘা তোমায় ব্যথা হান্ত,
সেই আঘাতই যাচবে আবার হয়ত হ’য়ে শ্রান–
আসবে তখন পান’।
হয়ত তখন আমার কোলে
সোহাগ-লোভে প’ড়বে ঢ’লে,
আপনি সেদিন সেধে কেঁদে
চাপ্বে বুকে বাহু বেঁধে,
চরণ চুমে পূজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!

আরো কবিতা পড়তে ক্লিক করুন এখানেকাজী নজরুল ইসলাম

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x