কবিতার খাতা
সুদূরের পাখি-খন্দকার আশরাফ হোসেন
কী খুঁটছ সারা দিন অননন্তের পাখি?
খুঁটছি যবের দানা, শস্যবীজ, খুঁটছি জীবন।
কী খোঁজো সমস্ত দিন ডালপালা লতার ভেতর?
খুঁজছি নিজেরই বুক, এখানে ফেলে যাওয়া আগের জনম;
হারানো যৌবন খুঁজি, পুঁজিপাটা যা ছিল অক্ষয়
প্রমত্ত ঝড়ের পরে এই বৃক্ষ অশোকের গোপন কোটরে
জমা রেখে চলে যাই, অতীতের শীতল সন্তাপ
কাম প্রেম শঙ্খনীল চিরজীবী পাথরের কাছে
জমা ছিল, তারপর বিস্মৃতির ঝড়ে উড়ে গেছি।
সারা দিন কাকে ডাকে অনন্তের পাখি?
ডাকি ছায়া, নম্র আলো, ডাকি পূর্ণ ফলের বিশ্রাম,
আলোচাল-ধোয়া হাতে একবার আত্মার সঙ্গিনী
কপালের ঘাম মুছেছিল; উঠানের এক প্রান্তে বেড়ে ওঠা
পুঁইডালিমের পাতা একবার গেয়েছিল নির্বাণের গান–
তারপর মিশে গেছি জল পাতা ধূলার শরীরে।
দিনান্তে কোথায় ফের ওড়ে যাও পাখি?
প্রমত্ত ঝড়ের পরে যেইখানে উড়ে যায় মেঘ,
আলো ছায়া যেইখানে গড়ে তোলে অভিন্ন আশ্রয়–
সেই ঘুম বিস্মরণ, সেই বৃক্ষ লতার ভেতর।
কী নিচ্ছ ঠোঁটের ফাঁকে সুদূরের পাখি?
আমি নিচ্ছি দুটো খড়, এই মৃত্যু, আরেক জীবন।